জিআরই বা টোফেল পরীক্ষার হলে পাশের জনের কীবোর্ডের ঠুশঠাশ শব্দে যে অসুবিধা হয় তা আপনাকে কোন সিমুলেটেড পরীক্ষার হলে মডেল টেস্ট দিয়ে অভ্যস্ত হতে হবে। টাইপিং এর শব্দের চেয় বিরক্তিকর বিষয় হলো পাশের জনের “হাম রিডিং”। হাম (hum) রিডিং মানে বিড়বিড় করে পড়া। প্যাসেজের প্রতি মনোযোগ বাড়ানোর জন্য এটা কার্যকর একটা কায়দা, কিন্তু একইসাথে যে গুণগুণ শব্দ হয় তা পাশের টেস্টটেকারের জন্য বিরাট সমস্যার কারণ হতে পারে। টোফেলে যেহেতু স্পিকিং অংশ আছে, একজনের উচ্চস্বরে স্পিকিং আরেকজনের রিডিং কমপ্রিহেনশন ভয়াবহভাবে বিষিয়ে তুলতে পারে।

হাম নয়েসের সমাধান কি?

হামিং-এর জবাবে আপনিও হামিং শুরু করতে পারেন, কিন্তু ভেবে দেখুন যে চেইন রিঅ্যাকশনের মতো সবাই যদি হামিং শুরু করে তখন কি হবে? পুরো পরীক্ষাকেন্দ্র জুড়ে মাছের বাজার, মানে প্র্যাকটিক্যালি ডিজ্যাস্টার। কাজেই নিতান্ত বাধ্য না হলে বিড়বিড় করে পড়া থেকে বিরত থাকা উচিত। নিঃশব্দ বিড়বিড় করে পড়া (ঠোট নড়বে কিন্তু আওয়াজ বের হবে না) একটা খুবই ভালো অভ্যাস, এবং এটা অনেকেই করে থাকে। এই কায়দায় কিছুটা হলেও পাশের জনের শব্দের উৎপাত থেকে কিছুটা রেহাই পেতে পারেন।

মনিটর টাচ করে পড়ার মনযোগ বাড়ানো

এটা আমি নিজে পরীক্ষার হলে প্রয়োগ করেছি এবং বেশ ভালো সুফল পেয়েছি। প্যাসেজের মধ্যে যা পড়ছেন তা যদি আঙুল দিয়ে ছুঁয়ে ছুঁয়ে পড়েন তাহলে নিজেকে আলোচ্য বিষয়ের মধ্যে এক ধাপ গভীরে প্রবেশ করিয়ে পড়ার মতো অনুভূতি হবে। বিশেষত প্যাসেজে উপরের দিকে বলা কোন টপিক (ব্যক্তির নাম বা বিষয়) যদি পরে আবার আসে তাহলে দুই অঞ্চলের মধ্যে চোখের মনি ঘুরিয়ে পড়তে গেলে তালগোল পাকিয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রথম জায়গায় বাঁ হাতের একটা আঙুল ফিক্স করে রাখুন আর অন্য হাতের আঙুল দিয়ে পরবর্তী স্টেটমেন্টগুলোর উপর লাইন ধরে বুলিয়ে যান, দেখবেন একটু হলেও বেশি নিয়ন্ত্রণ পাওয়া যাচ্ছে। বিষয়টা ছবি দিয়ে বোঝানোর জন্য গুগলে সুবিধাজনক কোন ছবি পেলাম না তাই নিজেরই একটা ছবি তুলে দিলাম। আশা করি বুঝতে পেরেছেন বিষয়টা; একটু প্র্যাকটিস করে দেখুন, হয়ত মাছের বাজারে মনোযোগ ধরে রাখতে সাহায্য করতে পারে।

