হয়তো পেয়েও গেলাম কিছু বাংলা ম্যাটেরিয়াল। সেগুলো পড়তে গিয়ে মনে হল, বাংলা অনুবাদ পড়ে আরও দুর্বোধ্য ঠেকছে, বোধহয় ইংরেজিতেই ভালো ছিল!
এখানে সত্যিকারের সমস্যাটা কি ধরতে পেরেছেন? সমস্যাটা হল, কিছু জিনিস ইংরেজিতেই ভালো শোনায়, ভালো বোঝা যায়। বাংলা করতে গেলে ব্যাপারটা হয় হাস্যকর, অথবা আরও দুর্বোধ্য। ব্যাপারটা আরও ভালো বোঝা যাবে সায়েন্স রিলেটেড কোন আর্টিকেল পড়তে গেলে। হয়তো আপনি দেখতে পাচ্ছেন, হাজার হাজার ইংরেজি শব্দ বাংলা বানানে লেখা আছে বলেই আপনি তরতর করে পড়ে ফেলতে পারছেন। এখানেই যদি বাংলা পরিভাষা ব্যবহার করা হত, কিংবা দাঁতভাঙা সাধুভাষায় লেখা হত তাহলে লেখাটা হারাত আকর্ষণ, হারাত আসল রস – আপনি হয়তো দু’লাইনও পড়তে চাইতেন না। হয়তো মনে হবে – অনুবাদকের দোষ, ভালো অনুবাদ করতে পারে নি তাই বোঝা যাচ্ছে না। কিন্তু এটা ভাষার বা লেখার টপিকের বৈশিষ্ট্যও হতে পারে – কিছু কথা যেমন বাংলাতে যেমন ভালো বোঝা যাবে, অন্য কোন ভাষাতেই তেমন বোঝা যাবে না, যত দুর্দান্ত অনুবাদকই অনুবাদ করুন না কেন। এজন্যই সবসময় সমস্ত ম্যাটেরিয়ালের গভীরে যাবার জন্য বলা হয় – এটা যে ভাষায় লেখা হয়েছিল সে ভাষায় পড়তে।
এবার নিজেকে জিজ্ঞেস করুন। কেন জিআরই-টোফেল দিতে চাইছেন? কোনমতে এই পরীক্ষাগুলোর বাধা পার হয়ে পরের স্টেজে যাবার জন্যই কি? যদি তাই হয়, তাহলে চিন্তা করুন – যেখানে যাচ্ছেন, সেখানে কথা বলতে হবে, শুনতে হবে ইংরেজিতে। সমস্ত ম্যাটেরিয়াল ইংরেজিতে। আপনাকে প্রেজেন্টেশন করতে হবে ইংরেজিতে। বুঝতে এবং ভাবতেও হবে ইংরেজিতে। বাংলাদেশের পড়াশোনায় চোখ-কান বুজে, কারো সাথে ইন্টারঅ্যাকশান না করে অনেকদূর চলে যাওয়া যায়। বহির্বিশ্বে এটি অসম্ভব। আপনাকে কমিউনিকেট করতেই হবে। আগে কি নিজের ইংরেজিতে একটা লেভেল পর্যন্ত দক্ষতা অর্জন করা প্রয়োজন নয়?
আমাদের দেশের আণ্ডারগ্র্যাড লাইফের পড়াশোনাকে একটু দোষারোপ করতেই হয়। কোনরকম ইংলিশ স্কিল ছাড়াই একজন এখানে পার হয়ে যেতে পারে, এবং অসুবিধাটা পরে টের পায়। প্রেজেন্টেশন, ইংলিশে লেখালেখি ইত্যাদি থাকে না বললেই চলে, থাকলেও একেবারেই টেকনিক্যাল ব্যাপারস্যাপার – তাই ইংলিশে দক্ষতা যে আদৌ দরকার আছে এটা কারো মনেই পড়ে না। দায়সারা কিছু প্রেজেন্টেশনের ব্যাপার থাকে, তাতেও ছাত্রছাত্রীদের পারফর্ম্যান্স অত্যন্ত হতাশার। বেশিদূর যেতে হবে না, আপনি যখন একটি হায়ার স্টাডি রিলেটেড গ্রুপের কারো ইংরেজিতে কমেন্ট করতে যাবার চেষ্টা দেখবেন, তখুনি দুর্বলতা চোখে পড়বে। আপনি এমন অনেককে খুঁজে পাবেন আশেপাশেই, যে এখন বিএসসি লেভেল ক্রস করে গেছে কিন্তু এখনো একটা লাইন শুদ্ধভাবে ইংরেজিতে লিখতে বা বলতে পারে না। তার চেয়েও ভয়ের ব্যাপার, না পারা নিয়ে তার কোন সংকোচও নেই – ভুলভালভাবেই চালিয়ে যাচ্ছে কারণ সোশ্যাল নেটওয়ার্কে শুদ্ধতা নয় – জনপ্রিয়তাই আসল ব্যাপার।
