আয়েল্টস (IELTS) পরীক্ষাই শুধুমাত্র নয়, যেকোন পরীক্ষায় ভাল একটি স্কোর করতে হলে সে পরীক্ষার প্রশ্নের ধরণ এবং প্রশ্ন কাঠামো সম্পর্কে ধারনা থাকতে হয়। যা অনেক সময় পরীক্ষার জন্য সাজেসন্স হিসেবেও কাজ করে থাকে। এই আর্টিকেলে তাই আমরা ‘IELTS পরীক্ষার কাঠামো এবং প্রশ্নের ধরণ’ নিয়ে আলোচনা করব।

ভাল একটি স্কোর করার জন্য মূলমন্ত্র বলা যেতে পারে প্রশ্ন এবং পরীক্ষা পদ্ধতি সম্পর্কে খুবই ভাল এবং স্বচ্ছ একটি ধারনা থাকা। কারন পরীক্ষা সম্পর্কে পূর্ব ধারনা থাকলে নিজেকে প্রস্তুতির জন্য এগিয়ে রাখা যায়। এছাড়াও পরীক্ষায় কি আসবে? কেমন করে প্রস্তুতি নিব? কি পড়ব? এমন প্রশ্নগুলো মনে ঘুরপাক খায় না। ফলে পরীক্ষার জন্য পরিকল্পনা অনুযায়ী এবং কনফিডেন্সের সাথে প্রস্তুতি সম্পন্ন করা যায়।

ইংরেজি ভাষাগত দক্ষতা যাচাইয়ের পরীক্ষা আয়েল্টস টেস্ট সম্পর্কে ধারনা নিতে পারেন ‘আয়েল্টস কি এবং কেন?’ এই আর্টিকেলটি থেকে।

আয়েল্টস টেস্ট পরীক্ষার্থী হিসেবে আপনার চারটি বিষয়ের দক্ষতাকে পরিমাপ করে থাকে মাত্র ৩ ঘন্টা সময়ের মধ্যে। এই চারটি বিষয় হলো- লিসেনিং, রাইটিং, রিডিং এবং স্পিকিং।

আয়েল্টস পরীক্ষা সাধারনত দুটি ফরমেটে হয়ে থাকে। এগুলো হলো: আয়েল্টস একাডেমিক এবং জেনারেল ট্রেনিং। তবে উভয় ধরনের টেস্টে ফরমেটে পরীক্ষা দাতাকেই অনুরূপ লিসেনিং এবং স্পিকিং টেস্টে অংশ নিতে হবে। তবে দুটি টেস্ট ফরমেটের মধ্যে ভিন্নতা পাওয়া যাবে রিডিং এবং রাইটিং অংশের পরীক্ষায়।

এই দুই ধরনের আয়েল্টস টেস্ট ফরমেটের মধ্যে লিসেনিং, রাইটিং, রিডিং এবং স্পিকিংয়ের উপর দক্ষতা যাচাইয়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ২ ঘন্টা ৪৫ মিনিট।

আয়েল্টস টেস্টের প্রকারভেদ এবং আপনার জন্য কোনটি দরকারি তা জানতে ক্লিক করুন এখানে। এছাড়াও একাডেমিক এবং জেনারেল ট্রেনিং আয়েল্টস টেস্টের মধ্যে পার্থক্য জানতে পড়তে পারেন ‘IELTS Academic vs. General Training -হেড টু হেড তুলনা’ এই আর্টিকেলটি।

এর মধ্যে আবার লিসেনিং, রিডিং এবং রাইটিং সেকশনের পরীক্ষা একই দিনে অর্থাৎ পরীক্ষার জন্য যে দিনটি রেজিস্ট্রেশন করা হবে সেদিন। কিন্তু এই পরীক্ষার দিনে কোন সেকশনের মাঝেই বিরতি পাওয়া যাবে না। তার মানে হচ্ছে আপনাকে টানা ৩টি সেকশনের উপর পরীক্ষা দিয়ে যেতে হবে। তবে কোন সেকশনটি আগে আর কোনটি পরে তা পরিবর্তন হতে পারে।

