এলোমেলো ভাবনা সরাতে আমি নামাজ পড়তাম। মাঝে মাঝে লেখালেখি করতাম। আমি লিখে লিখে ফেসবুকে পোস্ট দিতাম। সুরিয়া খুব রেগে যেত। ও বলত ইংরেজিতে কেন লেখ না। ওকে বলতাম ইংরেজিতে আমার এত দখল নেই। আর মাইকেল মধুসূদন হবার ইচ্ছেও নেই। সুরিয়া মাইকেলের নাম জানত। সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার সে হুমায়ূন আহমেদের নাম জানত। শরৎচন্দ্রের নাম জানত। এই সুযোগে বাংলা সাহিত্যের সমৃদ্ধি নিয়ে ওর কাছে খুব ভাব নিতাম। একটু ব্যঙ্গ করে বলতাম, তোমাদের হিন্দি মুভির অনেক কাহিনী কিন্তু আমাদের সাহিত্য থেকে ধার করা। এতে সুরিয়া রাগত না। হিন্দি মুভি রসাতলে গেলেও তার কিছু যায় আসে না। সে বরং হিন্দি মুভির খোলামেলা ব্যাপারটা নিয়ে সমালোচনা করত। একসময় বুঝলাম, হিন্দি সুরিয়ার ভীষণ অপছন্দ। কোন দেশের একটি মেয়ে তার রাষ্ট্র ভাষাকে অপছন্দ করে ব্যাপারটা খুব অদ্ভুত লাগল।

সুরিয়া ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করল। সুরিয়া তামিল নাড়ুর মেয়ে। তামিল ছিল ভারতের সবচেয়ে প্রাচীন ও সমৃদ্ধশালী ভাষা। জ্ঞানচর্চা আর শিলপ সাহিত্যের দিক থেকে তামিলরাই ছিল সবার থেকে এগিয়ে। সবাই জানত তামিল হবে ভারতের রাষ্ট্র ভাষা। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠতায় কিছু ভোটে তামিল পিছিয়ে পড়ে। কিন্তু তামিলরা এই ব্যাপারটা মানতে পারিনি। পুরা ভারতে মোট ত্রিশটি ভাষায় কথা বলা হয়। সবাই তাদের নিজেদের ভাষায় কথা বললে ও তারা হিন্দি শেখে, অন্যদের সাথে বলে, অফিসিয়ালি ব্যবহার করে। তবে তামিল রাজ্যে ব্যাপারটা একটু উল্টো। সেখানে হিন্দি ছবি কখনও দেখানো হয় না। তামিলরা কেউ হিন্দি শেখে না। তারা হিন্দি জানেও না। এজন্য ভারতীয় আড্ডায় সুরিয়া খুব অসহায় বোধ করত। তবে শ্রীলঙ্কান একটি মেয়ে সিন্থুজা তার সাথে ওর খুব ভাব ছিল। শ্রীলঙ্কার একটি অঞ্চলে তামিল ভাষায় কথা বলা হয়। সিন্থুজা মাঝে মাঝে আমাদের বাসায় আসতো। কোন কারণ ছাড়াই সবসময় সে হাসত। যেন তার জীবনের সবচেয়ে সুখের ঘটনা এই মাত্র ঘটেছে।

তবে আমেরিকাতে হাসাহাসি করা একটা ভদ্রতা। অচেনা লোক, তারপরও হেসে হেসে গ্রিটিংস দেওয়া। আমি বরাবর ভীষণ গোমড়া মুখো লোক। তবে কাউকে দেখলেই হাসি দেওয়ার ব্যাপারটায় একসময় অভ্যস্ত হয়ে গেলাম। আমার খুব ভালও লাগত। ভেবে দেখলাম আমেরিকানরা খুব নিঃসঙ্গ। তাই গ্রিটিংস ব্যাপারটা ওরা চালু করেছে। এতে নিঃসঙ্গতা অনেকটা দুর হয়। এবং “হাসির মত সহজবোধ্য, সর্বজনীন ভাষা আর একটিও বোধ হয় নেই”। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের একটি বইয়ে লাইনটি পড়েছিলাম।

