সম্ভবত বাইরে পড়তে যাবার যে ক’টা স্টেজ আছে, তার মধ্যে রেকো কালেক্ট করাটা সম্ভবত সবচেয়ে খতরনাক। এটির নানা দিক নিয়ে এই লেখা।
ভার্সিটির অনলাইন অ্যাপ্লিকেশন সাবমিট করার সময় তিনজন রেফারির (অর্থাৎ টিচারের) নামধাম আর অফিসিয়াল অ্যাড্রেস দিতে হয়। উনাদের কাছ থেকেই নিতে হয় রেকো। অ্যাপ্লাই শুরু করার আগে স্পেসিফিকলি জেনে নিতে হবে কোন কোন স্যার রেকো দেবেন। এবং কয়টা করে দেবেন। সব গুণে নিতে হবে (পথ চলবে জেনে, রেকো নেবে গুণে!)। দশটা ইউনিভার্সিটিতে অ্যাপ্লাই করতে হলে তিন দশে তিরিশটা রেকো পাওয়ার “জোর আশ্বাস” নিয়ে অ্যাপ্লিকেশন শুরু করতে হবে!

এখানেও বলে রাখি, আগে দেবো বলে পরে রেকো দেন না এমন ঘটনা আছে। অনেকে শেষ মুহূর্তে এসে বলেন সরি, দেয়া সম্ভব না – তখন ডেডলাইনের শেষদিনে নতুন রেকমেন্ডার খুঁজে পাওয়া খুব বিড়ম্বনা। অনেকে হয়তো দিচ্ছি দিচ্ছি করে দেন না। ব্যাকআপ টিচার রাখতে পারলে ভালো। থিসিস সুপারভাইজার আর অ্যাডভাইজারের রেকো নেয়ার চেষ্টা করা উচিৎ। আর বাকিগুলো কোর্স টিচারদের কাছ থেকে “ঘাপাতে” হবে।

স্যারদের নাম অ্যাপ্লিকেশন সাবমিট করার আগেই ঠিক করে রাখতে হয়, তাঁদের “অফিসিয়াল” ই-মেইল অ্যাড্রেস দিতে হয়, এবং স্যারকে জানাতে হয় যে নোটিফিকেশন আসবে, রেকোগুলো দিয়ে দিয়েন স্যার! অ্যাপ্লিকেশন সাবমিট করলেই যেসব স্যারদের নাম দেয়া হয়েছিল, তাঁদের মেইলে একটা করে নোটিফিকেশন চলে আসে যে অমুক আপনার কাছে রেকো চেয়েছে। সেগুলোতে ক্লিক করে স্যাররা রেকো দেন।

সাধারণত স্টুডেন্টের সামনে বসে অনেক টিচার রেকো পাঠান, তাঁদের ক্ষেত্রে সকাল সকাল রিকুয়েস্ট সেন্ড করে স্যারদের সাথে দেখা করতে যাওয়া ভালো, যাতে সহজে খুঁজে পাওয়া যায়। অনেক সময় দু’তিনদিন আগে স্যারের মেইলে নোটিফিকেশন গেলে খুঁজে পাওয়া মুশকিল হয়, এজন্য উচিৎ প্রয়োজনে রিকুয়েস্ট রিসেন্ড করে তারপর দেখা করতে যাওয়া, যাতে মেইলটা একেবারে ওপরে, চোখের সামনে এসে বসে থাকে (অনেক ভার্সিটির অ্যাপ্লিকেশনেই রেকোর রিকুয়েস্ট পাঠানোর রিসেন্ড বাটন থাকে)।

যদি কোন কারণে রেকমেন্ডারের নাম চেঞ্জ করতে হয়, অর্থাৎ ইন কেস একজন স্যার বেঁকে বসেছেন যে রেকো দেবেন না, সেক্ষেত্রেও উপায় আছে। অনেক অ্যাপ্লিকেশনে এডিট করে স্যারের নাম চেঞ্জ করা যায়, এটা খুব সুবিধা। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে চেঞ্জ করা যায় না, তখন গ্র্যাড স্কুলকে মেইল করে বলতে হয় অনিবার্য কারণে অমুক টিচারের রেকো নিতে পারছি না, আমি অন্য আরেকজন টিচারের রেকো পাঠাতে চাই। তখন গ্র্যাড স্কুল একটা মেইল অ্যাড্রেস দিয়ে বলে এখানে পাঠাও। ব্যস, স্যারকে বললে উনি ঐ অ্যাড্রেসে সোজা পাঠিয়ে দিতে পারেন।

