International English Language Testing System কে সংক্ষেপে IELTS বলা হয়। মূলত IELTS হচ্ছে ইংরেজি ভাষায় একজন শিক্ষার্থীর পারদর্শিতা নিরীক্ষণের একটি ব্যবস্থা। অর্থাৎ ইংরেজি যাদের মাতৃভাষা নয় এমন শিক্ষার্থদের জন্য ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা যাচাই করা হয়ে থাকে এই পদ্ধতিতে।

একজন বাঙ্গালী হিসেবে আমাদের মাতৃভাষা হচ্ছে বাংলা। আর দ্বিতীয় ভাষা হচ্ছে ইংরেজি। এক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষাভাষি নয় এমন মানুষদের জন্য ইংরেজি ভাষাগত জ্ঞান যাচাইয়ের মানদণ্ড হচ্ছে IELTS টেস্ট।

ছোট একটি উদাহরণ দিয়ে দেখি আসুন, আমরা সাধারণত Apple শব্দটিকে ‘আপেল’ উচ্চারন করে থাকি। তবে আমেরিকানরা এই শব্দটিকেই উচ্চারণ করে ‘অ্যাপল’। অর্থাৎ তারা ইংরেজি A অক্ষরকে ‘এ’ উচ্চারণ না করে বরং ‘অ্যা’ উচ্চারণ করে।

ভাষাগত উচ্চারণের এই পার্থক্য এবং পারদর্শিতা যাচাইয়ে তাই মাধ্যম হচ্ছে IELTS।

এই পরীক্ষাটি ব্রিটিশ কাউন্সিল, আইডিপি- আয়েল্টস অস্ট্রেলিয়া ও কেমব্রিজ ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যাসেসমেন্ট কর্তৃক যৌথভাবে পরিচালিত হয়ে থাকে। প্রধানত যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চশিক্ষার জন্য IELTS অনেক বেশি প্রয়োজনীয় ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে উত্তর আমেরিকা অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও এই পরীক্ষার স্কোর গ্রহণ করছে এবং ইউরোপের বেশির ভাগ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো IELTS গ্রহণ করে থাকে।

এখন মনে প্রশ্ন জাগতে পারে অ-ইংলিশ ভাষী বলেই কি আমাদের আয়েল্টস টেস্টে অংশ নিতে হয়? উত্তর হচ্ছে- না। আর এমনটা ভেবে মন খারাপ করার কিছুই নেই যে, আপনি ইংরেজি ভাষী কোন রাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করেননি বিধায় আপনাকে আয়েল্টস টেস্ট দিতে হচ্ছে! এমনটা ভাবলে নির্ঘত বোকামি হবে। কারন, ইউকে’তে মাত্র ৪ বছর বয়স থেকে শিশুরা আয়েল্টস টেস্টে অংশ নেয়। এই টেস্টে অংশ নেয় এমনও অনেক শিশু আছে যারা ঠিক মতো কোন শব্দ এখন পর্যন্ত উচ্চারণও করতে পারে না।

আসলে, আয়েল্টস টেস্টের গ্রহণযোগ্যতার পরিসর ব্যাপক। তাই আপনি ইংরেজি ভাষাভাষি কিংবা অ-ইংলিশ ভাষী হোন না কেন কিংবা আপনার বয়স যাই হোক ইংরেজি ভাষী কোন দেশে শিক্ষা অর্জনে বা স্থানান্তর হতে আয়েল্টস টেস্টের স্কোর যেন কী-ফ্যাক্টর।

আয়েল্টস এর প্রকারভেদ

আয়েল্টস (IELTS) পরীক্ষা মূলত দুই ধরনের। যার একটি হচ্ছে একাডেমিক (IELTS Academic) এবং অপরটি হচ্ছে জেনারেল ট্রেনিং (IELTS General Training)।

স্নাতক, স্নাতকোত্তর অথবা পিএইচডি পর্যায়ে পড়াশোনার জন্য পরীক্ষা দিতে হয় একাডেমিক মডেলে। যদি কোনো শিক্ষার্থী কারিগরি বিষয় বা প্রশিক্ষণে ভর্তি হতে চান, সেক্ষেত্রে জেনারেল ট্রেনিং মডেলে পরীক্ষা দিতে হবে। এ ছাড়া যারা ইমিগ্রেশনের জন্য যেতে চান, তাদেরকেও জেনারেল ট্রেনিং মডেলে পরীক্ষা দিতে হয়।

আয়েল্টস পরীক্ষার প্রকারভেদ এবং আপনার জন্য কোনটি প্রয়োজন সেসম্পর্কে জানতে পড়ুন IELTS এর প্রকারভেদ: আপনার জন্য কোনটি দরকারি শিরোনামের আর্টিকেলটি। এছাড়াও আয়েল্টস একাডেমিক এবং জেনারেল ট্রেনিংয়ের মধ্যে হেড টু হেড তুলনা দেখতে পড়ুন এই আর্টিকেলটি ।

তবে আপনি যে ধরনের আয়েল্টস পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে চান না কেন আপনাকে অবশ্যই লিসেনিং (Listening), রিডিং (Reading), রাইটিং (Writing) ও স্পিকিং (Speaking) এই চারটি অংশের উপর পরীক্ষা দিতে হবে।