10-18_touch_new

পাশের পরীক্ষার্থী যদি বাড়াবাড়ি সমস্যা করে…

যেকোন কিছু বাড়াবাড়ি লেভেলে গেলে হাত তুলে প্রক্টোরদের ডেকে অভিযোগ করতে পারেন। তারা ব্যবস্থা নেবেন, মানে পাশেরজনকে সতর্ক করে দিতে পারেন। জেনে রাখুন, আপনার পরীক্ষা সাবমিট করার পরেও ইটিএস অধিকার রাখে যে কোন অভিযোগের প্রেক্ষিতে নীরিক্ষণ করে পরীক্ষা বাতিল করে দেবার। গ্রেকের একজন স্টুডেন্টকে বছর দুয়েক আগে একবার এই দুর্ভাগ্য বরণ করতে হয়েছিল (তার কেইসটা একদম অন্যরকম ছিল অবশ্য)। সুতরাং আপনার যদি জোরে পড়ার অভ্যাস থাকে এবং পাশের পরীক্ষার্থীর সুবিধা-অসুবিধা পাত্তা না দিয়ে পরীক্ষার হলেও স্বার্থপরের মতো গুঞ্জণ করে পড়ার পরিকল্পনা থাকে, তা অ্যাপ্লাই করতে যাবেন না। নিজে নিঃশব্দে পড়ুন, অন্যকে মন দিয়ে পড়তে দিন।

ইয়ার প্লাগ?

একটা প্রশ্ন এসেছে গ্রেক গ্রুপে, যে আমি চাইলে ইয়ার প্লাগ ব্যবহার করতে পারবো কি না। উত্তরঃ না, পারবেন না। আপনাকে সিমুলেটেড পরিবেশে মডেল টেস্ট দিয়ে অভ্যস্ত হতে হবে। এটা আপনি নিজের বাসায়ও করতে পারেন, টিভির আওয়াজ একটু বাড়িয়ে দিয়ে মডেল টেস্ট দেওয়া। যদিও এটা বেশি এক্সট্রিম হয়ে যায়, তারপরেও জাস্ট একটা প্রস্তাব, বিবেচনা করা না করা আপনার উপর।

প্রসঙ্গ ADHD, ADA এবং জিআরইতে সম্ভাব্য বাড়তি সুবিধা পাওয়া

সাধারণ মানুষের মধ্যে মনোযোগ হারিয়ে ফেলার প্রবণতা সবার কম বেশি একই রকম থাকে। কিন্তু একটি ক্লিনিক্যাল অবস্থা আছে, নাম এ.ডি.এইচ.ডি, বা Attention-Deficit/Hyperactivity Disorder (ADHD) যেখানে মানুষের লোকজনের মধ্যে পরীক্ষা দিলে পারফরম্যান্স অনেক খারাপ হয় এবং তার স্বাভাবিক মেধার প্রতিফলন ঘটে না। ইউএসএতে কোন স্টুডেন্ট যদি তার ডাক্তারের কাছ থেকে ADHD রিপোর্ট নিয়ে আসে, তাহলে তাকে আলাদা রুমে বেশি সময় দিয়ে পরীক্ষা দেওয়ানো হয়। আমার প্রথম বর্ষের দুজন স্টুডেন্ট ADHD আক্রান্ত, এবং তারা ১ ঘন্টার পরীক্ষা ৯০ মিনিটে দেয় এবং আলাদা রুমে আলাদা প্রক্টোরের অধীনে পরীক্ষা দিয়ে থাকে। আমার জানা মতে বাংলাদেশে কোন প্রতিষ্ঠানে ADHD আক্রান্তদের এই বাড়তি সুযোগ দেওয়া হয়না।

