যে কোন ধরণের পরীক্ষায় ভালো স্কোর করার অন্যতম পূর্বশর্ত মানসিক চাপমুক্ত থাকা। সেজন্য চাই উপযুক্ত পরিকল্পনা। পরীক্ষার কোন ধাপে আপনার করণীয় কি হওয়া উচিত সে সম্পর্কে আগে থেকে অবগত থাকলে সহজেই নিজের পরিকল্পনা নিজে সাজিয়ে নেওয়া যায়।
১) পরীক্ষা এবং পরীক্ষার ধরণ সম্পর্কে আগেভাগে জেনে রাখা: পরীক্ষার আগে পরীক্ষার কাঠামো সম্পর্কে আরো একবার ঝালাই করে নেওয়া উচিত। কেননা এতে পরীক্ষায় আরো কৌশলী হতে সাহায্য করবে। প্রতি প্রশ্নের বিপরীতে কত মিনিট করে সময় নিবেন সে ব্যাপারে স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া যাবে।
২) কঠোর পরিশ্রম: গতানুগতিক কৌশলকে ঝেড়ে ফেলুন। প্রস্তুতি নিন নতুন সমস্যার মুখোমুখি হওয়ার। চেষ্টা করুন সমস্যাগুলোর ধরণ বুঝতে। পড়ার স্টাইলে পরিবর্তন করে সব ধরণের সমস্যা একত্রে মিশিয়ে সমাধান করার চেষ্টা করুন। হাতে যদি খুব বেশি সময় থাকে, বিভিন্ন উৎস (বই, ইন্টারনেট) থেকে প্রশ্ন বাছাই করে নিজেই নিজের প্রশ্নপত্র বানিয়ে অনুশীলন করতে পারেন।
৩) বেশি বেশি মডেল টেস্ট: যে কোন পরীক্ষায় নিজেকে প্রস্তুত করার সবচেয়ে ভালো উপায় মডেল টেস্টে অংশ গ্রহণ। হয়তো মডেল টেস্টের সব প্রশ্ন আপনার জানার মধ্যে থাকবে না। কিন্তু এই মডেল টেস্টই আত্নবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য টনিকের মতো কাজ করবে। সে কারনে নিজের আত্নবিশ্বাস বাড়াতে মডেল টেস্টের বিকল্প নেই।
৪) ভুলের যুক্তি খন্ডন: অনুশীলনের পাশাপাশি যে সব প্রশ্নের উত্তর আপনি নিজে নিজে করতে ব্যর্থ হয়েছেন সেগুলো নিয়ে পর্যালোচনা করা উচিত। এতে করে আপনার অ্যানলাইজিং পাওয়ার বৃদ্ধি পাবে। সেই সাথে মানসিক দৃঢ়তা বাড়বে। পরীক্ষায় নতুন সমস্যা মোকাবেলা করার সক্ষমতা বাড়বে।
৫) অন্যের সাথে তুলনা না করা: মনে রাখা ভালো জিআরই পরীক্ষা আপনার সাথে কম্পিউটারের প্রতিযোগিতা। বন্ধুর সাথে না। তাই কোন বন্ধু কতো স্কোর করলো, বেশি বা কম পেলো সে বিষয়ে মনো:সংযোগ না করাই ভালো। অনেক সময় তুলনা করার কারনে আপনার মনো:সংযোগ বিঘ্নিত হতে পারে। অনেক বেশি চাপ অনুভব করতে পারেন। সর্বপরি যা আপনার জন্য হিতে বিপরীত হয়ে কাজ করতে পারে।
১) পরীক্ষাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেওয়া: পরীক্ষাকে ভয়ের কোন কারন হিসেবে বিবেচনা করা অনুচিত। মনে করুন এটা এক ধরণের চ্যালেঞ্জ বা প্রতিযোগিতা। কেননা প্রতিযোগিতা অনেক উৎসাহপূর্ণ কাজ, বন্ধু এবং পারিবারিক জীবনে যা আমরা সব সময়ই নিয়ে থাকি। তাই মনে করেন এই পরীক্ষাকে আপনার বন্ধুর ছুড়ে দেওয়া চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে পারেন। মনোবিজ্ঞানীদের মতে বন্ধুর চ্যালেঞ্জ মানুষকে সত্যিকার অর্থেই উদ্দ্যেগী হতে সহায়তা করে। অধ্যয়ণের দিকে মনোযোগী করবে এবং স্মার্টভাবে কাজ করতে অনুপ্রেরণা দিবে।
২) পারফেক্ট না হওয়া: পারফেক্ট হওয়ার চেষ্টা করা সব সময় ভালো ফলাফল বনে আনতে পারে না। আপনার উচিত হবে না পরীক্ষায় সব প্রশ্ন পারবেন এরকম ধারণা রাখা। বরং আপনার ধরে নেওয়া উচিত জিআরই পরীক্ষায় এমন কিছু প্রশ্ন আসবে যা আপনি উত্তর করতে পারবেন না। কেননা কঠিন কোন সমস্যা আপনি সমাধান করতে গেলে আপনার অন্য সমস্যা সমাধান করার জন্য বরাদ্দকৃত সময় হয়তো চলে যেতে পারে। যা আপনাকে মানসিকভাবে আরো চাপে ফেলতে পারে। এজন্য স্বাভাবিকের তুলনায় কঠিন প্রশ্ন আসলে খুশি মনেই তা বাদ দিয়ে অন্যদিকে মনোনিবেশ করা উচিত।
