[অনেকের ভিসা ইন্টারভিউ হয়ে গেছে। তারপরও অনেকের মনে অনেক খুচরো প্রশ্ন। ভবিষ্যতেও অনেকে দাঁড়াবেন। তাঁদের জন্য এ পোস্ট।]

অনেকে প্রথমবার ভিসা ইন্টারভিউয়ের জন্য দাঁড়াতে গেলে কাঁপাকাঁপি শুরু হয়। ভয়ে অনেকে অস্থির থাকেন। ভেতরে গিয়ে মানুষজনের আলাপচারিতা আড়িপেতে শুনতে গিয়ে ভয়টা আরও বেড়ে যায়! একটু ভয় থাকাটা অবশ্য স্বাভাবিক। তারপরও ভেতরের পরিবেশ সম্পর্কে একটু ধারণা থাকলে হয়তো সহজ হবে।

১. যত সকালে যাবেন, আপনার ইন্টারভিউ ততই তাড়াতাড়ি হবে। গিয়ে বাইরে লাইনে দাঁড়াবেন। একটু পর পর ভেতর থেকে লোক এসে ইন্টারভিউ এর টাইম অনুযায়ী ডাকতে থাকে (যেমন, সকাল সাতটার কেউ আছেন?) যদি আপনি আগে উপস্থিত থাকেন, সিরিয়ালি আগেই ঢুকে যেতে পারবেন, এবং সব মিলিয়ে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসবেন। এমনও হতে পারে, আপনার ইন্টারভিউ সকাল ৭.৩০ এ হওয়া সত্ত্বেও আপনি ইন্টারভিউ শেষ করে ৭.৩০ এর দিকেই বেরিয়ে আসবেন।

২. সিএনজি চালককে অথবা গাড়ির ড্রাইভারকে বারিধারা আমেরিকান অ্যাম্বেসি বললে যে কেউই চেনার কথা। গুগল ম্যাপ ধরে নিজেই চলে যেতে পারবেন, পথ হারাবার কিছু নেই।

৩. অ্যাম্বেসির ভেতরের চালচিত্রঃ

সাথে মোবাইল ফোন বা ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি কিছুই রাখবেন না, থাকলে বাইরে কারো কাছে দিয়ে যেতে হবে। সাথে কেউ গেলে ভালো, তার কাছে কাগজপত্র ছাড়া বাকি সব জমা দিয়ে আপনি ভেতরে যেতে পারবেন। আর অপ্রয়োজনীয় কিছু সাথে না থাকলে একা একাই সব করতে পারবেন। খুব বেশী সময় কোথাও অপেক্ষা করতে হয় নি, মিনিট দশেক করে হয়তো।

প্রথমে গেটের কাছে চেকিং হয়। ইন্টারভিউ অ্যাপয়েন্টমেন্ট কনফার্মেশন দেখালে তারা আপনার নাম খুঁজে বার করে টিক চিহ্ন দেয়, আপনার পাসপোর্ট খুঁচিয়ে গুঁতিয়ে দেখে পাউডার আছে কিনা (সত্যি!), পেজ জোড়া লেগে আছে কিনা, অথবা অন্য কোন সমস্যা আছে কিনা। যার ইন্টারভিউ সে-ই কেবল ভেতরে যাবে।

মোটা দরজা পার হয়ে ওয়েটিং রুম। আবার পাসপোর্ট চেকিং হবে। আপনাকেও চেক করা হবে। যদি একাধিক পাসপোর্ট স্ট্যাপল করে অথবা অন্য কোনোভাবে জোড়া লাগানো থাকে তাহলে খুলে নিন। লেটেস্টটাই দেখতে চাইবে। ওটার পেছনে স্টিকার লাগিয়ে দেবে। তারপর আপনার গন্তব্য পরের ওয়েটিং রুম।

এখানে টেবিলের ওপর পাসপোর্ট দিয়ে চারবার বাড়ি দিতে হবে(!), এবং আপনার দশ আঙুল স্ক্যান করা হবে।  আঙুল স্ক্যান করা হলে ইন্টারভিউ ফেইস করতে অপেক্ষা করতে হবে। আপনার সময় এলে তারা বলে দেবে কত নম্বর কাউন্টারে দাঁড়াবেন।

বাংলায় জিজ্ঞেস করে প্রশ্ন। আপনি চাইলে ইংরেজিতেও করতে পারে। যদি আই-২০ তে লেখা থাকে Student is proficient, তাহলে হয়তো ইংরেজিতেই প্রশ্ন শুরু করতে পারে। একেক কাউন্টারে একেক জন প্রশ্নকর্তা, তাঁর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। আমেরিকান,চাইনিজ, ইউরোপিয়ান সমস্ত চেহারার প্রশ্নকর্তাই থাকেন, পুরুষ-মহিলা মিলিয়ে। দশটা কাউন্টার।

বাঙালি মানুষজন অ্যানালিসিস করে বেশী, এবং অমুক ভিসা অফিসার নরম, তমুক একটুশক্ত জাতীয় কিংবদন্তী চালু করে। এগুলোর কোন যুক্তিসঙ্গত ভিত্তি নেই। তারা সবসময়ই চানএকজন যোগ্য ছাত্র/ছাত্রী ভিসা পান, কাউকে আটকানোর মানসিকতা নিয়ে তাঁরা দাঁড়ান না।কাজেই কোন কাউন্টারে দাঁড়াচ্ছেন তার ওপর কিছু নির্ভর করে না। আশেপাশেরমানুষজনের মুখে নানান জল্পনাকল্পনা শুনবেন, দুই কান দিয়ে শুনে নাকের দুই ফুটো দিয়েবের করে দেবেন কারণ এগুলো অপ্রয়োজনীয়।

