জিআরই, জিম্যাট, এসএটি, আয়েল্টস কিংবা টোফেল পরীক্ষার জন্য পরীক্ষার হলে অবশ্যই ভ্যালিড পাসপোর্ট সাথে থাকতে হয়। অনেক সময় পরীক্ষার কাছাকাছি সময়ে এসে পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে আসে, আবার অনেক সময় পাসপোর্টে সূক্ষ্ম ভুল থাকলে তা সংশোধন করিয়ে নিতে হয়। পাসপোর্ট যেহেতু একজন স্টাডি অ্যাব্রড অ্যাসপিরান্টসের জন্য একমাত্র পরিচয়বাহী ডকুমেন্টস, তাই দেশের বাইরে উচ্চ শিক্ষার জন্য পাসপোর্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

passport

সে যে কারনেই পাসপোর্ট রিনিউ করার প্রয়োজন হোক না কেন, পুরনো পাসপোর্টটি নতুন করে করানোর পূর্ণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে জেনে নিতে পারেন-

১. পাসপোর্ট রিনিউ ফর্ম সংগ্রহ এবং পূরণ:

পাসপোর্ট রিনিউ বা সংশোধনী ফর্মটি হচ্ছে- DIP form 2. এই ফর্মটি পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে কিংবা বাংলাদেশ সরকারের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া যাবে। অনলাইন থেকে ডাউনলোড করে ফর্মটি প্রিন্ট করে তা পূরণ করে নির্দিষ্ট পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে জমা দিতে হয়।

২. ফি এবং ব্যাংকে টাকা জমা:

পাসপোর্ট এর টাকা জমা দেওয়ার নির্ধারিত ব্যাংকে গিয়ে নির্ধারিতে স্লিপ সংগ্রহ করতে হয়। এরপর তা পূরণ করে ভ্যাট সহ ৩৪৫০ টাকা (মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে প্রতি বছরের জন্য ৩৪৫ টাকা জরিমানা আরেকটা আলাদা ব্যাংক স্লিপ নিয়ে) জমা দিতে হবে।

৩. যেসকল সাপোর্টিভ ডকুমেন্টস প্রয়োজন হবে:

নতুন করে পাসপোর্ট করতে ব্যাংকে টাকা জমা দেয়া এবং নির্ধারিত ফর্ম পূরণের পর ওই ফর্মের সাথে কিছু ডকুমেন্টস বা পেপার জমা দিতে হয়।

  • পুরনো পাসপোর্ট এবং এর সত্যায়িত কপি
  • জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) বা জন্ম নিবন্ধন (BIRTH CERTIFICATE) -এর সত্যায়িত কপি
  • ছবির কোন প্রয়োজন হয় না, তবে চাইলে লাগানো যেতে পারে
  • এছাড়াও যদি কোন ধরনের সংশোধনী থাকে তবে যে ধরনের সংশোধন আপনি করতে চাচ্ছেন তার প্রমাণস্বরূপ ডকুমেন্টস সাথে দিতে হবে। (যেমন, নাম সংশোধন করতে চাইলে একাডেমিক সার্টিফিকেট এবং জাতীয় পরিচয় ইত্যাদি)
বিদ্যমান মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের তথ্য পরিবর্তনের ক্ষেত্রে রি-ইস্যুর আবেদনের জন্য নিন্মরূপ কাগজপত্র প্রয়োজন:
ক্র:নং পরিবর্তনযোগ্য তথ্য কাগজপত্র
১. ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, উকিল, ড্রাইভার ইত্যাদি টেকনিক্যাল পেশা শিক্ষাগত/পেশাগত সনদ
২. নিজের নাম/পিতা/মাতার নাম আংশিক পরিবর্তন পিএসসি/জেএসসি/এসএসসি সনদ বা প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক প্রদত্ত হলফনামার সাথে মিল রেখে সংশোধিত জাতীয় পরিচয়পত্র/ জন্মনিবন্ধন সনদ।
৩. নিজের নাম/পিতা/মাতার নাম পূর্ণাঙ্গ পরিবর্তন (এরূপ ক্ষেত্রে প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদনের পর পাসপোর্ট ইস্যু করা হবে) (১) পিএসসি/ জেএসসি/ এসএসসি সনদ। শিক্ষাগত সনদ না থাকলে প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক প্রদত্ত হলফনামা।(২) পুলিশ প্রতিবেদন (এর জন্য পূরণকৃত ১ কপি রি-ইস্যু ফরম ও ১ কপি সত্যায়িত নতুন আবেদন ফরম-ডিআইপি ফরম-১)।
৪. বৈবাহিক অবস্থা পরিবর্তন/বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে নিকাহনামা/ তালাকনামা (যেখানে যে টি প্রযোজ্য)।
৫. জন্ম তারিখ পরিবর্তন পিএসসি/জেএসসি/এসএসসি সনদ অনুযায়ী (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) সংশোধিত জন্ম নিবন্ধন সনদ/ জাতীয় পরিচয়পত্র।
৬. স্থায়ী ঠিকানা পুলিশ প্রতিবেদন (এর জন্য পূরণকৃত ১ কপি রি-ইস্যু ফরম ও ১ কপি সত্যায়িত নতুন আবেদন ফরম-ডিআইপি ফরম-১)।