তবে স্পিকিং সেকশনের পরীক্ষা আপনার টেস্টে ডে অর্থাৎ রেজিস্ট্রেশনকৃত দিনেই সবশেষে একটি বিরতি দিয়ে নিতে পারে। কিংবা আপনার পরীক্ষার দিনের ৭ দিন আগে বা পরে স্পিকিং টেস্ট অনুষ্ঠিত হতে পারে। এটা সাধারনত আপনার টেস্ট সেন্টারের উপর নির্ভর করবে।

আয়েল্টস পরীক্ষার কাঠামো যেমন হবে

আয়েল্টস পরীক্ষা চারটি অংশের উপর হয়ে থাকে। এগুলো হলো- লিসেনিং, রাইটিং, রিডিং এবং স্পিকিং।

লিসেনিং পার্ট
  • সময়কাল: ৩০ মিনিট
  • সেকশন: ৪
  • ৪০টি প্রশ্নের উত্তর করতে হবে

পরীক্ষার প্রথমেই ৩০ মিনিটে রেকর্ড করা ৪টি অডিও ক্লিপ বাজিয়ে শোনানো হবে। এখানে একজন ব্যক্তির কণ্ঠ শোনা যাবে, যিনি অব্যশই ইংরেজি ভাষার নেটিভ স্পিকার। এসময় তার কণ্ঠে কোন টেক্সট, নাটাংশ বা উক্তি এবং কথোপকথনের অংশ থাকতে পারে। এছাড়াও উত্তরগুলো আলাদা উত্তরপত্রে লিখতে আরও ১০ মিনিট সময় দেয়া হবে।

আপনাকে যা করতে হবে তা হলো- এই রেকর্ডকৃত ক্লিপগুলো শুনে তা থেকে উত্তর খুঁজে বের করে উত্তরপত্রে লিখে ফেলতে হবে।

তবে লক্ষ্যনীয় যে, বাজানো সেই ক্লিপটি অবশ্যই একবার শুনানো হবে। কোন অংশ মিস হয়ে গেলে তা পুনরায় আর বাজিয়ে শোনান হয় না। তাই অবশ্যই সর্বোচ্চ মনোযোগ ধরে রাখতে হয়।

এই লিসেনিং পার্ট আবার চারটি সেকশনে বিভক্ত।

সেকশন ১

দৈনন্দিন কোন কাজের মধ্যে ব্যবহৃত হয় এমন কোন পরিস্থিতির আদলে ইংরেজি ভাষাভাষি দুই জন মানুষের মধ্যকার কথোপকথন থাকবে।

সেকশন ২

পূর্বের সেকশনের মতো এই সেকশনেও দৈনন্দিন সামাজিক জীবনের কোন পরিস্থিতিকে নিয়ে ইংরেজি ভাষাভাষি দুই জন মানুষের মধ্যকার কোন নাটকের অংশ বা উক্তিগুলো শোনান হবে। উদাহরণস্বরূপ, বসবাস করা যায় এমন কোন জায়গার সুবিধা বা অসুবিধা তুলে ধরা হয়েছে এমন।

সেকশন ৩

এই সেকশনে দুই বা ততোধিক মানুষের মধ্যে কথোপকথন তুলে ধরা হবে। যেখানে তারা কোন ট্রেনিং এ আছে বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদানের সময় কথোপকথনের অংশও হতে পারে। দৈনন্দিন কোন কাজের মধ্যে ব্যবহৃত হয় এমন কোন পরিস্থিতির আদলে ইংরেজি ভাষাভাষি দুই জন মানুষের মধ্যকার কথোপকথন থাকবে। উদাহরণস্বরূপ, কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকের সাথে কয়েকজন শিক্ষার্থী তাদের অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে কথা কলছে।

