যেকোন পরীক্ষার বাস্তব অভিজ্ঞতা শুনে, সে অনুযায়ী নিজের প্রস্তুতি এবং স্ট্র্যাটিজি সাজালে ভালো একটি স্কোর করতে সহজ হয়। তবে ইংরেজি ভাষাগত দক্ষতা যাচাইয়ের পরীক্ষা আয়েল্টস, দেশের অনেক শিক্ষার্থীই এই এক্সামে অংশ নিলেও বাস্তব অভিজ্ঞতার জন্য বিভিন্ন ফেসবুক পেজ এবং গ্রুপে ঘুরেও পাওয়া যায় না তেমন কোন তথ্য। ফলে এলাহি ভরসা বলে শুরু করতে হয় IELTS প্রিপারেশন এবং কারও কাছে এসময় সাহায্য চাইলেও প্রয়োজনীয় সাহায্য মেলা ভার। তাই আমার এক্সাম দেয়ার অভিজ্ঞতা ও কৌশল শেয়ার করছি। আশা করছি সবার কাজে লাগবে।

IELTS:

Date, Time: 13 October, 2016, 01.00 P.M.

Venue: Marriott Convention Center (British Council), Besides Dhaka City College.

Overall Band Score: 7 (L: 7.5, R: 6.5, W: 6 & S: 7)

যেভাবে প্রিপারেশন নিয়েছিলামঃ

বাইরে যাবার ক্ষেত্রে ল্যাঙ্গুয়েজ টেস্ট একটি জরুরী বিষয়। তাই গত অক্টোবর মাসে আয়েল্টস পরীক্ষা দিয়েছি। আমি পরীক্ষার ৩-৪ মাস আগে থেকে প্রিপারেশন নেয়া শুরু করেছিলাম। আমার পুরো প্রস্তুতির পথই ছিল নিজে নিজে। এর মধ্যে কিছু প্রচলিত বইয়ের পাশাপাশি সাহায্য নিয়েছি অনলাইন বিভিন্ন গ্রুপ থেকে। এসময় আয়েল্টস পরীক্ষার চারটি সেকশনের জন্য আলাদা ভাবে প্রস্তুতি নিতে হয়েছে।

কিভাবে প্রত্যেকটি পার্ট এর প্রস্ততি নিয়েছিলাম তা নীচে আলাদাভাবে ব্যাখা করেছি।

যা যা পড়েছি:

  1. Cambridge IELTS Series (1-11)
  2. Mentor’s (Reading, Writing, Listening, Speaking)
সেকশন ভিত্তিক প্রস্তুতি পর্বের আলোচনা এবং কিছু টিপস্:

১. লিসেনিং:

এই সেকশনকে বলা হয় আয়েল্টসের সবচেয়ে সহজ পার্ট। সাধারণত স্টুডেন্টরা এই সেকশনেই সবচেয়ে ভালো করে। তবে আয়েল্টস এক্সামের প্রত্যেকটি সেকশনের মতো এই সেকশনও কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হয়, যাতে করে 7+ স্কোর তোলা যায়।

এখানে, সর্বপ্রথম যে কৌশল অনুসরণ করতে হয় তাহলো Key-word মার্ক করা। যারা আয়েল্টস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা ইতোমধ্যেই হয়তো জানেন যে, এই এক্সামে রিডিং সেকশন এ Key-word মার্ক করে Answer খুঁজে বের করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু অনেকেই জানেন না যে এটি এই সেকশনেও ব্যবহার করা যায়। লিসেনিং এ যখন প্রশ্ন পড়তে দেয়ার সময় দেয়া হয়, তখনি প্রত্যেকটি প্রশ্নের Key-word মার্ক করা বাঞ্ছনীয়। কারন অনেক সময়ই দেখা যায় যে, লিসেনিংয়ের সংলাপসমূহ এতো তাড়াতাড়ি বলা হয় যে বুঝা যায় না প্রশ্নের উত্তর কি হবে। সে কারনে যদি Key-word মার্ক করা থাকে তাহলে শুধু সেই শব্দগুলো কে অনুসরণ করে উত্তর দেয়া যায়।

