• এসওপি কি: স্টেটমেন্ট অব পারপাস একটি ব্যক্তিগত বক্তব্য যা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে উচ্চ শিক্ষার আবেদনের প্রেক্ষিতে আপনার নিজের অবস্থানকে ব্যাখ্যা করবে।
  • কেন এসওপি: খুব সহজভাবে বলতে গেলে আমরা বলতে পারি এসওপি আমরা লিখি মূলত অ্যাডমিশনের জন্য। আপনার লেখা এসওপির উপর অনেকখানি নির্ভর করবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আপনাকে কেনো এডমিশন দিবে।

যেভাবে লিখবেন এসওপি: আলোচনার সুবিধার্থে এসওপি লেখার পুরো পদ্ধতিকে কয়েকটি ধাপে ভাগ করা যায়:

১) লিখতে বসার আগে:

লিখতে বসার আগেই আপনার কাজ হবে দুইটি প্রশ্নের উত্তর ঠিক করে নিতে হবে-

                  ক) আপনি কি বলতে চান: এই প্রশ্ন দিয়ে মূলত বোঝানো হচ্ছে আপনি এসওপিতে উল্লেখ করবেন এবং কোন বিষয়গুলো আপনি এসওপিতে উল্লেখ করবেন না। আপনি কি জানাতে চান সেই বিষয়গুলো নিয়ে ভাবেন এবং যে পয়েন্টগুলো আপনার মাথায় আসবে সেগুলো কোথাও লিখে রাখবেন। বিষয়টি এমন নয় যে খুব বিশদ আকারে লিখে রাখতে হবে। ছোট ছোট পয়েন্ট আকারে বা কি-ওয়ার্ডগুলো লিখে রাখলেই চলবে। মূল এসওপি লেখার সময় এই কি-পয়েন্টগুলো সামনে রেখে আপনি আগাতে পারবেন। যেমন-

