ইউনিভাসিটি থেকে কনফার্ম করার পর মোটামুটি ঘুম হারাম হয়ে যায় ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় সব ডকুমেন্টস গুছাতে। আপনার এতদিনের সব পরিশ্রম নিমিষেই মাটি হয়ে যেতে পারে ছোট একটা কাগজের জন্য। বিভিন্ন ওয়েবসাইটে F1 ভিসার জন্য দরকারি কাগজগুলোর তালিকা পাওয়া গেলেও F2 ভিসার দরকারি কাগজ এবং পরামর্শ এক জায়গায় খুজে পাইনি। বিভিন্ন ওয়েবসাইট আর রিয়েল লাইফ এক্সপেরিয়েন্স থেকে F2 ভিসা নিয়ে বিস্তারিত লেখার চেষ্টা করেছি, আশা করি এতে অনেকেই উপকৃত হবেন।

১। স্পাউসের জন্য আলাদা আই-২০:

প্রথমেই আপনার ইউনিভার্সিটির গ্রাজুয়েট কো-অর্ডিনেটর কে মেইল করে জানিয়ে দিন আপনি আপনার স্পাউসকে সাথে নিয়ে আসতে চান। সাধারণত ইউনিভার্সিটি এরপরই আপনার স্পাউসের জন্য একটা নির্দিষ্ট আমাউন্ট এর ফাইনান্সিয়াল সলভেন্সি দেখতে চায়। এটা সাধারণত ৪৫০০-৭০০০ ডলার এর মধ্যেই হয়ে থাকে।

নমুনা আই-২০ ফরম
নমুনা আই-২০ ফরম

সেই সাথে স্পাউসের পাসপোর্ট এর স্ক্যান কপি দিতে হয়। ফাইনান্সিয়াল সলভেন্সির কাগজ সাধারনত নিজের বা স্পাউসের বাবা-মা বা ঘনিষ্ঠ আত্নীয়দের দেখালে অনাকাঙ্খিত ঝামেলা এড়ানো যায় সহজেই (আপনার নিজের যদি থাকে তাইলেতো কথাই নাই) প্রয়োজনীয় কাগজ পাঠিয়ে দিলে ইউনিভার্সিটি আপনার স্পাউসের জন্য একটি আলাদা আই-২০ ইস্যু করবে। ব্যস এইবার স্পাউসের সামনে ভাব নিয়া বলেন তোমার আই-২০ আসিতেছে ।
বিঃ দ্রঃ স্পাউসের আই-২০ র নিচে সিগনেচার এর একটা ঘর থাকে যেখানে F1 আবেদনকারীর স্বাক্ষর দিতে হয়।

ফরম আই-২০ সমাচার |  আই-২০ কিভাবে আনবেন | আই-২০ পাওয়া থেকে ভিসা সব এক নজরে

২। ম্যারিজ সার্টিফিকেট, নিকাহনামা এবং বিবাহসংক্রান্ত দলিলাদিঃ

0820_docনিকাহ নামা এবং ম্যারিজ সাটিফিকেট অনেকেরই সংগ্রহে থাকে না, যদি সংগ্রহে থাকে খুবই ভাল কথা আর যদি না থাকে “ফ্যাস্টেন ইওর সিটবেল্ট প্লিজ”। প্রথমে নিকাহনামা দেখলেই মনে হবে সত্যি বিয়া শুদ্ধ ভাবে করছি তো? বেশিরভাগ নিকাহ নামাতে নামের বানান এবং ঠিকানাতে প্রচুর ভুল থাকে। সেইজন্য সময় হাতে নিয়ে ঠান্ডা মাথায় কাজগুলা রেডি করুন। যে কাজি বিয়েতে ছিলো তার অফিস থেকেই নিকাহ নামা এবং সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে হবে। দুইজনের নামের বানান, ঠিকানা দেখার পাশাপাশি নিকাহ যে বইতে রেজিস্ট্রি করা হয়েছে সেই বই এবং তার পৃষ্ঠা নং নিকাহনামা এবং সার্টিফিকেটে ঠিক ভাবে উল্লেখ করা আছে কিনা দেখে নিন। এরপর দুইটারে নোটারি পাব্লিক দিয়া নোটারি করায় নেন। কনগ্রাচুলেশান! আপনাদের বিবাহ এতদিনে সঠিক ভাবে সম্পন্ন হইল, এখন আপাতত খেজুর বিলান, ইউ এস এ যেয়ে হানিমুন কইরেন কারন কাজ এখনো অনেক বাকি।