যারা আয়েল্টন প্রিপারেশনের ক্ষেত্রে নতুন তাদের জন্য বলা, একটি Key-word হলো এমন একটি ওয়ার্ড, যার মাধ্যমে একটি বাক্যের মূলভাব প্রকাশ হয়। একটি বাক্যে সর্বোচ্চ ৩টি Key-word মার্ক করতে হয়। এছাড়াও লিসেনিং এ ভাল করার জন্য প্রচুর English Movie, TV Series দেখা জরুরি।

ব্যক্তিগতভাবে আমি Cambridge এর বই অনুশীলন করার পাশাপাশি English Movie, TV Series দেখতাম। অনেকে যদিও আমাকে বলেছিল BBC News দেখার প্রাকটিস করতে। কিন্ত আমি এটা দেখে চর্চা করে আনন্দ পেতাম না। তবে এটা করে লিসেনিং প্রাকটিস করাটা অবশ্যই ভালো। আমার এই সেকশনে সর্বোচ্চ স্কোর (7.5) উঠেছিলো।

২. রিডিং:

এরপর যে সেকশনটির উত্তর দিতে হয় তাহলো- রিডিং। এ সেকশনটিকে বলা হয়, আয়েল্টসের সবচেয়ে একটি কঠিন পার্ট। তবে ভয়ের কিছু নেই। কারন, নিয়মিত অনুশীলন করলে এ সেকশনেও ভালো স্কোর তোলা সম্ভব।

আমি Cambridge এর 1-11 এর সব টেস্ট অনুশীলন করেছিলাম। তবে আমি লিসেনিং, রিডিং, স্পিকিং ও রাইটিং আর ক্ষেত্রে একটি কৌশল অনুসরণ করেছিলাম। আমি প্রতিদিন যে খুব বেশি করে এই চারটি সেকশন প্রাকটিস করতাম তা নয়। আমি daily Cambridge এর একটি টেস্ট শেষ করতাম। এর বেশি নয়।

কারন, আমি মনে করতাম একদিন এক সাথে কয়েকটা টেস্ট শেষ করে মাঝখানে কয়েকদিন প্রাকটিস না করে আবার একদিন বসে প্রাকটিস করলে সেক্ষেত্রে ধারাবাহিকতার Flow থাকে না। আর রিডিংয়ের সময় আমি সঠিকভাবে স্ট্র্যাটিজি ফলো করার চেষ্টা করতাম।

যেমনঃ Passage 1 এর জন্য ১৫- ১৭ মিনিট, Passage 2 এর জন্য ২০ মিনিট আর Passage 3 এ ২৩- ২৫ মিনিটে শেষ করা, কখনও সবার আগে Passage না পড়া, আগেই প্রশ্নে চলে যাওয়া এবং Key-word মার্ক করা, একটি প্রশ্নে ৩টির বেশি Key-word মার্ক না করা (এতে ভুলে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে) ইত্যাদি।

৩. রাইটিং:

আয়েল্টস রাইটিং সেকশনের ক্ষেত্রে আমি প্রাকটিসের পাশাপাশি যে কাজটা করেছিলাম তাহলো, Sample Book পড়া। আয়েল্টসের রাইটিংয়ের জন্য প্রচুর বই আছে। আমি নিয়মিত Sample Book এর Writing Task-1 এবং Writing Task-2 এর উদাহরণ পড়তাম। যা ভালো স্কোর তুলতে সাহায্য করেছে।

Writing Task- 1 এবং 2 লেখা শুরুর পূর্বেই ঠাণ্ডা মাথায় ৫ মিনিট সময় নিয়ে চিন্তা করে নিতাম। শুনেছিলাম, পূর্ব পরিকল্পনা বা চিন্তা ব্যতীত এই সেকশনে লেখা শুরু করলে খেই হারিয়ে ফেলাটাই স্বাভাবিক। তাই লেখা শুরুর আগে কয়েকটি বিষয়ের উপরও খেয়াল রাখতে হয়।

যে ৪টি Criteria এর উপর ভিত্তি করে আয়েল্টস পরীক্ষার Task 1 এবং Task 2 এর নাম্বার নির্ভর করে তার মধ্যে সর্বপ্রথম- Task Achievement (for Task 1), Task Response (for Task 2)। Task 1 এ Graph এর Key Feature গুলো Introduction অংশে দিতে হয় অর্থাৎ শুরুতেই পরিষ্কার একটি ধারনা দেওয়া। এছাড়াও Grammatical Range and Accuracy এর উপর ২৫% মার্কস থাকে। এক্ষেত্রে লেখার মাঝে Complex Sentence (Who, Which, What, That, How ইত্যাদি WH-words দিয়ে যেসব Sentence তৈরি করা হয়) ব্যবহার করতে পেরেছে কিনা তাও যাচাই করা হয়।