  • কেন উচ্চ শিক্ষা:  আপনার মূল কাজ হবে আপনার যোগ্যতাগুলোকে প্রমাণ করার চেষ্টা করা। সে কারনে প্রথমেইে অ্যাডমিশন কমিটিকে জানাতে হবে কেন আপনি সেই প্রতিষ্ঠান থেকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে চান? অনেক রকম উত্তর হতে পারে। যেমন উচ্চ শিক্ষার বহুল ব্যবহৃত একটি কারন হলো দেশের প্রয়োজন। এই কারনটি অতীতে এতো বেশি মাত্রায় ব্যবহৃত হয়ে গেছে যে আজকাল এটি খুব বেশি শোনা যায়। তাছাড়া আপনি আপনার দেশের জন্য কিছু করতে চান তা সম্পূর্ন আপনার ব্যক্তিগত আকাঙ্খা বা আবেগ। এই আবেগ অ্যাডমিশন কমিটির চাহিদার সাথে কতটুকু সামঞ্জস্যপূর্ণ তা একটু ভেবে দেখার বিষয়। এই প্রশ্নের একটি ভালো উত্তর হতে পারে আপনার গবেষণা করার আকাঙ্খা। গবেষণা এমন একটি বিষয় যা আপনার এবং অ্যাডমিশন কমিটি উভয় এর সাধারণ চাহিদাকে পূরণ করে। অ্যাডমিশন কমিটি অবশ্যই এমন একজনকে অ্যাডমিশন দিতে আগ্রহী হবে যার গবেষণার প্রতি আকাঙ্খা আছে। আবার চাইলে আপনি আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা ও জানাতে পারেন। বিদেশের উচ্চ শিক্ষার ব্যাপারে দেশের বাইরে যাওয়া কিংবা টাকা পয়সা কামানো এই জাতীয় কোন বিষয়গুলো অনেক সময় কাজ করতে পারে। কিন্তু এ জাতীয় বিষয়গুলো কখনোই এসওপিতে উল্লেখ করা যাবে না।
  • বাছাই করার কারন:  এরপরই আপনাকে বলতে হবে কেন আপনি উচ্চ শিক্ষার ব্যাপারে আপনি কেন সেই বিশ্ববিদ্যালয়টি নির্বাচন করেছেন। কারন হিসেবে আপনি বলতে পারেন বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতি, অভিজ্ঞ ফ্যাকাল্টি, গবেষণার সুযোগ সুবিধা- এই বিষয়গুলো।
  • শিক্ষাগত যোগ্যতা ও গবেষণা:  এরপর আসা উচিত আপনার যোগ্যতা। আপনার যোগ্যতা বলতে শিক্ষাগত যোগ্যতা, গবেষণার অভিজ্ঞতা কিংবা পড়ালেখার পাশাপাশি সেমি-কারিকুলার এবং নন-কারিকুলার অভিজ্ঞা ও উল্লেখ করতে পারেন। পূর্ববর্তী কোন গবেষণার অভিজ্ঞতা যেমন- স্নাতক পর্যায়ে প্রজেক্ট বা টার্ম প্রজেক্টে কাজ করে থাকলে এগুলো সবই আপনি চাইলে গবেষণা অভিজ্ঞতা হিসেবে দেখাতে পারেন। যোগ্যতার ক্ষেত্রে গবেষণা পরিচালনার দক্ষতা এমন কোনো কথা নেই। আর যদি কোন গবেষণার অভিজ্ঞতা না থাকে সেক্ষত্রে আপনি কোন নির্দিষ্ট কোর্সে কি কি শিখেছেন সেই বিষয়গুলো আনতে পারেন।
  • সেমি-কারিকুলার বা নন-কারিকুলার যোগ্যতা: এরপর আসি সেমি-কারিকুলার বা নন-কারিকুলার যোগ্যতার বিষয়ে। আমাদের সবারই কম বেশি একস্ট্রা কারিকুলার কার্যক্রম থাকে। এসওপির ক্ষেত্রে সব একস্ট্রা কারিকুলার কার্যক্রম উল্লেখ করার কোনো প্রয়োজন নেই। যে কার্যক্রমগুলো আপনার প্রোফাইলের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ শুধু সেগুলোই উল্লেখ করবেন। যেমন আপনি যদি ভালো বিতার্কিক হন তাহলে সমূহ সম্ভাবনা থাকে আপনার একজন ভালো প্রেজেন্টার বা উপস্থাপক হওয়ার। সেক্ষেত্রে একস্ট্রা কারিকুলার কার্যক্রমে আপনি বির্তাকিক কথাটি উল্লেখ করতে পারেন। হতে পারে আপনি কোনো ম্যাগাজিনে লিখতেন। যদি একস্ট্রা কারিকুলার কার্যক্রমের মধ্যে সে কথাটি উল্লেখ করেন তবে তা আপনার লেখার দক্ষতার প্রতিফলন করে।

                 খ) অ্যাডমিশন কমিটি কি জানতে চায়:   সোজা কথায় অ্যাডমিশন কমিটি জানতে চায় আপনি যে বিষয়ে আবেদন করেছেন আপনি সেটি কতখানি পূরণ করতে পারবেন। তাদের এই চাহিদা পূরণের জন্য আপনার সমস্ত প্রয়োজনীয় তথ্য ঠিকমতো তাদের কাছে সরবরাহ করতে হবে।  উদাহরন হিসেবে অপনাকে যদি একজন বিক্রেতা এবং অ্যাডমিশন কমিটিকে একজন ক্রেতা হিসেবে ভাবা হয় তাহলে আপনি আপনার মেধাকে বিক্রির জন্য বাজারে ছাড়বেন আর অ্যাডমিশন কমিটি তা কিনে নিবেন। একটু লক্ষ্য করলেই আমরা দেখতে পাই ক্রেতা দোকানে গিয়ে দোকানের সবচেয়ে চকচকে এবং দামী পণ্যটি কিনে আনেন না। সেই পণ্যটি কিনে আনেন যা তার সবচেয়ে বেশি কাজে লাগে। সে কারনে আপনার যোগ্যতা এবং দক্ষতা যদি অ্যাডমিশন কমিটির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় তবে আপনার জন্য বিনিয়োগ করতে তারা দ্বিধাবোধ হবেন না। অ্যাডমিশন কমিটি মূলত দুইটি বিষয়ের উপর বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। প্রথমত, আবেদনকারীর শিক্ষাগত যোগ্যতা (কোন ধরণের প্রতিষ্ঠান থেকে পাশ করেছেন, আপনার রেজাল্টস কেমন, আপনার জিআরই স্কোর) তাদের প্রতিষ্ঠানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা। দ্বিতীয়ত, তাদের কাজে যে প্রজেক্ট বা প্রকল্প আছে তার জন্য আবেদনকারী উপযুক্ত কিনা। প্রজেক্টের ধরণের সাথে আপনি তাল-মিলাতে পারবেন কিনা। যাচাই করবে আপনার মেধা এবং অভিজ্ঞতা। অভিজ্ঞতা থাকলে ভালো। না থাকলে তেমন কোনো ক্ষতি নেই। সেক্ষেত্রে আপনার এসওপিতে কিছু বিষয়কে এমনভাবে উপস্থাপন করতে হবে যাতে সেই বিষয়গুলো আপনার অভিজ্ঞতার অভাবকে কমিয়ে দিতে পারে।