সিন্থুজা আসলে সুরিয়ার যেন সেদিন ঈদ থাকত। খুব গল্প করত ওরা। আমি একদিন ওদের গল্পের মাঝে, খুব বেফাঁস কথা বলে ফেললাম। সিন্থুজাকে বললাম, কতমাস হল। শরীর কেমন? সুরিয়া আমাকে থামবার ইশারা করল। সিন্থুজার আসলে একটি সিস্ট হয়েছিল। ব্যাপারটি প্রথমে ও বুঝতে পারেনি। বাচ্চার মা হবে ভেবে খুব লাফঝাঁপ করে পরে ধরা পড়েছে। সুরিয়া আমাকে পুরোটা বললো, সেটা সত্যিই করুন কাহিনী। আমেরিকাতে মানুষ সবচেয়ে বেশী অসহায় হয় অসুখ করলে। মরে যাচ্ছে জেনেও সামর্থ্যের অভাবে কিছু করতে পারে না। তবে খুব অদ্ভুত ব্যাপার আমরা মাইনাস ফোরটি সেলসিয়াসেও হেঁটেছি। কোনদিন ঠাণ্ডা লাগেনি। সাজ্জাদ অবশ্য এর ব্যাখ্যা দিল। এখানে মানুষের বসতি যেমন কম, জীবাণুরও কম।

সুরিয়ার সাথে আমার সময় বেশ ভালই কাটছিল। আমরা অনেক টিভি প্রোগ্রাম একসাথে দেখতাম। ওর হিন্দি কিছু প্রোগ্রামের ব্যাপারে আগ্রহ ছিল। আমি ওকে অনুবাদ করে বোঝাতাম। আমি নিজেও হিন্দি ভাল বুঝি তা নয়। তবে আমাদের শব্দের সাথে অনেক মিল থাকায় আন্দাজ করা যায়। আমার কাছে সুরিয়া হিন্দি শিখতে লাগল। বাংলা কিছু শব্দ ও শিখেছিল। তবে আমাকে ও তামিল শেখাতে পারল না। তামিল আমার কাছে খুব জটিল মনে হল। আমার প্রফেসর ডক্টর হেলডার অন্য ভাষা শিখতে আগ্রহী ছিলেন। আমার কাছে বললেন, ধর তোমার দেশে গেলাম, কিভাবে বাংলায় হ্যালো বলব? আমি হ্যালোর কোন বাংলা শব্দ না পেয়ে বললাম, হ্যালো হল আসসালামু আলাইকুম। কিন্তু এত লম্বা হ্যালো কিছুতেই তিনি উচ্চারণ করতে পারলেন না। তবে কিছু ভাষা তিনি শিখেছিলেন। আমাকে দেখলেই কামান আচ? বলতেন। ভাষা শেখাটা আমার কাছেও একটি মজার ব্যাপার ছিল। আমি রোমানের কাছে কিছু ফ্রেঞ্চ শিখেছিলাম। যেমন, কোমোসাভা । অর্থ কেমন আছো। ভাষা শিখতে যেয়ে দেখলাম শুধু হিন্দি নয়, নেপালির সাথেও আমাদের খুব মিল। ওরাও ভাতকে ভাত, ডালকে ডাল, আলুকে আলু বলে। তবে ইন্ডিয়ানরা রুটিকে চাপাতি বলত। প্রথমদিন যখন শুনি, খুব অবাক হয়েছিলাম। সুরিয়া বললো, চাপাতি তার খুব পছন্দ। আর সে জানে কিভাবে চাপাতি বানাতে হয়। চাপাতি আমাদের দেশে একটি খুব মারাত্মক ধারালো অস্ত্র। খুনোখুনির কাজে এটি ভীষণ লাগে। আমি ধরে নিলাম, সুরিয়ার বাবা কামার। পরে বুঝিয়ে বললো, চাপাতি মানে রুটি। সুরিয়া খুব দোসা বানাত। ময়দাটা ফারমেন্ট করে অনেকটা চিতই পিঠার মত। তবে রুটির আকারে বানানো হয়। দোসা আমার খুব পছন্দের খাবার ছিল।

