আর্টিকেলটির ১ম খণ্ড পড়তে ক্লিক করুন

CV/Résumé:

লিংকডইনে প্রোফাইল খুলে সাজিয়ে রাখা, এবং একটা প্রফেশনাল সিভি ও রেজুমে তৈরি করে রাখা সবারই দায়িত্ব। তবে কাজটি সময় নিয়ে করুন। সিভি আর রেজুমেও তৈরি করুন এবং আপডেট করতে থাকুন।

সিভিতে যা থাকবে –

১. আপনার নাম, ফোন নম্বর, ই-মেইল, ঠিকানা (যেখানে চিঠি যাবে)।

২. অবজেক্টিভ – আপনি কী চান? সংক্ষিপ্ত, স্পেসিফিক, স্পষ্টভাবে বলুন। পারলে এক লাইনে বলুন; ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে, আমতা আমতা করে, লজ্জাবনত মুখে, পাঁচ লাইনে নয়। বলে দিন ফুল ফান্ডিং চান না হাফ ফান্ডিং, কোন পজিশন, কোন সাবজেক্ট; বলে দিন ফুল টাইম জব করবেন না হাফ টাইম।

৩. আপনার শিক্ষা – লেটেস্ট ডিগ্রীটা হাইলাইট করতে হবে। বর্তমান স্ট্যাটাস কী তা দিন।

৪. আপনার স্কিল – ক’টা ভাষা, ক’টা সফটওয়্যার, হেন-তেন জানেন ইত্যাদি। বুলেট পয়েন্ট করে দেবেন।

৫. আপনার অভিজ্ঞতা – কয়েক ভাগে ভাগ করে ফেলুন। পড়াশোনা করতে গিয়ে কী অভিজ্ঞতা পেয়েছেন, পড়াশোনার বাইরে কী পেয়েছেন, কাজ করতে গিয়ে কী পেয়েছেন।

৬. পাবলিকেশন – পেপার, জার্নাল ইত্যাদি। বছর অনুযায়ী ভাগ করা থাকবে। ভালোগুলোকে আগে রাখবেন। (এটা শুধু হায়ার স্টাডির জন্য, চাকরির জন্য নয়। চাকরির ক্ষেত্রে যদি রেলেভেন্ট হয় তাহলেই শুধু ৬ নম্বর পয়েন্ট রাখবেন।)

৭. পুরষ্কার-প্রশস্তি – জীবনের নানান সময়ে, নানান ক্ষেত্রে আপনি কী কী কম্পিটিশনে গিয়েছেন, কী কী মেডেল, পদক, সার্টিফিকেট বাগিয়ে এনেছেন ইত্যাদি। এক্ষেত্রেও একাডেমিক আর অন্যান্য ভাগে ভাগ করে ফেলুন।

৮. অন্যান্য – আপনি আর কিছু কি জানেন? লেখালেখি করেন? ভলান্টিয়ার কাজ করেন? এগুলো দিন।

৯. রেফারেন্স – আপনাকে কি কেউ চেনে যাকে ফোন বা মেইল করলে আপনার সম্পর্কে প্রোফেশনালি কিছু বলতে পারবে (ভার্সিটির প্রোফেসর, প্রাক্তন বস ইত্যাদি) ? এমন দু’জনের নাম, প্রতিষ্ঠান, ডেজিগনেশন আর ই-মেইল অ্যাড্রেস দিন। অবশ্যই তাঁদের অনুমতি নিয়ে।

রেজুমে –

ঠিক সিভির পয়েন্টগুলোই আসবে, কিন্তু সব এক পেজে আনতে হবে। কারণ যখন রেজুমে চাওয়া হয়, ধরেই নেবেন দ্বিতীয় পেজে গেলে চাকরিদাতা অথবা প্রোফেসর পড়বে না, কারণ এক পৃষ্ঠা স্ক্রল করে যেতে বা পেজ ওলটাতে তাঁদের খুব কষ্ট হয়! কাজেই সিভির ইনফরমেশনগুলোকে গুছিয়ে, ফন্ট ছোট করে, শুধু অতি গুরুত্বপূর্ণ, যা না দিলেই নয় এমন কথাগুলো সাজিয়ে এক পেজে সব নিয়ে আসুন।

এখানে জায়গা বাঁচাতে এক লাইনে কমা দিয়ে দিয়ে সবগুলো পয়েন্ট লিখে দিন। এলোমেলো যেন না হয়।
রেজুমের ক্ষেত্রে রেফারেন্স আর বুলেট পয়েন্ট বাদ যাচ্ছে।