রেকো বস্তুটি কী? কেমনই বা তার চেহারা? রেকোতে সাধারণত কয়েকটা ক্ষেত্রে ছাত্রকে মার্কিং করতে হয়। সে লেখাপড়ায় কেমন, রিসার্চের ক্যাপাবিলিটি কেমন, টিমওয়ার্ক কেমন করে, আজেবাজে স্বভাব আছে কিনা – এসব সাধারণ কিছু বিষয় নিয়ে রেকমেন্ডার ছাত্রকে কিছু মার্কস দেন, অবজেক্টিভ দাগানোর মত। আর একটা ডকুমেন্ট আপলোড করতে হয়, সেখানে স্যার নিজের কিছু কথা লেখেন।

অনেক ক্ষেত্রে রেকো দেয়ার আগে স্যার ছাত্রের সিভি আর ট্রান্সক্রিপ্ট নিয়ে থাকেন, ছাত্র সম্পর্কে একটু কিছু জেনে নিয়ে লেখার জন্য! অনেক ক্ষেত্রে ছাত্রই আবার রেকো লিখে নিয়ে যায়, টিচার একটু এডিট করে সেন্ড করেন আরকি। অনেক টিচারের আবার একটা সাধারণ টেমপ্লেট তৈরি থাকে, যেটাতে নাম চেঞ্জ করে করে সবাইকে একই রেকো দিয়ে থাকেন তিনি। থিসিস সুপারভাইজার যদি লিখে নিয়ে যেতে বলেন, তাহলে নিজের আণ্ডারগ্র্যাড থিসিস এবং পাবলিকেশন (তা যতই হাস্যকর গোছের মনে হোক না কেন!) নিয়ে একটু ফোকাস করা উচিৎ।

অ্যাডভাইজার যদি লিখে নিয়ে যেতে বলেন, তাহলে তিনি আমাকে কীভাবে চেনেন, আমার কী কী অ্যাকাডেমিক রিলেটেড যোগ্যতা এবং এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিজ আছে, প্রেজেন্টেশন স্কিল জাতীয় স্কিল কিছু আছে কিনা, অন্য অভিজ্ঞতা আছে কিনা এসব নিয়ে একটু লেখা যায়। কোর্স টিচার যদি লিখে নিয়ে যেতে বলেন, তাহলে কী কোর্স তাঁর আন্ডারে করা হয়েছে, তাতে গ্রেড কেমন এসেছে এসব লিখলেই কাজ হয়ে যায়। অর্থাৎ, যে টিচার আমাকে যেভাবে চেনেন, তিনি সে বিষয়ে লিখবেন এটাই স্বাভাবিক – এটা মনে রেকো তৈরি করতে হয়।

এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ আরও একটা ব্যাপার আছে, যদিও এটা নিয়ে ভাবার তেমন দরকার নেই যেহেতু ব্যাপারগুলো আমাদের হাতে নয় – যদি আমেরিকার ভার্সিটিতে অ্যাপ্লাই করা হয়, তাহলে এমন কোন টিচারের রেকো পাঠালে ভালো যিনি আমেরিকান ভার্সিটি থেকেই পিএইচডি করেছেন। আরও ভালো হয় যদি ঐ টিচার ঐ ভার্সিটি থেকেই ডিগ্রী নিয়ে থাকেন যে ভার্সিটিতে আমি অ্যাপ্লাই করছি – এতে রেকো আরও জোরদার হয়। যা হোক, এমনটা মেলানো খুবই দুষ্কর – কাজেই এটা নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কোন দরকার নেই। রেকো বিশ্বাসযোগ্য হয় তখনই, যখন টিচার আমাকে সত্যি সত্যিই চেনেন।

একটা সাধারণ রেকোতে আকাশচুম্বী কিছু লেখার নেই – স্রেফ লেখা থাকে অমুক এই ভার্সিটিতে বিএসসি করেছে, এই এই কোর্স আমার আণ্ডারে করেছে, আমার মনে হয় সে বাইরে গেলে রিসার্চ করার যোগ্যতা রাখে, অতএব আমি ওকে রেকমেন্ড করছি। আহামরি কিছু আসলে ভার্সিটি আশা করে না – আণ্ডারগ্র্যাডে এই ছাত্রের মত ছাত্র পাওয়াই যায় না, সে নোবেল পুরষ্কার পাবার যোগ্য ইত্যাদি লেখার কোন দরকার নেই।অতিরঞ্জিত, ক্লিশে ধরণের প্রশংসা বা মিথ্যে কিছু লেখার প্রশ্নই আসে না। স্পেশাল রেকোর ব্যাপার আলাদা অবশ্য – যেখানে কোন বিশেষ কাজের জন্য বিশেষ প্রশংসার কথা স্যার দুয়েকজন ছাত্রের জন্য লিখে থাকেন।