রাইটিং সেকশনের Sample হিসেবে উপরে উল্লেখিত বইগুলোর রাইটিংগুলোই পড়েছি। অন্য কিছু প্রাকটিস করার প্রয়োজন হয়নি।

৪. স্পিকিং:

এ সেকশনের প্রস্ততির জন্য চর্চার কোন বিকল্প নেই। নিয়মিত English Movie, TV Series দেখার পাশাপাশি Cambridge এর বইয়ের টেস্ট প্রতিদিন একটি করে প্রাকটিস করেছিলাম। পাশাপাশি আমার বন্ধুদের সাথেও কথা বলার চর্চা করতাম।

তবে বাংলাদেশে স্টুডেন্টদের মধ্যে স্পিকিং প্রাকটিস করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় যে সমস্যাটা লক্ষ্য করা যায় তাহলো English এ কথা বলার ক্ষেত্রে জড়তা। আমার এই ভয়টা কখনই ছিল না। এবং আমি স্টুডেন্টদেরকেও বলবো, এই ভয়কে কাটিয়ে ওঠা অত্যন্ত জরুরী।

কারন এই Skill’টি যে শুধুমাত্র আয়েল্টস এক্সামের জন্য জরুরী তাই নয়, Varsity Life, Job ইত্যাদি ক্ষেত্রেও Public Communication এর জন্য এই Skill’টি থাকা বাঞ্ছনীয়।

স্পিকিং সেকশনে ভালো স্কোর তোলার একটি বিশেষ উপায় হচ্ছে, Cue-Card নিজে নির্ধারণ করে সেই টপিকের উপর নিজেই নির্দিষ্ট সময় কথা বলে বা রেকর্ড করে পরবর্তীতে শুনে নিজের ভুল নিজেই বের করা। আর এই স্ট্র্যাটিজিটি আমার বেশ কিছু বন্ধুই অনুসরণ করতো। যদিও আমি এটি অনসুরণ করতে পারিনি।

আয়েল্টস স্পিকিংয়ের ক্ষেত্রে অনেক বেশি জরুরী হলো- Grammatical Error ছাড়া কথা বলা এবং Fluently (সাবলীলভাবে) কথা বলা। আর সাবলীল ইংলিশ স্পিকিংয়ে প্রাকটিস ব্যতীত অন্য কোন সহজ উপায় প্রকৃতপক্ষে নেই।

যা হোক, এই ছিল আমার আয়েল্টস প্রস্তুতির সময়কার অভিজ্ঞতা। সবার পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য শুভকামনা।
পরীক্ষার আগের রাত:

এক্সামের আগের রাতটা স্বাভাবিকভাবেই বেশ টেনশনের ছিল। রাতটা কেটে যায় নার্ভানেস নিয়েই। কিন্ত আমি বেশি রাত জাগতে চাইনি। কারন এক্সামের আগের রাতে তাড়াতাড়ি না ঘুমালে সকালে এক্সামে গেলে সমস্যায় পড়তেও পারি। আবার পরীক্ষার হলে মাথাটাও ঠাণ্ডা রাখতে হবে। তাই অল্প পড়েই বেশি রাত না করে ঘুমিয়ে পড়ি। এ রাতে একটি রিডিং টেস্ট আর একটি রাইটিংয়ের উদাহরণ প্রাকটিস করে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।

অবশেষে সকাল- এক্সাম ডে:

১৩ই অক্টোবর সকাল। আমার পরীক্ষার দিন। বলা হয়েছিল সাড়ে ১১টার মধ্যে পরীক্ষা স্থলে উপস্থিত থাকতে। তবে আমি ঠিক ১১ টায় চলে গিয়েছিলাম। গেট খুলেছিল সাড়ে ১১টার দিকে। আর সাড়ে ১২টার মধ্যে গেট বন্ধ করে দেয়া হলো। এক্সাম শুরু হয়েছিল দুপুর ১টায়।

