অনেকের ক্ষেত্রেই ব্যক্তিগত বা চাকুরির প্রয়োজনে একাডেমিক জীবনে বিরতি দেবার প্রয়োজন হয়। পড়ালেখায় বিরতি দিলেও বয়েস থেমে থাকে না, তাই দেখা যায় অন্য সবার চেয়ে একটু বেশি বয়েসে জিআরই বা হায়ারস্টাডির পরিকল্পনা শুরু করতে হচ্ছে। আমেরিকান ইউনিভার্সিটিগুলোতে আবেদনের সময় বেশি বয়েস বা স্টাডি গ্যাপ কেমন প্রভাব ফেলতে পারে তা নিয়ে এই আর্টিকেলে আলোচনা করেছি।
স্টাডি গ্যাপ কোন সমস্যাই না
আপনি যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার আগে দুই এক বছর বিরতি দিয়ে থাকেন (যেমন, প্রথমবারের চেষ্টায় ভালো কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ম্যানেজ হলো না, পরের বার ভর্তি হতে পারলেন), তাহলে তার রেকর্ড আদৌ কোথাও কোন কাজে ব্যবহৃত হবে না। কেবল একমাত্র “সমস্যা” হবে অনার্স লেভেলের সহপাঠিদের সাথে অ্যাডজাস্ট করা। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সহপাঠী যে বয়েসে বেশ বড় বা ছোট হতে পারে তা স্বাভাবিক ভাবে গ্রহণ করার সংষ্কৃতি গড়ে ওঠার সাথে এই সমস্যাটিও দূর হয়ে যাবে।
যদি আপনি ব্যাচেলর বা এমএস শেষ করার পরে চাকুরিতে ঢুকে পড়েন অথবা অন্য কোন কারণে গ্যাপ নিয়ে থাকেন তাহলেও তা কোন সমস্যা সৃষ্টি করবে না। কিন্তু এই বিরতির সময়ে আপনি যা করেছেন তা খুব সুন্দর করে এসওপি’র মধ্যে পরিবেশন করতে হবে। অ্যাডমিশন কমিটিকে বোঝাতে হবে যে আপনার এই পাঠবিরতিকালীন সময়ে আসলে আপনি পেশাদারী ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন করেছেন, আপনার মধ্যে নেতৃত্ব আর টিমওয়ার্ক গুণাবলী গড়ে উঠেছে। অর্থাৎ এমন ভাবে লিখবেন যাতে মনে হয় একজন ফ্রেশ ব্যাচেলরের চেয়ে গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্ট হিসাবে আপনি বরং অনেক বেশি পরিপক্ক। যাদের প্রথম বারের চেষ্টায় আমেরিকান গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে ফান্ডেড অ্যাডমিশন ম্যানেজ হয়নি তারা অবশ্যই এটা সদ্ব্যবহার করবেন, নীচের প্যারায় আরো বলছি।
সব চেয়ে ভালো হয়, যদি বিরতিকালীন সময়ে আপনি আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন অধ্যাপকের ল্যাবের সাথে যুক্ত থাকেন। সারা সপ্তাহ চাকুরি করলেন, আর ছুটির দিন বা মাঝে মধ্যে ল্যাবে এসে একটু কাজ করলেন। যেসব টেকনিক হাতে কলমে শিখবেন, তার প্রত্যেকটা এসওপি সহ প্রফেসরদের পাঠানো ইমেইলে উল্লেখ করবেন।
যদি অনার্সের কোন সেমিস্টারের পর (ডিগ্রি হাতে পাবার আগে) লম্বা বিরতি পড়ে, তাহলেও সেটা নিয়ে দু:শ্চিন্তা করার কিছু নেই। মাতৃত্বকালীন প্রয়োজন, অর্থের যোগান, অসুস্থ্যতা বা অন্য যে কোন কারণে এরকম হতেই পারে, তা অ্যাডমিশন কমিটি ভালো করেই জানে। আর এটা ট্রান্সক্রিপ্টে উল্লেখ না থাকলে বিবেচনাতেই আনার দরকার নেই।
বয়েস কি উচ্চশিক্ষার বাধা?