সেকশন ৪

এই সেকশনটি কারও কারও কাছে একটু কঠিন মনে হতে পারে। কারন এখানে আপনাকে সাবজেক্ট রিলেটেড একটি অংশ শোনান হবে। তার মানে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বা যেকোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিষয় ভিত্তিক একটি লেকচারের অংশ।

আয়েল্টস টেস্টের লিসেনিং পার্টের পূর্ণ ব্যবচ্ছেদ বা উদাহরণ দেখে নিতে পাড়েন এই আর্টিকেল থেকে।

একাডেমিক রিডিং পার্ট
  • সময়কাল: ৬০ মিনিট বা ১ ঘন্টা
  • ৩টি প্যাসেজ থাকবে
  • ৪০টি প্রশ্নের উত্তর করতে হবে

একাডেমিক রিডিং পার্টে একজন পরীক্ষার্থীকে লম্বা ৩টি প্যাসেজ পড়তে হবে। সেখান থেকে প্রতিটি প্যাসেজের অন্তর্গত কিছু প্রশ্ন থাকবে। যা প্যাসেজ থেকে পড়ে পড়ে উত্তর করতে হবে। তবে এই প্যাসেজগুলো বেশ বড় এবং বর্ণনামূলক এবং বিশ্লেষনধর্মী হবে। আবার কখনও কখনও তা অপ্রাসঙ্গিকও মনে হতে পারে। এই টেক্সটগুলো বই, সংবাদপত্র কিংবা ম্যাগাজিন থেকে নেয়া হতে পারে।

আয়েল্টস রিডিং পার্টের মাধ্যমে একজন পরীক্ষার্থীর ইংরেজি রিডিং পড়ার বিস্তর অভিজ্ঞতা যাচাই করা হয়।

জেনারেল ট্রেনিং রিডিং পার্ট
  • সময়কাল: ৬০ মিনিট বা ১ ঘন্টা
  • ৩টি প্যাসেজ থাকবে
  • ৪০টি প্রশ্নের উত্তর করতে হবে

একাডেমিক এবং জেনারেল ট্রেনিং এর মধ্যে রিডিং পার্টেও প্রশ্ন কাঠামো’তে তেমন কোন পার্থক্য নেই। এখানেও একজন পরীক্ষার্থীকে লম্বা ৩টি প্যাসেজ পড়তে হবে। সেখান থেকে প্রতিটি প্যাসেজের অন্তর্গত কিছু প্রশ্ন থাকবে। যা প্যাসেজ থেকে পড়ে পড়ে উত্তর করতে হবে। তবে এই প্যাসেজগুলো বেশ বড় এবং বর্ণনামূলক এবং বিশ্লেষনধর্মী হবে। আবার কখনও কখনও তা অপ্রাসঙ্গিকও মনে হতে পারে। এই টেক্সটগুলো বই, সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন, নোটিশ, বিজ্ঞাপন কিংবা কোম্পানী হ্যান্ডবুক থেকে নেয়া হতে পারে।

আয়েল্টস রিডিং পার্টের মাধ্যমে একজন পরীক্ষার্থীর ইংরেজি রিডিং পড়ার বিস্তর অভিজ্ঞতা যাচাই করা হয়।

একাডেমিক রাইটিং পার্ট
  • সময়কাল: ৬০ মিনিট বা ১ ঘন্টা
  • টাস্ক: ২টি

একাডেমিক রাইটিং পার্টে পরীক্ষার্থীকে দুটি প্যাসেজ লিখতে হবে। যা ২টি আলাদা টাস্ক আকারে দেয়া থাকবে। এর মধ্যে প্রথম টাস্কে ২০ মিনিট এবং দ্বিতীয় টাস্কে ৪০ মিনিট সময় দেয়া হবে।