সুরিয়া আমাকে একবার বললো, সে তার এক বন্ধু দম্পতিকে বাসায় দাওয়াত করবে, আমার কোন অসুবিধা আছে কিনা। আমি বললাম আপত্তি নেই। মনে হল, ভালই। এই সুযোগে আমারও ভাল মন্দ খাওয়া হবে। দাওয়াতের দিন সুরিয়া দোসা, সবজি, চাটনি আর রাইতা (সালাদ) বানাল। সাথে ইয়োগার্ট ছিল। মাছ মাংশ না পেয়ে আমি ভীষণ হতাশ হলাম। তবে ঐ দম্পতির সাথে গল্পগুজবে মন ভাল হয়ে গেল। আমরা চারজন কার্ড খেললাম। মেয়েটি ফরাসী। তবে তার অরিজিন ভারতে। সে তামিল অল্প অল্প বলতে পারে। হিন্দি জানে না। আমরা ইংরেজিতে কথা বলছিলাম সবাই। তাই অসুবিধা হচ্ছিল না। আমাদের খুব ভাল সময় কাটল।

পরদিন আমি ল্যাবে গেলাম। সুদীপ বললো, তোমার জন্য একটি সারপ্রাইজ আছে। কি সারপ্রাইজ কিছুই বুঝলাম না। সারপ্রাইজ দেবার কথা বলে সে দেখি পিছন ঘুরিয়ে অন্য একটি নেপালি ছেলের সাথে গল্পে মশগুল। এই ছেলেটি আমাদের ল্যাবে প্রায় আসে। সে আমাদের পাশের ল্যাবে কাজ করে। মাঝে মাঝে আসে, গল্পগুজব করে চলে যায়। তবে আমার সাথে কোনদিন কথা হয়নি। হঠাৎ ছেলেটি ঘুরে আমার সাথে বাংলায় কথা বলা শুরু করল। একদম পরিষ্কার কথা। দুই একটা শেখানো বাক্য না। কঠিন কঠিন শব্দ দিয়ে বাক্য। এরপর একদিন করিডোরে তার সাথে দেখা। আমাকে দেখে বললো, কি তন্দ্রা ঘুম পেয়েছে, চোখ তো ঢুলু ঢুলু? বাংলা সে জানতেই পারে। তাই বলে ঢুলু ঢুলু পর্যায়ের বাংলা!

ছেলেটি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছে। বাংলাদেশে কয়েক বছর থাকার কারণে বাংলাটা সে ভালই জানে। ছেলেটির সাথে কথা বললেই খুব আনন্দ হত। আমরাই শুধু বাইরে পড়তে আসি না। বাইরের ছেলেরাও আমাদের দেশে পড়তে যায়। আর কোন বিদেশির মুখে নিজের ভাষা শোনা সত্যিই খুব আনন্দের ব্যাপার। আমি আরও আনন্দ পাবার জন্য ছেলেটির সাথে চুটিয়ে গল্প করতাম। সুদীপের কোন পাত্তা ছিল না সেখানে। একদিন রেগে গিয়ে সে বললো, তুমি কি জান, ও বিবাহিত? আমি বললাম জানি। ভদ্রলোকের স্ত্রীর সাথেও আমার পরিচয় হয়েছে। উনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন। ভাল বাংলা জানেন।