২০০৮ সালে টেক্সাস টেক ইউনিভার্সিটিতে আমার পিএইচডি শুরু হবার পরের বছরেই নায়না বেকম্যান নামে একটা মেয়ে আমাদের প্রোগ্রামে যোগ দেয়। নায়নার জন্ম ১৯৬৪ সালে, মানে বাংলাদেশের জন্মেরও ৭ বছর আগে। দীর্ঘদিন নার্স হিসাবে প্র্যাকটিস করার পর নায়নার মনে হলো এবার গবেষণায় আসা দরকার। গতানুগতিক ধ্যান ধারণায় বেড়ে ওঠা আমার জন্য নায়নার ঘটনাটি যেন অন্তর্চক্ষু খুলে দেবার মতো কিছু একটা ছিল। যারা এর পর আমাকে বেশি বয়েসে জিআরই শুরু করার বিষয়ে প্রশ্ন করতো, আমি তাদেরকেই ৪৬ বছর বয়েসে পিএইচডি শুরু করা এই মেয়ের গল্প বলতাম। নায়না পারলে আমরা কেন পারবো না?
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আরো কিছু পিছুটান আছে, যা অবশ্য বিবেচনায় রাখতে হবে। বেশি বয়েসের সাথে বড় হয়ে যাওয়া সন্তানের সম্পর্কটাও জড়িত। একদম ছোট বাচ্চা নিয়ে নতুন জায়গায় চলে আসা যতটা সহজ, স্কুলে পড়ুয়া বাচ্চাকে নতুন পরিবেশে এনে অ্যাডজাস্ট করানো, স্ত্রী চাকুরিরত থাকলে তাকেও নিয়ে আসা ইত্যাদি সবকিছু আসলে অতটা সহজ না। যাই হোক, এগুলো অতিক্রম করতে পারলে, শুধু বয়েসের প্রশ্নে আপনাকে মাথার মধ্যে ঢুকিয়ে রাখতে হবেঃ No, it’s never too late to start preparing for US graduate studies.
বয়েস বা বিরতি বাধা পোস্ট ডক গবেষণায়
এটা বিভিন্ন প্রফেসরের সাথে কথা বলে জানা আমার অভিজ্ঞতা। আমার নিজের যেহেতু পোস্ট ডক নেবার অভিজ্ঞতা নেই, প্রত্যক্ষভাবে বয়ষ্ক পোস্ট ডক কিভাবে হ্যান্ডল করতে হয় আমি জানি না। বিভিন্ন জনের কাছ থেকে শুনে যা বুঝেছি, প্রফেসররা ফ্রেশ পিএইচডিদেরকে যতটা সহজে নিতে চান, অন্য কোথাও দীর্ঘদিন চাকুরি করে আসা অথবা অন্য ল্যাবে ৪-৫ বছর পোস্ট ডক করে আসাদের ততটা নিতে আগ্রহী হন না। এর কারণ সম্ভবত, ওই পোস্টডক প্রফেসরের চেয়ে অনেক কিছু বেশি জানেন বলে মনে করেন বা নতুন টেকনিক শিখতে আগ্রহী হন না। সুতরাং জব খোঁজার পাশাপাশি পিএইচডি শেষ বর্ষেই পোস্ট ডক খোঁজা শুরু করা উচিত।
দেরিতে বিলম্ব বাড়ে
হয়ত ভাবছেন, দেরি করে ফেলেছি – আমাকে দিয়ে আসলে ওসব হবে না। কিন্তু আপনার আদৌ জানা নেই, আপনার চেয়ে হয়ত অনেক দেরিতে অনেকে শুরু করে অনেকখানি এগিয়ে গেছে। কাজেই, অতীতে হয়ে যাওয়া বিলম্বের জন্য হাত গুটিয়ে বসে না থেকে উঠে দাঁড়ান এবং নতুন ভাবে সব শুরু করুন। মনে রাখবেন, আমাদের দেশীয় লেখাপড়ার সংষ্কৃতি আমাদের পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য পুরোপুরি সহায়ক না। তাই উদাহরণ খুঁজে না পেলে নিজেকেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করে এগিয়ে যেতে হয়।
শুভ কামনা রইলো