দেশের বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ করে আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ে ফান্ডেড অ্যাডমিশন ম্যানেজে গুরুত্বপূর্ণ ‘কি ফ্যাক্টর’ এর মধ্যে একটি হচ্ছে রিসার্চ এক্সপেরিয়ান্স বা পাবলিকেশন। তবে বাস্তবতা হচ্ছে বাংলাদেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের রিসার্চে আগ্রহ সৃষ্টি বা সহযোগিতাও করা হয় না।

পাবলিক এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের অনার্স জীবনের শেষে জোটে নাম মাত্র একটি থিসিস। যা অধিকাংশ সময়ই শেষ করা হয় সিনিয়রের বা বন্ধুরটা কপি করে। তবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভাগ্যে সেটাও জোটে না।

যেহেতু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সহ অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরই পাবলিকেশন বের করার সুযোগ থাকে না, সেক্ষেত্রে প্রফেসর ম্যানেজ করা কঠিন মনে হতে পারে। বিষয়টি আংশিক সত্য।

যেহেতু ফান্ড সাধারণত প্রফেসরের ল্যাবে রিসার্চ সহযোগী হিসেবে কাজ করার বিপরীতে হয়ে থাকে তাই রিসার্চ এক্সপেরিয়ান্স গুরুত্বপূর্ণ। আর একজনের রিসার্চ এক্সপেরিয়ান্স রয়েছে কিনা তা বোঝা যায় তার কতোগুলো পাবলিকেশন রয়েছে তা দেখে।

পাবলিকেশন না থাকলেও প্রফেসর ম্যানেজ করা যায়। সেক্ষেত্রে আপনি যে বিষয় পড়তে চান বা প্রফেসরের সাথে যে বিষয় কাজ করতে চান, সে বিষয় সম্পর্কে আপনাকে স্পষ্ট ধারণা রাখতে হবে। প্রফেসরকে আপনার আগ্রহ তাকে সম্পূর্ণভাবে কনভেন্সিং হিসেবে উপস্থাপন করতে হবে।

১. প্রফেসর সম্পর্কে ধারনা ও ব্যাকগ্রাউন্ড স্টাডি:

যখন আপনার রিসার্চ এক্সপেরিয়ান্স নেই তখন একমাত্র ভরসা হলো ভালো স্কোর করা। আর এই স্কোরের দ্বারা প্রফেসরকে কনভিন্স করার চেষ্টা করা। এক্ষেত্রে প্রফেসরের সম্পর্কে ব্যাকগ্রাউন্ড স্টাডি সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

প্রথমেই প্রফেসরের সাম্প্রতিক সময়ের কাজ সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। তার কাজ এবং কাজের ধরণ বুঝতে হবে। প্রফেসরের সম্প্রতি প্রকাশিত জার্নাল পড়ে নিয়ে যোগাযোগ শুরু করতে হবে।

২. প্রফেসরের সাথে যোগাযোগ:

যোগাযোগ শুরু করার ২টি উপায় হতে পারে। ১. ছোট একটি ইমেইলে নিজের প্রোফাইল সহ সব তথ্য উল্লেখ করে প্রফেসরের আন্ডারে কাজ করার সুযোগ আছে কিনা তা সরাসরি জানতে চাওয়া। ২. প্রফেসরের সাথে রিসার্চ নিয়ে আলোচনা করে কিছুটা সম্পর্ক এগিয়ে তারপর নিজের আগ্রহ প্রকাশ বা কি চাচ্ছেন সেটা জানানো।

এই দুটি উপায়ের যেকোনটি অবলম্বন করে প্রফেসরকে ম্যানেজ করতে হবে। তবে আপনি যে পদ্ধতিই অনুসরণ করুণ না কেন যোগাযোগের মাধ্যম হচ্ছে ইমেইল; তাই আপনি কতোটা দক্ষ তা প্রফেসর বিবেচনা করবেন ইমেইল পড়ে, সার্টিফিকেট বা অন্যান্য পারদর্শিতা দেখানোর সুযোগ নেই। তাই ইমেইল হওয়া চাই ফোকাসড্ এবং তথ্যবহুল।

প্রফেসরের সাথে যোগাযোগ করে তার কাজের কোন দিকটি আপনাকে আকর্ষণ করেছে তা বলতে হবে। আপনি প্রফেসরের কাজটির সাথে কতটা কম্পাটিবল তা প্রফেসর এর কাছে স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে হবে।

যদি আপনার ইমেইল যথেষ্ট কনভিন্সিং হয়, তাহলে প্রফেসর আপনাকে তার ফেলো হিসাবে গ্রহণ করতে পারে। এক্ষেত্রে অনেককেই প্রায় হাজার খানেক ইমেইল পাঠাতে হয়। নক দিতে হতে পারে একশ’য়েরও বেশি প্রফেসরকে।

প্রফেসরকে ইমেইল করার পূর্বে ‘প্রফেসরকে ই-মেইল করার খুঁটিনাটি’ আর্টিকেলটি পড়ে নিতে পারেন।

৩. ইমেইলে উল্লেখযোগ্য বিষয়সমূহ:

  • আপনার পড়ার বিষয় এবং প্রফেসরের কাজের সাথে কতটা মিল রয়েছে।
  • আপনার পড়ার বিষয়ে আপনি কতটা পারদর্শী।
  • প্রফেসরের কাজ আপনার পড়াকে কতটা প্রভাবিত করেছে এবং আপনার কাজ বা পড়ার বিষয়টি প্রফেসরের কাজকে কতটা সুবিধা দিতে পারে।
  • প্রফেসরের জার্নাল সম্বন্ধে সুস্পষ্ট ধারনা এবং তার কাজের একটি সাধারণ বিশ্লেষণ থাকতে পারে।
  • প্রফেসরের বর্তমান কাজের সাথে আপনার কাজ যুক্ত হলে ফলাফল কি হতে পারে তার েএকটি ধারনা দেওয়া যেতে পারে।
  • সর্বোপরি, কথায় সুষ্পষ্টতা থাকতে হবে। আপনার ধারনা এবং প্রোফাইল-এ মিল থাকতে হবে।

পূর্বের যেকোন সময়ের চেয়ে বেড়েছে দেশের বাইরের উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী শিক্ষার্থীদের সংখ্যা। অনেকেই সিজিপিএ এবং জিআরই স্কোরের সাহায্য নিয়ে ফান্ডিং নিয়ে পাড়ি জমাচ্ছেন আমেরিকান ইউনিভার্সিটিতে মাস্টার্স বা পিএইচডি প্রোগ্রামে।

যেহেতু বর্তমানে বাংলাদেশ থেকেই শুধু নয় ভারত, পাকিস্তান, চীনের মতো দেশ থেকেও স্টুডেন্ট অ্যাপ্লাই করছে আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া সহ ইউরোপের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তাই প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতে শুধু মাত্র ভালো সিজিপিএ এবং জিআরই স্কোরই যথেষ্ট নয়। সুযোগ থাকলে অবশ্যই রিসার্চ করে নিজের প্রোফাইলকে আরও সমৃদ্ধ করতে হবে।

 

– আর্টিকেল কৃতজ্ঞতায়: তাহমিনা আক্তার মিলি, গ্রেক অ্যালামনাস (জিআরই স্কোর: ৩২৮)