বাংলাদেশের লেখাপড়ার বিভিন্ন ধাপ যেমন প্রাইমারি, হাইস্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি পর্যায়ের ডিগ্রি আমরা সহজেই বুঝে থাকি। কিন্তু আমেরিকান লেখাপড়ার স্তরগুলো সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই ধারণা পরিস্কার নয়। বিষয়টা আরো জটিল হয়ে ওঠে ইউনিভার্সিটিতে (আমেরিকান কলেজ বা গ্র্যাজুয়েট স্টাডি লেভেলে) আবেদনের সময় “গ্রেড” বা “কলেজ সিনিয়র” এই নামগুলো যখন বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বুঝে নিতে হয়। এই আর্টিকেলের উদ্দেশ্য হলো আমেরিকান পড়ালেখার স্তরগুলোকে বাংলাদেশের প্রচলিত পড়ালেখার স্তরসমূহের সাপেক্ষে তুলনা করে কোন নামের ডিগ্রি বা প্রতিষ্ঠান আসলে কোন পর্যায়কে বোঝায় তার ধারণা দেওয়া।
প্রাক-প্রাথমিক পড়ালেখা
নার্সারি বা কিন্ডারগার্টেন বিষয়ক আলোচনা আমরা এখানে বাদ দিচ্ছি।
বাংলাদেশের প্রাইমারি স্কুল থেকে দশম শ্রেণী শেষ করা
বাংলাদেশে এই দশ বছরকে আমরা সাধারণ ভাবে স্কুল বলে থাকি। যদিও ক্লাস ১-৫ পর্যন্ত প্রাথমিক, ৬-৮ পর্যন্ত নিম্ম মাধ্যমিক আর ৯-১০ কে মাধ্যমিক ধরা হয়, সাধারণ ভাবে বাংলাদেশের বাংলা মিডিয়ামে আমরা েএদেরকে স্কুল লেভেল লেখাপড়াই বলে থাকি। আমেরিকায় “স্কুল” বলতে ঠিক ১ থেকে ১২ শিক্ষা বর্ষ পর্যন্ত লেখাপড়া বোঝায়। মানে আমাদের দেশের কলেজ বা মহাবিদ্যালয়কেও আমেরিকায় “স্কুল” এর মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। তবে যথারীতি এই ১২ বছরের স্কুলের মধ্যে আবার ভাগ আছে। যেমন:
Elementary School
- Kindergarten
- First Grade (বাংলাদেশের প্রাইমারি স্কুলের প্রথম শ্রেণী) to Sixth Grade (প্রাইমারি স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণী)
তার মানে, আমেরিকায় কেউ ইলিমেন্টারি স্কুল গ্র্যাজুয়েট বললে বুঝতে হবে সে বাংলাদেশর ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যায়ের লেভেল শেষ করেছে।
Middle School
- Seventh grade and Eight grade
High School
- Ninth Grade (High School Freshman)
- Tenth Grade (High School Sophomore)
- Eleventh Grade (High School Junior)
- Twelfth Grade (High School Senior)
অর্থাৎ বাংলাদেশের একজন এসএসসি পরীক্ষার্থী হবে আমেরিকান টেন্থ গ্রেডের সমপর্যায়ের এবং সে নিজেকে High School Sophomore বলতে পারে। লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, বাংলাদেশে যেমন একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণী সম্পূর্ণ আলাদা লেভেলের প্রতিষ্ঠানে (মহাবিদ্যালয় বা কলেজ নামের) পড়ানো হয়, আমেরিকায় তেমন নাও হতে পারে। যদি 9th and 10th গ্রেড একসাথে নিয়ে কোন স্কুল চলে তাহলে তাকে বলে Junior High School, কারণ এটা হাই স্কুলেরই চার বছরের নীচের দিক, আর 11th and 12th নিয়ে কোন স্কুল হলে তাকে বলে Senior High School, কেননা এখানে সিনিয়র লেভেলের দুই বছর কাভার করা হয়।
বাংলাদেশের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণী
আগেই বলেছি, আমেরিকায় েএই দুই বছর হাইস্কুল লেভেলের মধ্যেই থাকে এবং তাকে হাই স্কুল জুনিয়র বা সিনিয়র লেভেল বলা হয়। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর পড়ালেখা শেষে বাংলাদেশে এইচএসসি পরীক্ষা দিতে হয় এবং শিক্ষার্থী একটি ডিগ্রি অর্জন করেন। আমেরিকায় এটাকে বলা হয় হাই স্কুল গ্র্যাজুয়েট। যেহেতু বাংলাদেশে আমরা একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর পর্যায়কে সচরাচর কলেজ নামে ডেকে থাকি, আমেরিকান কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যোগাযোগের সময় “কলেজ” শব্দটি ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, কারণ তারা এগুলোকে সিনিয়র হাইস্কুল বলে ডেকে থাকেন।
বাংলাদেশের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট লেভেল