প্রথম টাস্কে ১৫০ শব্দে একটি প্যাসেজ লিখতে হবে। টাস্কে পরীক্ষার্থীকে কোন বড় প্যাসেজকে সারসংক্ষেপ করতে হতে পারে কিংবা কোন টেবিল, লেখচিত্র, নকশা, উদাহরণ, ছবিতে দেখানো তথ্যের বর্ণনা করতে হবে।

দ্বিতীয় টাস্কে ৪০ মিনিট সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট টপিকের উপরে একটি কম্প্রিহেনশন লিখতে হবে। যা কমপক্ষে ২৫০ শব্দের হতে হবে।

জেনারেল ট্রেনিং রাইটিং পার্ট
  • সময়কাল: ৬০ মিনিট বা ১ ঘন্টা
  • টাস্ক: ২টি

একাডেমিক এবং জেনারেল ট্রেনিং এর মধ্যে রাইটিং পার্টেও প্রশ্ন কাঠামো’তে তেমন কোন পার্থক্য নেই। পার্থক্য পাওয়া যাবে প্রথম টাস্কে। তবে এই পার্টের সকল টাস্ক দৈনন্দিন ঘটনা থেকে নেয়া হবে।

এই রাইটিং পার্টের প্রথম টাস্কে একটি চিঠি লিখতে বলা হবে। যেখানে কোন একটি পরিস্থিতি দেয়া হবে। পরীক্ষার্থীকে সেখানে প্রশ্নের উল্লেখিত টপিক অনুযায়ী তথ্য জানতে চাওয়ার জন্য অনুরোধ কিংবা তথ্য জানিয়ে চিঠিটি লিখতে হবে। আর এই টস্কটি করতে যথারীতি সময় থাকবে ২০ মিনিট।
দ্বিতীয় টাস্কে ৪০ মিনিট সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট টপিকের উপরে একটি প্রবন্ধ লিখতে হবে। যেখানে প্রশ্নে দেয়া টপিকের উপর নিজস্ব দৃষ্টিকোন, পক্ষে-বিপক্ষে মতামত কিংবা সমস্যা লিখতে বলা হবে। যা কমপক্ষে ২৫০ শব্দের হতে হবে।

স্পিকিং পার্ট
  • সময়কাল: ১১- ১৪ মিনিট
  • টাস্ক: ৩টি

আয়েল্টস টেস্টের এই অংশটি হয়তো টেস্টের দিন কিংবা টেস্টের সপ্তাহ খানেক আগে কিংবা পরে আলাদাভাবে নেয়া হতে পারে। স্পিকিং পার্টে আপনার সাথে সরাসরি পরীক্ষকের সাথে একটি কনভার্সেশন হবে। যা সম্পূর্ণ রেকর্ড করা হবে।

এই পার্টের প্রতিটি টাস্কের জন্য প্রায় ৪-৫ মিনিট করে সময় থাকবে। যার প্রথম টাস্কে পরীক্ষার্থীর পরিচিত এবং ব্যক্তিগত বিষয় সম্পর্কে জানতে চেয়ে কথোপকথন হবে। পরবর্তী টাস্কে নির্দিষ্ট টপিকের উপর বলতে হবে।

আয়েল্টস টেস্ট স্কোরিং

আয়েল্টস টেস্টের প্রতিটি সেকশন অর্থাৎ লিসেনিং, রিডিং, রাইটিং এবং স্পিকিং অংশে প্রাপ্ত স্কোর থেকে ১-৯ স্কেলে প্রকাশ করে ব্যান্ড স্কোর প্রদান করা হয়।

আয়েল্টস টেস্টের স্কোরিং সম্পর্কে জানতে পড়ুন ‘IELTS স্কোর স্কেল বা ব্যান্ড স্কোর সমাচার’ শিরোনামের আর্টিকেলটি। এছাড়াও আয়েল্টস টেস্টের জন্য প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে ‘আয়েল্টস টেস্ট প্রস্তুতি এবং দরকারি বই সমাচার’