জিআরই, আয়েল্টস, এসএটি এরকম সব পরীক্ষার ক্ষেত্রেই সবচেয়ে সহজ ধাপ হলো “প্রস্তুতি শুরু করা” এবং কঠিনতম ধাপ হলো সেই প্রস্তুতির ধারাবাহিকতা “ধরে রাখা”। অনেক স্টুডেন্টকে দেখা যায়, মাসের পর মাস কেবল জিআরই প্রস্তুতির প্রস্তুতি নিচ্ছে। তার মানে হচ্ছে নীলক্ষেতে গিয়ে কয়েকটা বই কেনা অথবা গ্রেকের ওয়েবসাইট থেকে আর্টিকেলগুলো এক বসায় পড়ে ফেলার প্রস্তুতি নিচ্ছে, কিন্তু সেই শুভক্ষণ আর আসছে না। বলাই বাহুল্য, আপনি মাসের পর মাস আলসেমিতে বসে থাকতে পারেন, তবে সময় কিন্তু তার নিজের গতিতে বয়ে যাবে। জিআরই’র মতো একটি কঠিন পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করে ধারাবাহিকতা ধরে রাখা এবং নিজের অগ্রগতিকে ভালো করে তদারকি করা গুরুত্বপূর্ণ। এই আর্টিকেলে কয়েকটা সহজ কিন্তু অত্যন্ত কার্যকরী কৌশলের কথা বলবো, যা হয়ত আপনাকে প্রস্তুতির ধারাবাহিক ট্র্যাকে ধরে রাখতে সাহায্য করবে।
সবার আগে, প্রজেক্ট মাস্টার ফাইল
প্রজেক্ট মাস্টার ফাইল মানে হলো মাইক্রোসফট এক্সেল বা গুগল স্প্রেডশীটের মধ্যে লিখে ফেলা সময়ের বিপরীতে কোন পর্যায়ে আপনি কোন ধাপটি অতিক্রম করতে চান। নীচে এরকম একটা ছবি দেওয়া হলো, যেখানে কোন স্টুডেন্ট চার মাস (১২০ দিন) সময়ে কিভাবে প্রস্তুতি সারবেন তা দেখা যাচ্ছে। কলামগুলোতে মাস, সপ্তাহ বা আরো ছোট একক হিসাবে দিন রাখতে পারেন, এবং সারিগুলোতে প্রধান ধাপ যেমন Procurement বা দরকারী ম্যাটেরিয়াল সংগ্রহ করা (1-2 দিন), Classical approach (দিনে ৩০ টি নতুন শব্দ শেখা, ২০ টি ম্যাথ ও ২০ টি ভার্বাল প্র্যাকটিস), তিন মাস শেষে অ্যাডভান্সড অ্যাপ্রোচ (রাইটিং যোগ হবে) এবং তারপর মডেল টেস্ট এর জন্য 7-10 দিন রাখার তথ্য থাকবে।
প্রজেক্ট মাস্টার ফাইল প্রিন্ট করে পড়ার টেবিলে চোখের সামনে রাখুন, যাতে ভুলে না যান যে আপনি একটি চলমান ট্রেইনে বসে আছেন, যেখান থেকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট স্টেশনে পৌঁছে পরের গাড়ি ধরতে হবে।
ভোকাবুলারি অল্প করে হলেও নিয়মিত শিখুন
গ্রেক থেকে আমরা বলে থাকি, দিনে ৩০ টি করে শব্দ শিখতে। অনেকটা মজা করেই বলা হয়ে থাকে, তিন বেলা খাওয়ার আগে ও পরে মাত্র ৫টি করে শব্দ শিখলেই দৈনিক পুষ্টির টার্গেট পূরণ হবে। ৩০ টির বেশি শিখতে পারলে ভালো, কিন্তু কোন মতেই যেন ২০ এর নীচে না নামে এরকম একটা লক্ষ্য রাখতে হবে। দৈনিক পড়ালেখার অগ্রগতি মনিটর করার অংশ হিসাবে একটি গ্রাফের এক্স অক্ষ বরাবর দিনের সংখ্যা আর ওয়াই অক্ষ বরাবর ২০ ও ৩০ তম কোঅর্ডিনেটে নীচের ছবির মতো দাগ টানুন। তারপর প্রতিদিন ঘুমাতে যাবার আগে ওই দিন কতগুলো নতুন শব্দ শিখেছেন তার সংখ্যা সততার সাথে গ্রাফে বসান। যদি কোন দিন একটা শব্দও শেখা না হয় তাহলে গ্রাফে তাও চিহ্নিত করুন। শুরুতে বিষয়টা ছেলেমানুষী মনে হতে পারে, কিন্তু মাস শেষে এই গ্রাফই আপনাকে জানান দেবে আপনি সঠিক পথে আছেন নাকি ছিটকে পড়েছেন। আর যদি কোন কারণ দুই এক সপ্তাহ পরে হাল ছেড়ে দেন তাহলে এই অসম্পূর্ণ গ্রাফই আপনাকে মনে করিয়ে দেবে কিছুদিন আগেও আপনি কী অসম্ভব উৎসাহ নিয়ে পড়া শুরু করেছিলেন। তাছাড়া, নিয়মিত অনুশীলনে যেহেতু পড়ালেখার চাপ গ্রহণে অভ্যস্ততা আসে, তাই তৃতীয় মাসের দৈনিক শব্দ শেখার পরিমাণ প্রথম মাস থেকে কতটা বেশি হচ্ছে তা পাশাপাশি এই দুই গ্রাফ দেখেই বের করতে পারবেন।
ফেইসবুক ও সামাজিক মিডিয়া সীমিত করে ফেলুন