ইটিএস যেহেতু আমেরিকান প্রতিষ্ঠান, তাদেরও সুনির্দিষ্ট নীতিমালা আছে প্রমাণিত ADHD আক্রান্ত ব্যক্তিদের কিছু বাড়তি সুবিধা দেবার। কিন্তু মনে রাখবেন, আপনি চাইলেই নিজেকে ADHD আক্রান্ত ঘোষণা করতে পারেন না; এজন্য সাইকয়াট্রিস্ট আপনাকে ডায়াগনোজ করবেন, আপনার শৈশব ও বয়ঃসন্ধি সময়ের অ্যাকাডেমিক ও বিহেভিওরাল হিস্ট্রি গবেষণা করবেন, এবং ডাক্তার দরকার হলে রক্তের লেড, থাইরয়েড হরমোন (আয়োডিনের অবস্থা) এবং ব্রেইনের ইলেকট্রিক অ্যাকটিভিটি, সিটি স্ক্যান ও এমআরআই পর্যন্ত করে তারপর সিদ্ধান্ত দিতে পারেন। সবশেষে নির্ভেজাল ডকুমেন্ট নিয়ে ইটিএস বরাবর আবেদন করে প্রমাণিত ADHD’র প্রেক্ষিতে বাড়তি সুবিধা পেতে পারেন। আমেরিকান ডিজঅ্যাবলিটি অ্যাক্ট বা ADA অনুসারে যেকোন ডিজ্যাবল (দৃষ্টি বা শ্রুতি প্রতিবন্ধী, এপিলেকটিক, স্কিৎসোফ্রেনিক, প্যারালাইজড ইত্যাদি যে কোন প্রতিবন্ধকতাই থাক না কেন) ব্যক্তিকে তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিশেষ সুবিধা দিতে বাধ্য। প্রসঙ্গত, আমার একজন স্টুডেন্টের কব্জির পরের অংশটা প্রস্থেটিক (কৃত্রিম হাত-সদৃশ অংশ জোড়া লাগানো); মানে সেই হাতে সে কিছু ধরতে বা নাড়াতে পারেনা। আমি তার জন্য ল্যাবে পাশে দাঁড়িয়ে তার কাজে সাহায্য করি এবং চেষ্টা করি তার মতো এক হাত দিয়ে ইনজেকশন ফিল করা, মর্টার পেসল ব্যবহার করা ইত্যাদি করতে। সে যদি জিআরই পরীক্ষায় কখনো বসে,তাহলে তার জন্য ইটিএস বিশেষ ব্যবস্থা করবে নিশ্চিত থাকা যায়।

ফিরে আসি মূল প্রসঙ্গে। যদি না আপনি ছোটবেলা থেকে ADHD জনিত সুবিধা নিয়ে আসেন তাহলে হুট করে এটা প্রমাণ করা এবং ইটিএস থেকে সুবিধা নেওয়া শুধু সময় সাপেক্ষই না, বরং নিষ্ফল প্রচেষ্ট হতে পারে। ADHD নিয়ে যথেষ্ট বিতর্কিত মতবাদ (controversial hypotheses) প্রচলিত আছে (বিস্তারিত পড়ুন Encyclopedia of Social Problems বইয়ের 63 নম্বর পৃষ্ঠায়)  কাজেই, প্ল্যান A-তেই লেগে থাকুন, মানে নিজেকে প্রতিকুল পরিবেশের উপযোগী করে তুলুন।

যদি আপনার সত্যিই ADHD থেকে থাকে

তাহলে ইটিএস এর গাইডলাইন পড়ুন এখানে

প্রমাণিত ADHD থাকলে পরীক্ষার হলে বাড়তি কি সেবা পাওয়া যেতে পারে?

দুঃখিত, এই প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই। গ্রেকের ইতিহাসে আমি কখনো কাউকে পরীক্ষাকেন্দ্রে ADHD জনিত বাড়তি সুবিধা নিতে দেখিনি। আমেরিকার মধ্যে যদি কখনো কোন ADHD বৈশিষ্টধারী জিআরই পরীক্ষার্থীর সাথে সাক্ষাতের সুযোগ হয়, তাহলে আর্টিকেলটি আপডেট করে দেবো। তবে সেই সাথে আমেরিকান মেডিকেল সিস্টেমে আরেক কড়া আইন HIPAA এর কথা জানিয়ে রাখি, যার মূল কথা হলো, কারো কোন অসুখের কথা যদি আপনি জানেন, তাহলে সেই ব্যক্তি ও তার অসুখের পরিচয় তার অনুমতি ছাড়া কাউকে জানানো গুরুতর অপরাধ।

শুভ কামনা রইলো সবার জন্য।