তবে আয়েল্টস এক্সামের স্পিকিং সেকশনের পরীক্ষা অর্থাৎ ইন্টারভিউ এক্সাম ডে’তে না হয়ে বরং ৩- ৭ দিন আগে বা পরে হয়। তাই একটু ফিরে তাকাতে হবে ২ দিন আগে-

স্পিকিং:

পরীক্ষার দিন থেকে প্রায় ১ সপ্তাহ আগে থেকেই নিয়মিত ইমেইলে চোখ রাখতে শুরু করেছিলাম। কারন স্পিকিংয়ের ডেট ইমেইলে জানিয়ে দেয়া হয়। তাই রেগুলোর ইমেইল চেক করতে ভুল করিনি।

আমার স্পিকিং সেকশনটা ১১ অক্টোবর তারিখে হয়েছিল। যা আমার এক্সাম ডে থেকে ২ দিন আগে। এক্সাম ভেন্যু ছিল বনানীর Future BD। ইন্টারভিউয়ের সময় ছিল বেলা ১১টা। গিয়েছিলাম ১১ টার ভিতরেই। আর ইন্টারভিউয়ের জন্য ডেক পেয়েছিলাম বেলা ১টায়।

উফফ্!!! প্রথমে ভয়তো লেগেছিলই। কিন্ত ভাগ্য ভালো ছিল। আমার এক্সামিনার নেহাতই ভালো ছিলেন।

ভিতরে যাওয়ার পর স্যার Hello বলেই বসতে বললেন। তারপর স্বাভাবিকভাবেই Good Mood-এ সব কথা বললেন। আমিও সব আস্তে আস্তে উত্তর দিলাম। তবে এই সেকশনে Confidence মানে আত্মবিশ্বাস অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। 🙂

লিসেনিং:

১৩ অক্টোবর, এক্সাম ডে’এর শুরুতেই লিসেনিং সেকশন। এটি দিয়েই এক্সাম স্টার্ট হয় এবং আমার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হয়নি। আমার বেশিরভাগ প্রশ্নই ছিল MCQ। এজন্য আমার লিসেনিং সেকশনটি একটু Difficult মনে হয়েছিল। কিন্ত আমি চেষ্টা করি Strategy ফলো করে উত্তর দেয়ার।

রিডিং:

রিডিং সেকশনটি যদিও আমার কাছে সবচেয়ে Difficult পার্ট ছিল, তারপরও নিয়মিত প্রাকটিস করায় আশা ছিল যে ভালো স্কোর তুলতে পারব। আলহামদুলিল্লাহ! আশা ব্যর্থ হয়নি। রিডিং সেকশনের প্রশ্ন খুব বেশি সহজও হয়নি আবার খুব বেশি কঠিনও বলা যাবেনি। তবে প্রশ্ন পাবার আগে একটু ভয় লেগেছিল। প্রশ্ন পাবার পর ভয় কাটিয়ে নিজ স্ট্র্যাটিজি’তে ফোকাস রেখে চেষ্টা করেছি সময়ের মধ্যেই সব উত্তর করার।

রাইটিং:

এই সেকশনটির এক্সাম হয় সবার শেষে। সাধারণত, আমার Part 1’টি সবসময় Part 2 এর চেয়ে ভালো হতো। কিন্তু এক্সামে ঘটলো তার ঠিক উল্টো ঘটনা। আমার Part 1 এর প্রশ্নটি Part 2 এর চেয়ে একটু Tough মনে হলো। Part 1 এ পাই, কলাম এক সাথে এসেছিল। এই ধরনের Graph Explain করাটা একটু কঠিন মনে হয়। অন্যদিকে, Part 2’তে একটি Easy Topic এসেছিলো।যদিও নিয়ম হলো, ২০ মিনিটে Part 1 শেষ করতে হয়, আমি ৩০ মিনিটে সময় নিয়েছিলাম এই অংশে। আর বাকি সময়টুকুতে Part 2 শেষ করি।

মোটামুটি এই ছিল আমার অভিজ্ঞতায় আয়েল্টস পরীক্ষা। আমি আমার স্কোরে সন্তুষ্ট, যদিও আরও ভালো করার সুযোগ অবশ্যই ছিল।

সবার জন্য শুভকামনা রইল। ধন্যবাদ।

 

– জান্নাতুল আলম শিফা, শৌখিন লেখিকা