0820-group৩। এবার বসে যান বিয়ে এবং হানিমুন এর সব ছবি বাছাই নিয়ে। আগেই বলে রাখা ভাল সেখানে বেস্ট পিকচার বেস্ট পোজের জন্য কোন পুরস্কার দেয়া হয়না। তাই বিভিন্ন দিক থেকে বিভিন্ন পোজে তুলা সিংগেল এবং কাপল ছবি অনেক দেয়ার দরকার নাই। নিজেদের সব আত্মীয় সজন আছে এমন কিছু ছবি ফ্যামিলি ফটো সিলেকশন আগেই করে রাখুন।

৪। ফাইনান্সিয়াল ডকুমেন্টস: এই অংশটা হচ্ছে F2 ভিসা ডকুমেন্টস এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আপনি নিজে অথবা আপনাদের বাবা-মা স্পন্সর হলে সবচেয়ে ভালো হয়। এছাড়া যেকোনো আত্মীয় স্পন্সর হতে পারে। সে ক্ষেত্রে স্পন্সরের ব্যাংক স্টেটমেন্ট (৬ মাসের), ব্যাংক সার্টিফিকেট এবং এফিডেফিট অফ সাপোর্ট লাগবে। বলে রাখা ভালো এফিডেফিট অফ সাপোর্ট আগে স্টাম্প প্যাডে লিখে নোটারি করতে হত। এখন শুধু সাদা কাগজে প্রিন্ট করে স্পন্সর আর আপনাদের দুইজনের সিগনেচার হলেই হয়।

৫। কিছু মুস্তাহাব ( কোনদিন চায় না, কিন্তু কপাল খারাপ হইলে চাইতেও পারে) কাগজপাতি:

স্পাউসের জন্ম সার্টিফিকেট, ভোটার আই ডি কার্ড, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র, চাকরিজীবী হলে ভিসিটিং কার্ড। যদি স্পাউস ইন্টারভিউ তে বলে যে আবার সে ১ বছর কি দুই বছরের মাঝে ব্যাক করবে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই চাকুরীরত কোম্পানি থেকে NOC লেটার নিতে হবে।

সবশেষে কিছু ফাউ টিপস:

ইন্টারভিউর আগেই কিছু কমন প্রশ্নের উত্তর রেডি করে রাখুন। যেমন কবে প্রথম দেখা হয়েছে, বিয়ের কতদিন হল ( ভাইয়ারা বিয়ের ডেট ভুইলেন না, ডায়মন্ড এর আংটি দিয়ে ভিসা অফিসার কে ভুলাতে পারবেন না), স্পাউস সেখানে যেয়ে কি করবে ইত্যাদি।
আপারা প্লিজ ইহা কোন বিয়ের প্রোগ্রাম না, মেকাপ এমন ভাবে মাইরেন যেন পাসপোর্ট এর ছবির সাথে কিছুটা মিলে, শাড়ি পড়ে যদি কম্ফোর্টেবল না হন তাহলে না পড়াই ভাল। ( রিয়েল লাইফ এক্সপেরিয়েন্স)

লাইনে দাড়ায়া অতিরিক্ত প্রেম দেখানো অথবা ঝগড়া থেকে বিরত থাকুন। কে কি কাগজ গুছায়া আনে নাই সেইটা নিয়া ঝগড়া কইরা পুরা দুনিয়ারে জানানো দরকার নাই আপনারা কি কাগজ আনেন নাই। মাথা ঠান্ডা রাখেন।
সর্বোপরি পুরা ব্যাপারটাই সময় ব্যায় করে অনেক দৌড়া-দৌড়ী করে আসাইনমেন্ট বানায়া সেইটাকে স্যার এর রুম এ পানি রাখার ট্রে হিসাবে দেখতে পাওয়ার মত। মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেছিল ভিসা অফিসার আই ২০ ছাড়া কিছু দেখতে চায় নাই দেইখা, অন্তত বিয়ের ছবি গুলা দেখতে পারত! 😛

লিস্টে পাসপোর্ট নিতে বলি নাই দেখে ওটা নিতে ভুইলেন না, ওটাতেই ভিসা লাগাবে।