১২ বছরের লেখাপড়া শেষে বাংলাদেশ ও আমেরিকা উভয় স্থানেই প্রফেশনাল লেভেলের লেখাপড়ায় প্রবেশ করা যায়। আমাদের দেশে যেমন বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যাল, মেডিকেল কলেজ ইত্যাদি লেভেলের পড়ালেখার পাশাপাশি পলিটেকনিকে অনেকে ঢুকে পড়ে, আমেরিকায়ও তেমনি আন্ডারগ্র্যাজুয়েট কলেজের পাশাপাশি অনেক কমিউনিটি কলেজ বা অ্যাসোশিয়েট ডিগ্রি নিয়ে থাকেন ( প্রধানত: শর্ট কোর্স)। তবে খেয়াল রাখার বিষয় হলো, বাংলাদেশে আমরা এই পর্যায়টিকে ইউনিভার্সিটি নামে ডাকলেও আমেরিকায় কিন্তু প্রধানত: কলেজ হিসাবে ডাকা হয়। হাইস্কুলের মতো কলেজের চার বছরের নামও এরকম:
- College Freshman (বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাচেলর প্রোগ্রামের প্রথম বর্ষ সমতুল্য )
- College Sophomore (বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাচেলর প্রোগ্রামের দ্বিতীয় বর্ষ সমতুল্য )
- College Junior (বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাচেলর প্রোগ্রামের তৃতীয় বর্ষ সমতুল্য )
- College Senior (বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাচেলর প্রোগ্রামের চতুর্থ বর্ষ সমতুল্য )
তুলনার সুবিধার জন্য দুটি উদাহরণ দিচ্ছি:
- নটরডেম কলেজের উচ্চমাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের একজন স্টুডেন্ট হবেন আমেরিকান High School Senior সমতূল্য।
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের একজন স্টুডেন্ট হবেন আমেরিকান College Junior সমতূল্য।
বাংলাদেশের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট লেভেল এবং আমেরিকান “গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রাম”
মাস্টার্স ও পিএইচডি এই উভয় পর্যায়ে ভর্তির জন্য ব্যাচেলর ডিগ্রি থাকা চাই অর্থাৎ আন্ডারগ্র্যাজুয়েট কোর্স কমপ্লিট করতে হবে। তাই এই উভয় লেভেলকে একসাথে বলা হয় গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রাম। যদিও অনেকে ব্যাচেলরের পর প্রথমে এমএস করেন এবং তারপর পিএইচডিতে যান, অনেকে এমএস ছাড়াই সরাসরি পিএইচডিতে ভর্তি হয়ে থাকেন। এটা গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্র্রামের ভর্তির শর্তের উপরে নির্ভর করে। বাংলাদেশের সাধারণত: এক বছরে এমএস শেষ করা গেলেও আমেরিকায় সময় লাগে দুই বছর।
পিএইচডি বা ডক্টরাল প্রোগ্রাম
উপরের ছবিটি ধারাবাহিকতার ক্রমে দেখানো হয়েছে বলে পিএইচডির প্রথম বছর ১৯ তম শিক্ষাবর্ষ হিসাবে এসেছে। যদি কেউ এমএস না করেন তাহলে এটি হবে তার ১৭ তম বছর। মানে ১৬ বছরের লেখাপড়া শেষেই আমেরিকান গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে পিএইচডি শুরু করা যায়। আমেরিকায় প্রোগ্রাম, প্রফেসর বা বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে পিএইচডি ৪ থেকে ৬ বছর লাগতে পারে। যেহেতু এমএস ও পিএইচডি একসাথে গ্র্যাজুয়েট স্কুলের অধীনে থাকে, তাই এই পর্যায়ের স্টুডেন্টরা সচরাচর “স্কুলে যাচ্ছি”, “স্কুল আজ বন্ধ” এরকম বাক্য ব্যবহার করে থাকে, যা অনভ্যস্ত বাংলাদেশী শ্রোতার কাছে হাস্যকর বোধ হতে পারে।
পিএইচডি’র সমপর্যায়ের আরো কিছু ডক্টরাল প্রোগ্রাম চালু আছে, যেমন Ed.D (Doctor of Education), Pharm. D. (Doctor of Pharmacy), M.D. (Doctor of Medicine) ইত্যাদি। এগুলো আলাদা প্রতিষ্ঠান যেমন মেডিকেল কলেজ, ফার্মেসি কলেজ ইত্যাদিতে করানো হতে পারে।
ডিগ্রির বিচারে পিএইচডি ও সমপর্যায়ভুক্ত ডিগ্রিসমূহের (এমডি, ফার্মডি ইত্যাদি) পরে আর কোন ডিগ্রি নেই। এ কারণে এটাকে “মোস্ট টার্মিনাল ডিগ্রি”ও বলা হয়।
পিএইচডি’র পরে
পিএইচডি বা সমপর্যায়ের কোন ডিগ্রি শেষ করে কেউ চাইলে আরো গবেষণা বা প্রফেশনাল ট্রেনিং নিতে পারেন। যেমন, কেউ পোস্ট-ডক্টরাল গবেষণা করতে পারেন, আবার একজন ডাক্তারকে প্র্যাকটিস করার অংশ হিসাবে বাধ্যতামূলক রেসিডেন্সি করতে হয়। এই পর্যায়ের কাজের জন্য কোন ডিগ্রি নির্ধারিত নেই।
বিভিন্ন ডিগ্রির পর্যায় নিয়ে উপরে আলোচনা হলো। এবার নীচের ছবি থেকে দেখে নিন SAT এবং GRE-GMAT পরীক্ষাগুলো আসলে কোন লেভেলের অ্যাডমিশনের জন্য দরকার হয়।