এটা সত্য যে, ফেইসবুকে অনেক স্টাডি গ্রুপ থেকে দরকারী তথ্য পাওয়া যায়, কিন্তু খুব সহজেই ফেইসবুকে দরকারী পোস্টের চেয়ে অদরকারী ও ডিসট্র্যাকটিভ পোস্টের মধ্যে গিয়ে মূল্যবান সময় অপচয়ের ঘটনাও অনেক ঘটে। তাই একটি ব্যক্তিগত টার্গেট রাখুন যে দিনের কেবল একটি নির্দিষ্ট সময়েই (যেমন, রাত ৮.৩০ মিনিট) নির্দিষ্ট সময়ের জন্য (১ ঘন্টা) ফেইসবুকে যাবেন এবং কেবলমাত্র দরকারী কাজ সেরে চলে আসবেন। দরকারী কাজের মধ্যে লক্ষ্য রাখুন মানুষ বিভিন্ন কেইস (যেমন রেজিস্ট্রেশন ঝামেলা, পাসপোর্ট বিড়ম্বনা ইত্যাদি) সমাধান করেন কিভাবে। চাইলে নিজেও প্রশ্ন পোস্ট করতে পারেন, তবে সেক্ষেত্রে ফলো আপ করার জন্য একটু পর পর ফেসবুকে ঢুঁ মারার তাগাদা আসতে পারে। এধরণের মানসিক তাড়না শক্ত হাতে দমন করতে হবে।
অন্যদের অগ্রগতির সাপেক্ষে নিজেরটি পরিমাপ করুন
একা একা পড়ার চেয়ে কয়েকজন মিলে গ্রুপে পড়ালেখা করা অনেক ভালো। সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো নিজ থেকে তাগাদা না পেয়ে পিছিয়ে গেলে অন্যদের দেখাদেখি আবার তা ফিরে আসে। যদি আপনার এরকম কোন স্টাডি পার্টনার বা গ্রুপ না থাকে তাহলে আপনার মতো একই সময়ে শুরু করা অন্যদের সাথে কথা বলে তাদের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন, অধিকাংশ স্টুডেন্ট টানা এক মাসের বেশি জিআরই পড়ার আগ্রহ ধরে রাখতে পারে না এবং সেজন্য কেবল শক্ত মনোবলই না, কঠিন অনুপ্রেরণারও দরকার হয়। অগাস্ট মাসের সেমিস্টার ধরা যাবে না যদি ডিসেম্বরের মধ্যে জিআরই দেওয়া না হয় -এরকম চাপ নিজের মধ্যে সৃষ্টি করুন। অন্যরা কোন বই অনুসরণ করছে এবং গড়ে প্রতিদিন কতটুকু পড়ছে তার সাথে নিজের পড়ালেখা তুলনা করে অগ্রগতি ঠিক পথে যাচ্ছে কি না ধারণা পেতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে, যাদের সাথে নিজেকে তুলনা করছেন তারা যেন পড়ালেখায় সিরিয়াস হয়।
আগের চেয়ে বেশি চাপ বহনের সামর্থ্য
শরীর চর্চা শুরুর পর যেমন প্রথম দিকে খুব দুর্বল লাগে এবং যতই সময় যায় ভার বহনের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, আমাদের মস্তিষ্কও তেমনি নিয়মিত চর্চার ফলে ধীরে ধীরে বেশি তথ্য সংরক্ষণ ও প্রসেস করার ক্ষমতা অর্জন করে। আপনি নিজেই এই পার্থক্য বুঝতে পারবেন। যদি আপনি সঠিক নিয়মে বিরতিহীন প্রস্তুতি নিতে থাকেন তাহলে নিজেই বুঝতে পারবেন যে এক সময় যেখানে ১০ টি শব্দ মুখস্থ করার জন্য ১ ঘন্টা সময় লাগতো, এখন হয়ত একই রকম নতুন ১০টি শব্দ মাত্র ২০ মিনিটেই দখলে চলে আসছে। অনীহা আর অল্পেই ক্লান্তি এগুলোও সময়ের সাথে কমতে থাকবে।
উৎসাহ ও আনন্দ ধরে রাখা
জিআরই-জিম্যাট এগুলো আর দশটা পরীক্ষার মতোই একটা পরীক্ষা মাত্র, আর আপনি একজন রক্ত মাংসের মানুষ, যার যে কোন কাজ সঠিক ভাবে করার জন্য ভেতর থেকে উদ্দীপনা আসা দরকার। পড়ালেখা নিয়ে বাড়াবাড়ি যেন আপনার স্বাভাবিক আনন্দ নিয়ে পড়াশোনার ক্ষতি না করে সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। দিনে ৩০টির মতো শব্দ শিখেই থামুন, আগেরগুলো রিভিশন দিন। একদিনে সব পড়ে উল্টে দেবার দরকার নেই। বরং যা পড়েছেন সেখান থেকে যতটা পারা যায় আনন্দ নেবার চেষ্টা করুন। ফেইসবুকে বিভিন্ন গ্রুপে জিআরই প্র্যাকটিস হয়, সেখানে বিভিন্ন প্রবলেম সমাধানের চেষ্টা করুন। উত্তর সঠিক করার এবং অন্যকে শেখানোর আনন্দ উপভোগ করুন। নতুন যারা পড়া শুরু করছে তাদেরকে নিজের অভিজ্ঞতালব্ধ পরামর্শ দিন।