আমাদের ল্যাবে সামারে রায়ান নামে একটি নতুন ছেলে জয়েন করল। আন্ডারগ্রেডে পড়ে। রায়ানের ইচ্ছা ও পাইলট হবে। তাই হাইস্কুল শেষে ও এয়ারফোর্সে যোগ দেয়। কিন্তু আমেরিকান নিয়ম অনুযায়ী পাইলট হতে হলে টেকনিক্যাল ডিগ্রি নিতে হয়। তাই এখানে ফিজিক্সে পড়ছে। রায়ান খুব সুদর্শন ছেলে ছিল। ও সাউথ ডাকোটার গভর্নরের নাতী। আমাদের ল্যাবের কাজ ছিল স্যাটেলাইট ইমেজ কালিব্রেশন করা। মানেটা হল স্যাটেলাইট জিনিসটা থাকে খুব উঁচুতে। আর পুরো পৃথিবী ঘুরতেও তার ৮-১৬ দিন লাগে। তাই সে কখনও ইনস্ট্যান্ট ইমেজ পাঠাতে পারে না। সে শুধু কিছু সংখ্যা পাঠায়। সেই সংখ্যাটা দিয়েই ইমেজ বানানো হয়। ধরা যাক স্যাটেলাইটির যন্ত্রপাতিতে কোন সমস্যার কারণে সেটি আর আগের মত কাজ করছে না। সঠিক সংখ্যা না পাঠিয়ে কিছুটা ভুল পাঠাচ্ছে। এই ভুলটা ঠিক করতে হলে, উপরে উঠে সেটি মেরামত করা দরকার। কিন্তু উপরে উঠে কে সেটি মেরামত করবে আর অত বড় মই ই বা কোথায় পাওয়া যাবে। তাই আমাদের কাজ ছিল একটি সমাধান অথবা সংখ্যা বের করা যেটি দিয়ে গুণ করলে আমরা সুস্থ স্যাটেলাইটের মত ডাটা পেতে পারি।

তবে এই ডাটা কখনও আমরা দেখতে পেতাম না। সিকিউরিটির জন্য ইন্টারন্যাশনাল লোকজনকে দেখতে দেওয়া হত না। ওদের ধারণা ছিল আমাদের মধ্যে কেউ হয়ত, লাদেনের গুপ্তচর। লাদেনকে যেয়ে সব বলে দেব। হাস্যকর ব্যাপার হলো আমাদের ল্যাবে কোন মিলিটারি ডাটা নিয়ে কাজ হত না। তবুও নিয়ম বলে কথা। এসব কাজ আমাদের করার অনুমতি ছিল না। এই কাজগুলো আমেরিকানরা করতো। ওরা বসতও আমাদের থেকে অনেকটা আলাদা, একটু দূরে। যেসব ডাটা ওদের মনে হত ইন্টারন্যাশনাল কেউ দেখলে ক্ষতি নেই। সেগুলো আমরা দেখতে পেতাম। ইন্টারন্যাশনালদের কাজ ছিল মূলত থিওরি ডেভেলপমেন্ট নিয়ে। আমার কাজ ছিল একটি মডেল বানানো। আমার মডেলটির উদ্দেশ্য ছিল ফাঁকিবাজ চাষীদের শায়েস্তা করা।

আমেরিকাতে জমিজমার তুলনায় চাষীর সংখ্যা খুব নগণ্য। আর ফলনও হয় খুব বেশী। খেয়ে দেয়ে তারা ত্রাণের জন্য কিছু বরাদ্দ রাখত। তারপরও অনেক ফসল। বাজারে ফসলের দাম ঠিক রাখতে তারা কাউকে দিতও না। তাহলে চাষীরা সঠিক দাম পাবে না। চাষের আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। একারণে আমেরিকানরা বুদ্ধি বের করল। বুদ্ধি হল জাহাজ ভাড়া করে মাঝ সমুদ্রে যেয়ে সব ফসল ফেলে দেওয়া। একসময় ব্যাপারটি তাদের কাছে কিছুটা অমানবিক মনে হল। পৃথিবী শুদ্ধ লোক খেতে পায় না। আর তারা খাবার ফেলে দিচ্ছে। জাহাজ ভাড়ারও খরচ আছে। নতুন বুদ্ধি বের করা হল। নতুন বুদ্ধি হল, সবাইকে প্রতি বছর চাষ করতে হবে না। কেউ কেউ করবে আর বাকিরা পা দোলাবে। প্রত্যেক চাষীর ইন্স্যুরেন্স থাকবে। পা দোলানো চাষীরা ইন্স্যুরেন্স থেকে টাকা পাবে। সব দেশেই কিছু ফাঁকিবাজ থাকে। দেখা গেল, কেউ আর কাজ করতে চায় না। সবাই পা দোলাতে চায়। ইন্স্যুরেন্স এ যেয়ে বলে, বন্যা, তুষারপাত বিভিন্ন কারণে এ বছর আমি ফসল ফলাতে পারিনি। আসলে সে ব্যক্তি কোন চাষাবাদই করেনি অথবা চাষের সঠিক পরিচর্যা করেনি। এজন্য ইন্স্যুরেন্স অফিস থেকে মনিটর করা হত, চাষীরা কাজে ফাকি দিচ্ছে কিনা। কিন্তু এত এত জমি। সব জায়গায় তো যাওয়াও সম্ভব না। তাই বুদ্ধি করা হল স্যাটেলাইটে থেকে মনিটর করা হবে। কিন্তু অত উঁচুর জিনিস কিভাবে এত ছোট গাছ পালা মনিটর করবে। দেখা গেল, কারো লাগানোর কথা ধান, সে বুনো ঘাস লাগিয়ে রেখেছে। তাই এই নিয়ে অনেক গবেষণা হত কি করে ছবি থেকে ফসলের পরিচয় ও স্বাস্থ্য সম্পর্কে জানা যায়।