আপনার প্রোস্পেক্টিভ ভার্সিটি যদি একটু পরিচিত হয়, আপনার ফান্ডিং যদি ঠিকমতো ব্যাখ্যা করতে পারেন, এবং যদি প্রসেসের কোথাও কোন ভুল বা মিথ্যে তথ্য দিয়ে না থাকেন, তাহলে ভয় পাবার কিছু নেই।

যদি অ্যাপ্রুভড হন, তাহলে পাসপোর্ট রেখে দেবে। যদি রিজেক্টেড হন, তাহলে পাসপোর্ট ফিরিয়ে দেবে। রিজেক্ট হলে আবার অ্যাপ্লাই করা যায়। স্টেজগুলো আগের মতই, ডিএস-১৬০ ফর্ম ফিলাপ করে, ভিসা ফি দিয়ে ইন্টারভিউ এর ডেট নেয়া।

অ্যাপ্রুভড হলে সাধারণত কয়েক দিন পর আপনার কাছে মেইল আসবে, আর আপনার ভিসার ইন্টারভিউ এর অ্যাপয়েন্টমেন্ট যে অ্যাকাউন্ট থেকে নিয়েছিলেন, সেখানে ঢুকে চেক করতে পারবেন, দেখাবে যে আপনার পাসপোর্ট পিক-আপ করার জন্য রেডি। ঢাকার লোকজনদের জন্য পিক-আপ পয়েন্ট সাইমন সেন্টার। ওখানে গিয়ে আপনার অ্যাপয়েন্টমেন্ট কনফার্মেশনের কপি, আপনার পাসপোর্টের ফটোকপি দেখালেই ভিসাসহ পাসপোর্ট দিয়ে দেবে। তবে বিকেল তিনটার আগে যাবেন পাসপোর্ট কালেক্ট করতে।

অনেক সময় অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ প্রোসেসিংয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে অপেক্ষা করাই শ্রেয়। অন্যান্য সমস্যার ক্ষেত্রে অ্যাম্বেসির ওয়েবসাইট থেকে ফোন নম্বর অথবা ই-মেইল সংগ্রহ করে যোগাযোগ করতে পারেন।

সবাইকে শুভকামনা।

 

– ইসহাক খান, প্রাক্তন গ্রেক ফ্যাকাল্টি


নিচের লিংক থেকে ইসহাক খানের লেখা অন্যান্য আর্টিকেলগুলো পড়তে পারেন-

 স্টুডেন্টদের সাধারণ দুর্বলতা – পার্ট ১ – Vocabulary
 স্টুডেন্টদের সাধারণ দুর্বলতা – পার্ট ২ – Analytical Writing
 স্টুডেন্টদের সাধারণ দুর্বলতা – পার্ট ৩ – Reading Comprehension
 স্টুডেন্টদের সাধারণ দুর্বলতা – পার্ট ৪ – Speaking (TOEFL)
 Originality of writing: এসওপি, এলওআর, ইমেইলিং প্রফেসরস, সিভি ও রেজুমে (১ম খণ্ড)
 Originality of writing: এসওপি, এলওআর, ইমেইলিং প্রফেসরস, সিভি ও রেজুমে (২য় খণ্ড)
 Customized Routine: নিয়মিত ফলো করা (১ম খণ্ড)
 Customized Routine: নিয়মিত ফলো করা (২য় খণ্ড)
 আমার জন্য সঠিক রাস্তা কোনটা: বিদেশ, জিআরই, স্বদেশ, বিসিএস, চাকরি?
 রেকমেন্ডেশন বিড়ম্বনা!
 Research: রিসার্চ বা গবেষণা
 ইউএস অ্যাম্বেসির ভেতরের পরিবেশ এবং স্টেপগুলো
 ইংরেজিতে দক্ষতা এবং কিছু স্ট্র্যাটিজি
 Teaching: শেখা ও শেখানো, দেয়া ও নেয়া
 ইউএস ভিসা পাওয়া না পাওয়া এবং হায়ার স্টাডির কিছু পয়েন্ট
 জিআরই এবং টোফেল: হায়ারস্টাডির প্রস্তুতি হোক স্ট্র্যাটিজিক্যালি (পার্ট- ১)
 জিআরই এবং টোফেল: হায়ারস্টাডির প্রস্তুতি হোক স্ট্র্যাটিজিক্যালি (পার্ট- ২)
 জিআরই এবং টোফেল: হায়ারস্টাডির প্রস্তুতি হোক স্ট্র্যাটিজিক্যালি (পার্ট- ৩)
 জিআরই এবং টোফেল: হায়ারস্টাডির প্রস্তুতি হোক স্ট্র্যাটিজিক্যালি (পার্ট- ৪)
 আমার অভিজ্ঞতা: জিআরই প্রস্তুতি এবং পরীক্ষা
 আমার অভিজ্ঞতা: টোফেল প্রস্তুতি এবং পরীক্ষা
 আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা এবং দরকারি কৌশল