কিছু মনে রাখার বিষয়ঃ

১. আপনার গ্রামের বাড়ির ঠিকানা কোথায়, রক্তের গ্রুপ কী, বৈবাহিক অবস্থা “ঝুলন্ত” কিনা – এসব হাবিজাবি কারো দেখার সময় নেই। পারলে পার্সোনাল ইনফরমেশন অংশটাই বাদ দিয়ে দিন। শুধু নিজের যা যা জানানো দরকার তা-ই জানান (সিভির এক নম্বর পয়েন্ট)। আলাদা এক পৃষ্ঠা ধরে নিজের ইনফরমেশন দেয়াটা পুরনো নিয়ম, এখন বাতিল হয়ে গেছে।

২. অবজেক্টিভটা সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ক্রমাগত আপডেট করুন, সপ্তাহে একবার। স্পষ্টভাবে এক-দুই লাইনে এ অংশে কথা বলতে শিখুন। হায়ার স্টাডিজের অবজেক্টিভ আর চাকরির অবজেক্টিভ আলাদা, কাজেই সাবধান – একটার কথা আরেকটাতে বলবেন না, অথবা একটা দিয়েই দুটো চালিয়ে দিতে যাবেন না – বলবেন না যে আমি চাকরি করতে চাই, আবার ফান্ডিং পেলে বিদেশ ভেগে যেতে চাই!

৩. বিএসসি পাশ করবার আগেই নিজের লিংকডইন প্রোফাইল থাকাটা জরুরী। অনেক সময় ক্যাজুয়ালি চাকরির খোঁজ আসবে, বন্ধুবান্ধব প্রোফাইল চাইবে, তখন এটার লিংক দিতে পারবেন। প্রোফাইল খুলে সব ইনফরমেশন দিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে ফেলুন। অন্যদেরটা দেখে, সময় নিয়ে সাজান, তাড়াহুড়োর কিছু নেই। আপনার সাথে সংশ্লিষ্ট সবার সাথে যুক্ত হোন; তাঁরা কীভাবে, কোথায়, কী কাজ করেন দেখুন। ও হ্যাঁ, এখানে প্রোফাইল পিকচার একটু ভালো দেখে দেবেন। একটু ক্যাজুয়াল হলে হোক – কিন্তু গার্লফ্রেন্ডের সাথে যুগল ছবি, প্লেটে করে ভাত খাওয়ার ছবি, পহেলা বৈশাখ উদযাপনের ছবি, পোষা প্রাণীর ছবি, “লাভ” চিহ্ন, নেইলপলিশ লাগানো নখের ছবি, বন্ধুদের সাথে তোলা সেলফি – এসব দেবেন না (বিশ্বাস করুন, অনেকেই এমন ছবি দেয়, যেটা বড় ভুল)।

৪. কোন বাগাড়ম্বর নয়, আবার কোন হাত কচলানোও নয়। যা দরকার, ঠিক তা-ই বলবেন; কমও না, বেশীও না। প্রোফেশনালিটি মেইনটেইন করে সব ইনফরমেশন দিন। কোন ন্যাকামো বা অহংকার যেন সিভি বা রেজুমেতে না থাকে। মিথ্যে বা অতিরঞ্জিত তথ্য দেবেন না। সারাজীবন খুব মেধাবী ছিলেন – এ জাতীয় তথ্য দেবেন না।

৫. বানান ভুল যেন একটাও না থাকে। এটা ফেসবুকের স্ট্যাটাস নয় যে লাইক পড়বে! হয়তো অনেক বানান ভুল, কিন্তু আপনি জানেনই না। কাজেই সবগুলো শব্দ, একটা একটা করে চেক করুন। কাউকে দেখাতে গেলে সময় না-ও দিতে পারে। এ কাজটা নিজেই করুন।

৬. সিভিতে সেকশনের নামের নিচে পয়েন্ট পয়েন্ট করে লিখবেন, কিন্তু রেজুমেতে জায়গা বাঁচাতে সেকশনের নাম পাশে লিখতে পারেন। বাঁ পাশে সেকশনের নাম, ডানপাশে কমা কমা করে পয়েন্টগুলো।

৭. প্রত্যেক মেইল, প্রত্যেক অ্যাপ্লাই কিন্তু ইন্ডিভিজুয়াল কেস। কাজেই জব ডেসক্রিপশন অথবা ডিগ্রি ডেসক্রিপশন ভালমতো পড়ে তারপর একটু মডিফাই করার দরকার হলে সেভাবে করে নিন। টেমপ্লেট ঠিক থাকবে, কিন্তু মেইল করার আগে বা সিভি/রেজুমে ড্রপ করার আগে অবশ্যই দেখে নিন অপ্রয়োজনীয় অথবা উল্টোপাল্টা কিছু দিলেন কিনা।