আমার কাজ ছিল এই গবেষণায় কিছু সাহায্য করা। আমার গবেষণার সঙ্গী ছিল রায়ান। আমরা প্রথমে আমাদের মডেলটা একটা গ্রাস ল্যান্ডের উপর এপ্লাই করি। গ্রাস ল্যান্ডটা ছিল বেশ বড়। তিন–চার  বিঘার মত। রায়ানের কাজ ছিল সেই গ্রাস ল্যান্ডের ঘাস কাটা। সে প্রতি দুই সপ্তাহে একবার পুরা জমির ঘাস কাটত। যদিও সে মোটরগাড়ি চালিত মেশিন দিয়ে কাটত। তবে কাজটি মোটেও সহজ ছিল না। প্রচণ্ড রোদে রায়ানের সানবার্ন হয়ে গেল। তারপরও সে খুব নিষ্ঠার সাথে কাজ করত। একজন গভর্নের নাতী হয়ে সে ঘাস কাটত। আমাদের দেশে যেটি চিন্তাও করা যায় না। মাঝে মাঝে আমরা মাঠে যেতাম ডাটা নিতে। আমার সাথে ল্যারি, রায়ান থাকত। মাঝে মাঝে প্রফেসর এরন আসতো।

আমেরিকার মাঠে যেয়ে আমার অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হল। সেখানে চাষীরা প্যান্ট জামা পরে গাড়ি করে মাঠে আসে। মাঠের মাঝে পার্কিং এর জায়গা আছে। হেলিকপ্টারে করে সেখানে সার কীটনাশক ছিটানো হচ্ছে। আমার ঠিক তখন আমাদের দেশের চাষাবাদের কথা মনে হল। রিসার্চের এর কাজে আমাকে প্রচুর গাছপালা নিয়ে পড়তে হল। চাষাদের বিভিন্ন ব্লগ ছিল। সেখানে চাষীরা বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে লিখত। আমার অনেক প্রশ্নের উত্তর আমি সেখানে পেয়েছিলাম। এই উত্তর খোঁজার সময়টা আমার দেশের চাষীদের কথা মনে পড়ত। কোন সমস্যার সমাধান যারা খোঁজে শুধুই অভিজ্ঞতা দিয়ে। মাঠে এক হাঁটু কাদায় দাঁড়িয়ে তারা সার, কীটনাশক দেয়। প্যান্ট শার্ট কোনদিন হয়ত চোখেই দেখিনি। খুব শীতেও একটা গামছা জড়িয়ে জমিতে আসে। ভাবে, একমাত্র জামাটা ময়লা করে কাজ নেই। তবে চাষার চেয়ে খারাপ কিছু আমাদের দেশে নেই। কারো বাবা চাষা হলে দেখেছি সে লজ্জায় বলে না। বলে জমিজমা দেখাশোনা করে।