৩) ভুল নিয়ে না ভাবা: সব সময় একটি প্রশ্ন একবারে শেষ করার চেষ্টা করা উচিত। যদি আপনি কোন প্রশ্নে একবার মনোনিবেশন করে ফেলেন; তাহলে সেই প্রশ্নে আপনার সমস্ত মনোযোগ দিয়ে চেষ্টা করা শ্রেয়। অনেক সময় পরীক্ষার মধ্যেই অনেকে আগের প্রশ্নে নিজের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ভুল নিয়ে ভাবতে শুরু করে। যা মাথার উপর বাড়তি চাপ তৈরির জন্য যথেষ্ট। সে কারনে মনে রাখা ভালো জিআরই সম্পূর্ণ পরীক্ষাই কম্পিউটার ভিত্তিক পরীক্ষা। যে কোন সেকশন শেষ করে সাবমিট করার আগে আপনি যতবার ইচ্ছা রিভিউ করার সুযোগ পাবেন।
৪) চাই ভালো ঘুম: পরীক্ষার দিন নিজের ১০০ ভাগ উজার করে দিতে না পারার অন্যতম কারন রাতে পরিপূর্ণ ঘুম না হওয়া। মানসিকভাবে চাঙ্গা থাকতে পরীক্ষার আগের রাতে ৭-৮ ঘন্টা ঘুমানো উচিত। রাত জাগার অভ্যাস পুরোপুরি বাদ দিতে হবে। কোন কারনে রাত জাগাতে হলে আপনাকে পেছনে হিসেব করে দেখতে হবে পরীক্ষা সময়ের আগ পর্যন্ত ঘুমের পরিপূর্ণতা দেওয়া সম্ভব কিনা।
৫) খেতে হবে সচেতনভাবে : পরীক্ষার ভেন্যুতে যাওয়ার আগে অবশ্যই ভালমন্দ খাওয়া-দাওয়া করা উচিত। তবে খাবারের দিকে একটু খেয়াল রাখতে হবে। খেতে হবে কম চর্বিযুক্ত প্রোটিন; যেমন-ডিম, দুধ, জলসানো মুরগি বা মাছ ইত্যাদি। রওনা দেওয়ার ঘন্টা খানেক আগে সম্ভব হলে সতেজ ফলমূল খাওয়া উচিত। পরীক্ষায় আপনার মন এবং মনোসংযোগ ধরে রাখার জন্য টনিকের মতো কাজ করবে। তবে খেয়াল রাখতে চর্বিযুক্ত খাবারের ব্যাপারে। এ ধরণের খাবার আপনার মাঝে ঝিমুনী তৈরি করত পারে। অন্যদিকে সিগারেট এবং চা-কফির মতো উচ্চ চিনিযুক্ত পানীয় আপনার মাঝে উদ্বিগ্নতার ভাব এনে দিতে পারে। সে কারনে এগুলো পরিহার করাই শ্রেয।
৬) পরীক্ষার আগে আর নয় আলোচনা: পরীক্ষার হলে চাই সময় মতো উপস্থিতি। সময় মতো মানে খুব বেশি আগে কিংবা পরে না। অনেক সময় দেখা যায় বেশি মাত্রার সচেতনতার দরূণ অনেক স্টুডেন্ট পরীক্ষা শুরু ২-৩ ঘন্টা আগে চলে আসে। বন্ধুদের সাথে আলোচনা শুরু করে এবং উদ্বগ্নিতার মাত্রা বেড়ে যায় কয়েকগুণ।অ্ন্যদিকে দেরি করে আসলেও মানসিক চাপ তৈরি হতে পারে, পরীক্ষার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
৭) খসড়া কাগজের সঠিক ব্যবহার: জিআরই ভার্বাল অংশের জন্য খসড়ার তেমন দরকার না হলেও গাণিতিক অংশে অবশ্যই দরকার হবে। পরীক্ষার শুরু হবার আগেই টেস্ট সেন্টার থেকে আপনাকে খসড়া কাগজ প্রদান করা হবে। কাজের সুবিধার জন্য রিডিং কম্প্রিহিনশন অংশের জন্য নোট নিতে পারেন। ভুল এড়িয়ে সঠিকভাবে সিদ্বান্ত নেওয়ার জন্য কাজে আসবে। এভাবে মানসিক চাপ সহজেই এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব।
৮) সঠিক জায়গায় ক্যালকুলেটর ব্যবহার: গাণিতিক অংশে পরীক্ষায় অন-স্ক্রিণ ক্যালকুলেটর থাকবে। বড় ধরণের হিসাব নিকাশে সময় মতো ব্যবহার করা উচিত। সময় বাঁচবে, ভুল হবার সম্ভাবনা কমে যাবে, মানসিক চাপের ব্যাপারটি কম কাজ করবে।
৯) সত্যতা যাচাই করা: ভালো স্কোর পাবার জন্য রিভিউ বা উত্তরের পরে আবার যাচাই করে দেখা যে কোন পরীক্ষার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় সঠিক উত্তর করার পরও মনের মধ্যে খুঁতখুঁতে ভাব থাকার কারনে হয়েছি কি হয়নি এ ব্যাপারে সিদ্বান্তহীনতায় কাজ করে, যা পরীক্ষায় মানসিক চাপ তৈরির জন্য অন্যতম কারন।