অর্থাৎ একাডেমিক (IELTS Academic) কিংবা জেনারেল ট্রেনিং (IELTS GENERAL TRAINING) উভয় ধরনের আয়েল্টস পরীক্ষা পদ্ধতিতে লিসেনিং, রাইটিং, রিডিং এবং স্পিকিং বিষয়ের উপর দক্ষতা যাচাই করা হবে।

ইংরেজি যাদের মাতৃভাষা নয় এমন শিক্ষার্থদের জন্য ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা যাচাই করা হয়ে থাকে এই পদ্ধতিতে।

IELTS পরীক্ষা দিতে কোন শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন হয় না। যেকোন মানুষ চাইলেই ইংরেজি ভাষায় নিজের দক্ষতা যাচাই করতে চাইলে IELTS পরীক্ষা দিতে পারেন।

আয়েল্টস পরীক্ষা পদ্ধতি

যারা আমেরিকান কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা অর্জন করতে আগ্রহী তাদের জন্য ভাষাগত দক্ষতা যাচাইয়ে IELTS পরীক্ষা অত্যাবশকীয়।

লিসেনিং পার্ট

আয়েল্টস পরীক্ষায় লিসেনিং অংশে একটি অডিও ক্লিপ বাজানো হবে। যেখানে প্লে করা কথোপকথন শুনে বোঝার ক্ষমতা যাচাই করা হয়ে থাকে। সিডি থেকে কথোপকথন শুনে এ অংশে প্রশ্নের উত্তর করতে হয় পরীক্ষার্থীদের।

এই অংশে পরীক্ষার জন্য ৪০টি প্রশ্ন থাকে। ৩০ মিনিটে চারটি অংশে এ পরীক্ষা নেওয়া হয়। একটি বিষয় কেবল একবারই বাজিয়ে শোনানো হয়।

রাইটিং পার্ট

ইংরেজিতে লেখার পারদর্শিতা যাচাই করা হয় এ অংশে। যেখানে নির্ধারিত এক ঘন্টা সময়ে দুটি প্রশ্নের উত্তর লিখতে হবে। দ্বিতীয় প্রশ্নটিতে প্রথম প্রশ্নের চেয়ে বেশি নম্বর থাকে।

রিডিং পার্ট

আয়েল্টস পরীক্ষার এ অংশে পরীক্ষার্থীদের এক ঘন্টা সময় দেয়া হয়। যেখানে ৪০টি প্রশ্ন তিনটি বিভাগে সজ্জিত থাকে। একজন পরীক্ষার্থীকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়।

এখানে বিভিন্ন জার্নাল, বই, সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন থেকে কিছু অংশ তুলে দেওয়া হয়ে থাকে। সেখান থেকেই বাক্য পূরণ, সংক্ষিপ্ত উত্তর, সঠিক উত্তর খুঁজে বের করা ইত্যাদি থাকে।

স্পিকিং পার্ট

এখানে পরীক্ষার্থীদের মোটামুটি ১১ থেকে ১৪ মিনিটের পরীক্ষা দিতে হয়। প্রথম অংশে পরীক্ষার্থীকে কিছু সাধারণ প্রশ্ন করা হয়। যেমন: পরিবার, পড়াশোনা, কাজ, শখ ইত্যাদি।

দ্বিতীয় অংশে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে দুই মিনিট কথা বলতে হয়। এর আগে প্রস্তুতির জন্য এক মিনিটের একটি বিরতি দেওয়া হয়।

তৃতীয় অংশে থাকে কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে পরীক্ষকের সঙ্গে চার- পাঁচ মিনিটের কথোপকথন।

আয়েল্টস (IELTS) পরীক্ষার কাঠামো এবং প্রশ্নের ধরণ সম্পর্কে জানতে পড়ুন এই আর্টিকেলটি ।

আয়েল্টস (IELTS)   স্কোরিং :

১ থেকে ৯- এর স্কেলে আয়েল্টস পরীক্ষার স্কোরিং করা হয়। এ পরীক্ষায় পৃথক চারটি অংশে আলাদাভাবে প্রাপ্ত স্কোর যোগ করে গড় করে চূড়ান্ত স্কোর দেওয়া হয়। এ পরীক্ষায় পাস বা ফেল হওয়ার কোনো বিষয় নেই।

আয়েল্টস পরীক্ষার স্কোরের মেয়াদ থাকে দুই বছর। এছাড়াও আয়েল্টস স্কোর স্কেলিং বা ব্যান্ড স্কোর সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন এখানে

আয়েল্টস (IELTS) টেস্টের প্রয়োজনীয়তা:

যেসকল শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চান তার জন্য TOFEL এর বিকল্প হচ্ছে IELTS। পূর্বে ইংরেজি ভাষাগত দক্ষতা যাচাইয়ের এই পদ্ধতি ব্যবহৃত হতো মূলত যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য।

তবে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার মতো দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এই পরীক্ষার স্কোর গ্রহণ করছে। এমনকি ইউরোপের বেশির ভাগ দেশের বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চশিক্ষায় আগ্রহীদের কাছে ভর্তির পূর্ব শর্ত হিসেবে IELTS পরীক্ষার স্কোর চেয়ে থাকে। তাই উচ্চশিক্ষা অর্জনে IELTS পরীক্ষা একজন শিক্ষার্থীর জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।