আমি কিছু ইনডোর প্লান্টেসন করে ছিলাম। উদ্দেশ্য সবসময় যেন ডাটা নিতে পারি। সাউথ ডাকোটা ইউনিভার্সিটির রিসার্চ ফাকাল্টির ডীন ডক্টর ডেনিশ হেলডার আমাকে এ ব্যাপারে সাহায্য করলেন। প্রচণ্ড গর্ব করে বললেন, তুমি জানো, আমি একজন চাষা। অনেক জমি চাষ করেছি আমি। আমার বাবা-দাদাও চাষা ছিলেন।

 


প্রবাসে সিরিজের গল্পসমূহঃ

 পর্ব ১ঃ যাত্রাপথের গল্প
 পর্ব ২ঃ নতুন বাসা, ওরিয়েন্টেশন, রাস্তা হারানো
 পর্ব ৩ঃ পুলিশ আসা, রেজিস্ট্রেশন বিড়ম্বনা
 পর্ব ৪ঃ ডরমেটরির গল্প, প্রথম তুষারপাত
 পর্ব ৫ঃ ইন্টারন্যাশনাল নাইট, বাসা নিয়ে ঝামেলা, শায়লা আপুর চলে যাওয়া
 পর্ব ৬ঃ কামরানকে হাসপাতালে নেওয়া, টেকো সুদীপ আর ব্রিটিশ প্রফেসরের গল্প
 পর্ব ৭ঃ ল্যাব ও ফরাসী যুবকের হৃদয় ভাঙার গল্প।
 পর্ব ৮ঃ সামার এসেছে, বেতন পাইনি, প্রথম বাসা ছেড়ে দিলাম
 পর্ব ৯ঃ সঙ্গীহীন জীবন, সুরিয়া মথুর গল্প, সামারের দিনলিপি, একা পথ চলা
 পর্ব ১০ঃ বিদেশী ভাষা শেখা ও আমেরিকান চাষাবাদের গল্প
 পর্ব ১১ঃ আমার বাইবেল শেখা
 পর্ব ১২ঃ সাজ্জাদের চলে যাওয়া, লিবিয়ান পরিবারের গল্প
 পর্ব ১৩ঃ মুহিত ভাইয়ের গল্প, আমার আগুন ধরিয়ে ফেলা
 পর্ব ১৪ঃ মসজিদ, ঈদ, ইয়ামিনী আসা, নতুন বাসা, আমেরিকান বিয়ে ও অরিগন যাবার গল্প
 পর্ব ১৫ঃ
 পর্ব ১৬ঃ
 পর্ব ১৭ঃ
 পর্ব ১৮ঃ
 পর্ব ১৯ঃ

লেখক পরিচিতিঃ

 জান্নাতুন নাহার তন্দ্রা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ‘নর্থ ক্যারোলিনা এ এন্ড টি স্টেট’ ইউনিভার্সিটিতে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ ‘PhD’ করছেন এবং তার গবেষণার বিষয় হল ‘Real time Object detection with Higher Accuracy’। jannatunজান্নাতুন নাহার তন্দ্রার স্কুল জীবন কেটেছে চুয়াডাঙ্গা শহরে, কলেজ জীবন হলিক্রস কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয় জীবন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগে। এবং সেখান থেকেই ২০১০ সালে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন তিনি। এরপর একটি সংক্ষিপ্ত কর্মজীবন শেষে ২০১২ সালে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে এবং ২০১৪ সালে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। জান্নাতুন নাহার তন্দ্রা অবসরে লিখতে ভালবাসেন এবং সে অভ্যাস বশতই আমেরিকার গ্রাজুয়েট প্রোগামে একা একটি মেয়ে পড়তে আসার অভিজ্ঞতা (সাউথ ডাকোটা) একসময় তিনি লিখতে শুরু করেন। এবং তার এই অভিজ্ঞতা নিয়ে ‘প্রবাসে’ নামে ২০১৫ সালের ‘একুশে বই মেলায়’ তার একটি বই প্রকাশিত হয়। বইটি কোন তথ্যমূলক বই নয় বরং বলা যায় এটি লেখিকার রোজকার ডায়েরী।