**বি:দ্র: রি-ইস্যুর আবেদনপত্র জমা এবং ইস্যুকৃত পাসপোর্ট গ্রহণের সময় পুরাতন পাসপোর্ট অবশ্যই সাথে নিতে হয়।**

৪. পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে ফর্ম জমা দেয়া:

টাকা দেওয়ার পর সেই স্লিপ এর নাম্বার এবং সব ডিটেইলস ফর্মে বসিয়ে তার সাথে সাপোর্টিভ ডকুমেন্টসগুলো একসাথে করে পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে জমা দিতে হয়। কোন তথ্য পরিবর্তন করতে চাইলে ফর্মের মধ্যে নিচের ছকে ডান দিকে উল্লেখ করতে হবে।

pass renew 2

ব্যাংক স্লিপ, ফর্ম, আর বাকি কাগজপত্র একসাথে করে প্রথমে বাইরে লাইনে দাড়াতে হয়। এরপর নীচ তালায় দায়িত্বরত আর্মি অফিসারদের থেকে ১টা সিল এবং সিরিয়াল (সিরিয়াল নেয়ার শেষ সময় দুপুর ২টা) নিয়ে ৩ তালায় আরেক লাইনে দাঁড়িয়ে পুরনো পাসপোর্ট এবং এই কাগজ গুলো জমা দিলে তখনই সিল দিয়ে, চেহারা মিলিয়ে সব দিয়ে দিবে। এরপর ৪ তালায় গিয়ে দায়িত্বরত অফিসার থেকে আরেকবার সিরিয়াল নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে ছবি তোলা/ ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে কাজ শেষ।

সবশেষে, সেই দিন একটা স্লিপ দিয়ে দিবে। সেই স্লিপের সকল তথ্য ঠিক আছে কিনা তা ভালো ভাবে খেয়াল করে মিলিয়ে নিতে হবে।

পুরনো পাসপোর্ট, সেটার সত্যায়িত কপি, আর NID/ BIRTH CERTIFICATE -এর সত্যায়িত কপি আর প্রয়োজনীয় টাকা সাথে নিয়ে সকাল ১০টায় গেলে ১ দিনেই সব কাজ শেষ করা যায়।

৫. নতুন পাসপোর্ট হাতে পাওয়া:

পাসপোর্ট জমা দেয়ার ২১ দিন পর সাধারণত নতুন পাসপোর্ট ডেলিভারি করে। এই সময়ের মধ্যে 6969 এ এসএমএস করে জানা যাবে পাসপোর্ট এখন কি অবস্থায় আছে এবং কবে পাওয়া যাবে।

সবশেষে, পাসপোর্ট সংগ্রহ করার জন্য নির্দিষ্ট তারিখ জানিয়ে কনফার্মেশন ম্যাসেজ পাওয়ার পর পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে হয়। এসময় ২০১ নাম্বার রুমে গিয়ে যেই স্লিপ দিয়েছিল, সেটি জমা দিতে হয়। যদি মোবাইলে পাসপোর্ট অফিস থেকে ম্যাসেজ গিয়ে থাকে তাহলে একটু অপেক্ষা করলেই পাওয়া যাবে।

**বি:দ্র: অনেক সময় স্লিপে দেয়া Tentative Date এ অনেকেই পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে দাড়িয়ে থাকেন পাসপোর্ট সংগ্রহের জন্য। পরবর্তীতে তাদের শূণ্য হাতেই বাড়ি ফিরতে হয়। তাই মোবাইল ফোনে ম্যাসেজ পাওয়ার পরেই পাসপোর্ট অফিসে যেতে হয়।এছাড়াও মেয়াদ শেষ হওয়ার কিছু দিন আগেই প্রসেস শুরু করা উচিৎ।**