বিষয় : ইংরেজী স্পিকিংয়ে দক্ষতা অর্জন ও করণীয়

English Speaking

রাইটিং ক্লাস শেষ করেই শুরু করলাম স্পিকিং। এটারো ক্লাস নিতেন নোমান স্যার। বার বার বলতেন আমাকে ভাই বলে ডাকো, আমি তার পরেও ডাকতাম স্যার। আমি ভাবতাম স্যার আবার ভাই হয় কেমনে। সংগ্রাম শুরু করতে না করতেই সেকেন্ড ইয়ারের শেষ দিকে ঢাকা টু জাহাঙ্গীরনগর দৌড়াদৌড়ি করতে করতে ক্লান্তি একটু ধরেছে। তেড়ে উঠতে না পেরে অর্ধেক শেষ না করতে করতেই ২য় বর্ষ ফাইনাল। বিশাল বিরতি হয়ে গেলো।

পরীক্ষা শেষে ২-৩ মাস পরে আবার গেলাম সাইফুরর্সে কোর্সটা আবার ফি ছাড়া আবার করা যায় কি না সেই আবদার নিয়ে!! কি বড় মন তাদের!! একবার আবদার করতে না করতেই ক্লাস করার সুযোগ দিয়ে দিলেন। আবারো সেই প্রিয় নোমান স্যার।

তাঁর কথা ছিলো বলে যাও। ৮-১০ জনের মতো ছাত্র। রুয়েট থেকে পাশ করা সনি এরিকসনের এক ইঞ্জিনিয়ার রাফাত ভাই চার মাসের স্পিকিং পার্টনার। সাথে যোগ হলো ইডেন কলেজের পিজিক্সের শুভ্রা নামের এক বড় আফু। স্পিকিং ক্লাসে প্রতিদিন বোর্ডের সামনে দাঁড়িয়ে বলতে হতো প্রটি ক্লাসে ১০-১৫মিনিট। সারা দিনে যা করেছি, করবো এসব নিয়ে। আমার নিজের সাথে নিজে কথা বলার মূল অভ্যাস টা মূলত নোমান স্যারের কারনে হয়েছে্ । প্রতিদিন ক্লাসে আসলে জিজ্ঞাস করতেন আজ কতক্ষন নিজে নিজে ইংরেজীতে কথা বলেছো !!

নিজের সাথে কথা বলার অভ্যাস সেই যে হলো আজো আমার গেলো না। রাত ১২ টা ১ টায় যখন নিজে নিজে স্পিকিং করতাম, আম্মা প্রথম দিকে উকি মেরে শুনতেন আর বলতেন তুই কি পাগল হয়ে গেলি নাকি!! তারপর আম্মার সাথে শুরু করতাম। তারপর আম্মার বোধোদয় হলো যে মাথা ঠিক আছে।

টেনেসিতে মাষ্টার্স করার সময় যখন একা একা ল্যাবে কাজ করতাম প্রায়ই নিজের সাথে নিজে কথা বলতাম, আর প্রথম দিকে ল্যাবমেটরা অফিস রুম থেকে প্রফেসরের সাথে কথা বলছি ভেবে রুম থেকে বের হয়ে আসতেন আর আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করতেন। আস্তে আস্তে মুখে কথা ফুটতে শুরু করলো, আর যোগ দিলাম সাইফুর্সের স্পিকিং ক্লাব এ।

সাইফুর্সের স্পিকিং ক্লাবটি ছিল অসাধারণ। ক্লাসটি পরিচালনা করতেন মাজহার স্যার। ক্লাসে ছাত্র ছিলো ৫০-৬০ জনের মতো । প্রতিদিন ক্লাসের একজন নায়ক থাকতো যে স্বেচ্ছায় এসে কথা বলা শুরু করবে টানা ১৫ মিনিট। বাংলা কলেজের সাফায়াত নামের লম্বা লিকলিকে ছেলেটির কথা আজো আমার মনে পড়ে, বন্দুকের গুলির মতো কথা কথা বেরুতো। এই ক্লাসের সবাই নিয়মিত ও অনেক পুরাতন। আর রেনডমলি মাজহার স্যার যে কাউকে ২ মিনিট নিজ জায়গায় দাড়িয়ে বলার জন্য অনুরোধ করতেন। অনুরোধ মানে বলতেই হবে, যা পারেন কিছু না কিছু বলতেই হবে। আর সেই ভয়ে আমার সেই চিরচেনা শেষ বেঞ্চে গিয়ে বসতাম। আর মাজহার স্যার সেই শেষ বেঞ্চ দিয়ে শুরু করতেন। দু’মিনিট করে বলতে বলতে আসতে আসতে সাহস হলো, ২-৩ মাস গেলো, তারপর আমিও সেই ক্লাসের ৫০-৬০ জনের সামনে গিয়ে ১৫ মিনিটের টানা কথা বলা শুরু করলাম, আস্তে আস্তে ভয় কাটিয়ে গেলো।

সব সময় নিজের সাথে নিজে কথা বলতাম, এই একটা অভ্যাস আজো তাড়াতে পারিনি। যা কিছু ভাবতাম , দেখতাম, চিন্তা করতাম, আর ইংরেজীতে মুখে বলতাম। আস্তে আস্তে সাইফুর্সের স্পিকিং ক্লাবের শেষ বেঞ্চের ভীতু ছেলেটি আমি ক্লাসের সঞ্চালক হয়ে গেলাম । টানা ৬-৭ মাসের অনুশীলনে আমার তখন ইংরেজীতে বোমী হতো(!!!!)। তখন মনে হতো সাইফুরর্স কেন বলতো English=পানি।

আজ পার্ডু বিশ্ববিদ্যালয়ের উইদারিল ল্যাবোরেটোরির ২০০, ৩৬০ আর ৩২০ নাম্বার রুমে সোম-মঙ্গল-বুধবার সকাল সাড়ে আটটায় পিএইচডির ছাত্র হয়ে ২৬০ জন আমেরিকান অনার্সের ২য় বর্ষের ছাত্রের সামনে জৈব রসায়ন লেকচার দেবার পিছনে যে নোমার স্যার, মাজহার স্যার, স্পিকিং ক্লাব, সর্বোপরী সাইফুর্সের কত অবদান তাঁরা কেউই জানেন না।

আর্টিকেলটির পরবর্তী পর্ব পড়তে এখানে এবং ৩য় পর্ব পড়তে ক্লিক করুন

– Rejaul Hoq Nayem, Teaching Assistant (TA) at Purdue University


নিচের লিংক থেকে রেজাউল হক নাঈমের লেখা অন্যান্য আর্টিকেলগুলো পড়তে পারেন-

 উচ্চশিক্ষা, স্বপ্ন ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা, বাধা, উত্তরণ ও করণীয় (পর্ব- ১)
 উচ্চশিক্ষা, স্বপ্ন ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা, বাধা, উত্তরণ ও করণীয় (পর্ব- ২)
 উচ্চশিক্ষা, স্বপ্ন ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা, বাধা, উত্তরণ ও করণীয় (পর্ব- ৩)
 উচ্চশিক্ষা, স্বপ্ন ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা, বাধা, উত্তরণ ও করণীয় (পর্ব- ৪)
 উচ্চশিক্ষা, স্বপ্ন ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা, বাধা, উত্তরণ ও করণীয় (পর্ব- ৫)