যা হোক, এতক্ষণ যা বললাম সব জেনারেল রেকোর জন্য প্রযোজ্য, আর এগুলোতেই কাজ চলে যায় সাধারণ ছাত্রের জন্য। একটা জেনারেল রেকো বোঝায় যে ঐ টিচার আমাকে একটু চেনেন আরকি। ভালো কথা, অ্যাপ্লিকেশন করার সময় রেকো দেখার রাইট ওয়েইভ করে দিতে হবে, নইলে অনেক স্যার ব্যাপারটা ভালোভাবে নেবেন না। একটা সাধারণ টেমপ্লেট রেকো দিতে লাগে বড়জোর পাঁচ মিনিট, এতে যে টিচারের সারাদিন নষ্ট হয়ে যায় তা-ও নয়। পাশ করার পরপরই অ্যাপ্লাই করলে রেকো পাওয়া একটু সহজ, কারণ টিচাররা তখন চেহারা একটু চেনেন। কয়েক বছর পর দেখা করতে গেলে হয়তো চেনানো মুশকিল হয়ে যায় (তোমাকে তো কোনোদিন দেখেছি বলে মনে হয় না!)।

আশা করি উপকার হবে। ধন্যবাদ এবং শুভকামনা।

 

– ইসহাক খান, প্রাক্তন গ্রেক ফ্যাকাল্টি


নিচের লিংক থেকে ইসহাক খানের লেখা অন্যান্য আর্টিকেলগুলো পড়তে পারেন-

 স্টুডেন্টদের সাধারণ দুর্বলতা – পার্ট ১ – Vocabulary
 স্টুডেন্টদের সাধারণ দুর্বলতা – পার্ট ২ – Analytical Writing
 স্টুডেন্টদের সাধারণ দুর্বলতা – পার্ট ৩ – Reading Comprehension
 স্টুডেন্টদের সাধারণ দুর্বলতা – পার্ট ৪ – Speaking (TOEFL)
 Originality of writing: এসওপি, এলওআর, ইমেইলিং প্রফেসরস, সিভি ও রেজুমে (১ম খণ্ড)
 Originality of writing: এসওপি, এলওআর, ইমেইলিং প্রফেসরস, সিভি ও রেজুমে (২য় খণ্ড)
 Customized Routine: নিয়মিত ফলো করা (১ম খণ্ড)
 Customized Routine: নিয়মিত ফলো করা (২য় খণ্ড)
 আমার জন্য সঠিক রাস্তা কোনটা: বিদেশ, জিআরই, স্বদেশ, বিসিএস, চাকরি?
 রেকমেন্ডেশন বিড়ম্বনা!
 Research: রিসার্চ বা গবেষণা
 ইউএস অ্যাম্বেসির ভেতরের পরিবেশ এবং স্টেপগুলো
 ইংরেজিতে দক্ষতা এবং কিছু স্ট্র্যাটিজি
 Teaching: শেখা ও শেখানো, দেয়া ও নেয়া
 ইউএস ভিসা পাওয়া না পাওয়া এবং হায়ার স্টাডির কিছু পয়েন্ট
 জিআরই এবং টোফেল: হায়ারস্টাডির প্রস্তুতি হোক স্ট্র্যাটিজিক্যালি (পার্ট- ১)
 জিআরই এবং টোফেল: হায়ারস্টাডির প্রস্তুতি হোক স্ট্র্যাটিজিক্যালি (পার্ট- ২)
 জিআরই এবং টোফেল: হায়ারস্টাডির প্রস্তুতি হোক স্ট্র্যাটিজিক্যালি (পার্ট- ৩)
 জিআরই এবং টোফেল: হায়ারস্টাডির প্রস্তুতি হোক স্ট্র্যাটিজিক্যালি (পার্ট- ৪)
 আমার অভিজ্ঞতা: জিআরই প্রস্তুতি এবং পরীক্ষা
 আমার অভিজ্ঞতা: টোফেল প্রস্তুতি এবং পরীক্ষা
 আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা এবং দরকারি কৌশল