৮. রেফারেন্স হিসেবে একটা টেমপ্লেট ইন্টারনেট থেকে নামিয়ে বা বড়ভাইদের থেকে নিয়ে দেখে দেখে কাজ করতে পারেন। তবে ফরম্যাটটা নিজে নিজে তৈরি করাই ভালো। এতে আত্মবিশ্বাস আসবে, আরামও পাবেন।

৯. প্রথমবার সিভি আর রেজুমেগুলো তৈরি হয়ে গেলে, সেভ করে দু’সপ্তাহ ফেলে রাখুন। তারপর “আপাত-ফিটফাট” ডকুমেন্টগুলো নিয়ে আবার বসুন। গোটাপাঁচেক ভুল পাবেন, কমপক্ষে। তক্ষুণি ঠিক করে ফেলুন। এভাবে মাসে অন্তত দু’বার “হঠাৎ রিভিউ” সেশন রাখুন। মিনিট পাঁচেকের এই সেশনগুলো অনেক উপকার করবে আপনাকে। সেশনগুলোর মধ্যে গ্যাপ না দিলে ভুল বেরুবে না কিন্তু।

সিভি বা রেজুমে হল আপনার বিজ্ঞাপন। এটাকে যতটা সম্ভব আকর্ষণীয় করুন। মনে রাখতে হবে, সিভি আর রেজুমের ক্ষেত্রে “আকর্ষণীয়” মানে হল “প্রফেশনাল”।

আশা করি লেখাটি কারো উপকারে আসবে। ধন্যবাদ ও শুভকামনা।

 

– ইসহাক খান, প্রাক্তন গ্রেক ফ্যাকাল্টি


নিচের লিংক থেকে ইসহাক খানের লেখা অন্যান্য আর্টিকেলগুলো পড়তে পারেন-

 স্টুডেন্টদের সাধারণ দুর্বলতা – পার্ট ১ – Vocabulary
 স্টুডেন্টদের সাধারণ দুর্বলতা – পার্ট ২ – Analytical Writing
 স্টুডেন্টদের সাধারণ দুর্বলতা – পার্ট ৩ – Reading Comprehension
 স্টুডেন্টদের সাধারণ দুর্বলতা – পার্ট ৪ – Speaking (TOEFL)
 Originality of writing: এসওপি, এলওআর, ইমেইলিং প্রফেসরস, সিভি ও রেজুমে (১ম খণ্ড)
 Originality of writing: এসওপি, এলওআর, ইমেইলিং প্রফেসরস, সিভি ও রেজুমে (২য় খণ্ড)
 Customized Routine: নিয়মিত ফলো করা (১ম খণ্ড)
 Customized Routine: নিয়মিত ফলো করা (২য় খণ্ড)
 আমার জন্য সঠিক রাস্তা কোনটা: বিদেশ, জিআরই, স্বদেশ, বিসিএস, চাকরি?
 রেকমেন্ডেশন বিড়ম্বনা!
 Research: রিসার্চ বা গবেষণা
 ইউএস অ্যাম্বেসির ভেতরের পরিবেশ এবং স্টেপগুলো
 ইংরেজিতে দক্ষতা এবং কিছু স্ট্র্যাটিজি
 Teaching: শেখা ও শেখানো, দেয়া ও নেয়া
 ইউএস ভিসা পাওয়া না পাওয়া এবং হায়ার স্টাডির কিছু পয়েন্ট
 জিআরই এবং টোফেল: হায়ারস্টাডির প্রস্তুতি হোক স্ট্র্যাটিজিক্যালি (পার্ট- ১)
 জিআরই এবং টোফেল: হায়ারস্টাডির প্রস্তুতি হোক স্ট্র্যাটিজিক্যালি (পার্ট- ২)
 জিআরই এবং টোফেল: হায়ারস্টাডির প্রস্তুতি হোক স্ট্র্যাটিজিক্যালি (পার্ট- ৩)
 জিআরই এবং টোফেল: হায়ারস্টাডির প্রস্তুতি হোক স্ট্র্যাটিজিক্যালি (পার্ট- ৪)
 আমার অভিজ্ঞতা: জিআরই প্রস্তুতি এবং পরীক্ষা
 আমার অভিজ্ঞতা: টোফেল প্রস্তুতি এবং পরীক্ষা
 আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা এবং দরকারি কৌশল