২) লেখা শুরু করা:  মনে রাখবেন লেখা শুরু করার জন্য প্রথম প্যারাটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এই অংশ অ্যাডমিশন কমিটির কাছে উপস্থাপন করবে আপনার বাকি অংশের ধারাবাহিকতা কেমন হবে। লেখার মাঝে একটি ধরণ অনুসরণ করা উচিত। যেমন-

  • ক্ল্যাসিক ধরণ: বেশি ভুমিকা না করে সরাসরি এসওপি লেখার মূল অংশে চলে যাওয়া।  ক্ল্যাসকিাল ধরণ অনেক বেশি নিরাপদ।
  • কোটেশন ধরণ: শুরুতেই কোনো মনীষির বানী দিয়ে আপনি  এসওপি শুরু করতে পারেন। তারপর সেই বানীর রেশ ধরে আপনার এসওপি আগাতে থাকবে।
  • অনুগল্প ধরণ: কোন উদাহরন বা ঘটনার সাপেক্ষে আপনি আপনার আকাঙ্খাটি প্রকাশ করার মাধ্যমে চাইলে এসওপি লেখা যায়। তবে এটি তুলনামূলকভাবে বেশ কঠিন কাজ
  • রূপকথা ধরণ: অবাস্তব কিছুতে আপনি বাস্তবে রূপ দেওয়ার আকাংখা প্রকাশ করছেন। তবে রূপকথা ধরন অনুসরণ না করাই ভালো। কেননা এসওপি যতো প্রফেশনাল হবে আপনার প্রোফাইল ততোই ভারী হবে।
  • সহানুভূতি প্রত্যাশা: এই পদ্ধতি কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য এবং প্রশংসনীয় নয়। অনেকে নিজের সীমাবদ্ধতাকে উপস্থাপনের মাধ্যমে অ্যাডমিশন কমিটির কাছ থেকে সহানুভূতি পেতে চান। সীমাবদ্ধতার গল্প বলে সহানুভূতি আদায়ের আশা না করে কিভাবে সীমাবদ্ধতাকে জয় করেছেন সেই গল্পটি বলাই উত্তম।

৩) তথ্য বিন্যাস:

এসওপির প্রতিটি গল্পই প্যারা আকারে আসতে হবে। মনে রাখবেন প্রতিটি প্যারা এক একটি মুল বিষয় বহন করবে। যেমন- রেজাল্ট, রিসার্চ ওয়ার্ক এগুলো আলাদা আলাদা প্যারা বিষয়বস্তু হতে পারে। প্রতিটি প্যারার শেষে একটি টপিক বাক্য থাকবে যা আপনার পুরো প্যারাকে এক কথায় উপস্থাপন করতে পারবে। প্যারা থেকে প্যারার অভ্যান্তরীন সম্পর্ক স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন। যদি কখনো মেলবন্ধন ঘটানো সম্ভব না হয় সেক্ষেত্রে আপনার গল্পের ক্রামনুসার মেনে চলার চেষ্টা করতে হবে। যেমন- রিসার্চ ওয়ার্ক, চাকুরীতে যোগদান ইত্যাদি ধারাবাহিকতা থাকতে হবে।

৪) শব্দ চয়ন ও বাক্য গঠন:

একই শব্দের পু:রাবৃত্তি এসওপির মান নষ্ট করে। তাই বহুল ব্যবহৃত শব্দগুলোর ভালো প্রতিস্থাপন করতে হবে। শব্দ চয়নের ক্ষেত্রে খুব সতর্ক হতে হবে। শব্দ চয়ন এবং বাক্য গঠনের জন্য কিছু টিপস:

  • এসওপি রেখার আগে আপনাকে জেনে নিতে হবে আপনার কাঙ্খিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েব সাইটে কোনো গাইড লাইন দেওয়া আছে কিনা। যদি থেকে থাকে তবে তা অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে। আর যদিও কোন ফরমেট না থেকে থাকে তাহলে উপরে আলোচনা অনুসারে আপনি আপনার এসওপি লিখতে পারেন।
  • ফন্টের ক্ষেত্রে টাইমস নিউ রোমান ১২ পয়েন্ট ১.৫ স্পেসে ব্যবহার করতে পারেন। এক ইঞ্চি মার্জিন সহ লেটার সাইজ কাগজ ব্যবহার করতে পারেন। এসওপি সাধারণত ৭০০ থেকে ১০০০ শব্দের মধ্যে হলে ভালো হয়। আর পৃষ্ঠা হিসেবে সর্বোচ্চ এক পৃষ্ঠা বা দুই পৃষ্ঠা ব্যবহার করতে পারেন। হেডারে আপনার নাম ও জন্ম তারিখ থাকবে। ফুটারে থাকবে পৃষ্ঠার নাম্বার। অ্যালাইনমেন্টের ক্ষেত্রে নন-জাস্টিফাইড লেফট অ্যালাইনমেন্ট ব্যবহার করাই ভালো। চাইলে জাস্টি-ফাইড ব্যবহার করা যাবে। তবে মাঝে মাঝে জাস্টিফাইড ব্যবহারের কারনে শব্দগুলোর মধ্যবর্তী দূরত্ব অনেক বেড়ে যেতে পারে। তাই নন-জাস্টিফাইড ব্যবহার করাই নিরাপদ। রং সাদা এবং কালোর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। ফন্টের সাইহেজর জন্য সর্বোচ্চ দুই ধরণের ফন্ট সাইজ ব্যবহার করা উত্তম। বোল্ড ও আইটালিক অপশন যত পারা যায় কম ব্যবহার করাই শ্রেয়।

৫) এসওপিতে যে দিকগুলো এড়িয়ে চলতে হবে:

  • কোন অংশের পুনরাবৃত্তি বা রিপিটেশন: সিভি’তে যা দিয়েছেন খুব বেশি প্রাসঙ্গিক না হলে উল্লেখ না করাই ভালো।
  • আবেগ: কোন আবেগ তাড়িত শব্দ যেমন- অতিরিক্ত মেধাবী, একস্ট্রা-অর্ডিনারী রিসার্চ এসওপিতে পরিহার করা ভালো।
  • ব্যক্তিগত গল্প: এসওপিতে গল্প বলা ভালো তবে বেশি মাত্রার ব্যক্তিগত গল্প না করা ভালো। আপনার গল্প হবে আপনার প্রফেশন সম্পর্কিত।
  • রক্ষনাত্নক বচন: উদাহরন হিসেবে বলা যেতে পারে স্নাতক পর্যায়ে কোন একটি সেমিস্টারে আপনার জি.পি.ত্র ভালো ছিলো না। এ ধরণের গল্পকে রক্ষনাত্নক বচন হিসেবে ও দেখা হয়। চাইলে বিষয়টি আপনি অন্যভাবে উপস্থাপন করতে পারেন। আপনি বলতে পারেন খারাপ জি.পি.ত্র ভালো করার জন্য আপনি কি কি করেছেন। কম জি.পি.ত্র আপনাকে কিভাবে মনোযোগি হতে সাহায্য করেছে এবং পরর্তীতে কিভাবে আপনি জি.পি.ত্র কিভাবে ভালো করলেন। নেতিবাচক দিকটি আপনাকে অনুরূপভাবে ইতিবাচক করে উপস্থাপন করতে হবে।
  • আক্রমনাত্নক বচন: আপনি অবশ্যই করবেন বা পারবেন- এ জাতীয় কথা উল্লেখ না করে সর্বা ত্নক চেষ্টা করবেন এ ধাঁচের কথা উল্লেখ না করা ভালো। যেমন- বাংলাদেশের পরিবেশ ভালো না, লেখাপড়ার মান ভালো না-এই বিষয়গুলো কখনই এসওপিতে আসবে না।

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.