বাইরের দেশের লেখাপড়াতে মুখ গুঁজে বইয়ের পাতা মুখস্ত করার চেয়ে নানান অ্যাক্টিভিটি গুরুত্ব পায় – কারণ শুধু টার্ম ফাইনালে জোর না দিয়ে স্কোরের একটা বড় অংশ এমন সব কাজে দেয়া থাকে, যেটি অনেকের সাথে মিশে করতে হয়, নিজে ভাবতে বা লিখতে হয় অনেক কিছু। অনেক সময় বলতেও হয় অনেক কিছুই, নিজে নিজে কিছু একটা বানাতে হয়। এ কারণেই একটা ন্যূনতম দক্ষতা থাকা খুব জরুরী, যেটি আমাদের দেশে কেউ মনে করিয়ে দেয় না।
আর কেউ মনে করিয়ে দেয় না বলেই একজন নতুন ছাত্র বা ছাত্রী প্রিপারেশন নিতে গিয়ে ভাবে – জিআরই-টোফেল এত কঠিন কেন? কঠিন নয়, কঠিন মনে হয় – কারণ ওভাবেই আমরা গড়ে উঠেছি। যদি আরও আগের লেভেল থেকে একটু চিন্তাভাবনা করা হত, তাহলে এগুলো হত সাধারণ পরীক্ষার মতই – ম্যাথ আর ইংলিশ। তবে সিস্টেমের দোষ দিয়ে যেহেতু কোন লাভ নেই, দোষটা নিজের ধরে নিয়ে সেখান থেকেই উন্নতি করতে হবে।
এটা কি সত্যিই আমার জন্য?
আমি কি এটার জন্য তৈরি?
যে দক্ষতা দরকার সেটি কি আমার আছে? সেটি কি অর্জন করে নিতে পারবো? নাকি ভবিষ্যতের সম্ভাব্য বিপদের দিকে তাকাব না?
কেন আমি এটা করছি? কেন বাইরে যেতে চাই?
অন্যরা তো এমনি এমনিই পেরে গেছে। সেটি দেখে কি আমি ভাববো যে আমিও এমনি এমনিই পেরে যাবো?
কঠিন লাগছে – এখানেই চিন্তাভাবনা শেষ করবো? নাকি চিন্তা করে বার করবো কেন কঠিন লাগছে?
প্রশ্নগুলোর উত্তর সাথে নিয়ে প্রিপারেশন শুরু করুন। আপনার পড়াশোনা এবং পরিশ্রম অর্থবহ হবে।
একটা ভয়ের কথা বলে রাখি। আপনি যদি কোন বিষয়ে দুর্বল হন, আজকের যুগে কেউ ধরিয়ে দিতে চাইবে না। বলতে চাইবে না আপনি দুর্বল। আপনাকে খুশি রেখে একটা উপায় বাতলে দিতে চাইবে। ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে বলতে চাইবে আপনি দুর্বলতা নিয়েই স্বপ্ন দেখতে পারেন। কারণটাও খুব সোজা – আপনি অখুশি হন এমন কোন পরামর্শ দিলে আপনি কখনোই তাকে ভালো চোখে দেখবেন না! ফলাফল – আপনিও খুশি মনে দুর্বলতা নিয়েই এগুতে চাইবেন – কারণ এটাই আপাতদৃষ্টিতে আরামের। কিন্তু যে দুর্বল মানুষটি জানে সে দুর্বল, সে সবলতার দিকে এক পা এগিয়ে গেছে।
কথা অনেক বড় অস্ত্র। যোগাযোগ অনেক বড় একটা স্কিল। দুঃখের ব্যাপার, আমাদেরকে অর্থাৎ ছাত্রছাত্রীদেরকে এ ব্যাপারে কাজ করানো হয় না।
না হয় একটু কষ্ট করে মনে রাখুন – মনের জোরে বা চোখের জলে যুদ্ধ জয় হয় না, কৌশলে হয়।
[লেখাটিকে কাউকে হেয় করার চেষ্টা হিসেবে না দেখে সমস্যা সমাধানের একটি প্রচেষ্টা হিসেবে দেখলেই উপকার হবে বলে মনে করি। আমি সবসময় বিশ্বাস করি, যে কথাগুলো শুনতে ভালো লাগে না, সেগুলোই সত্য। এবং আরও বিশ্বাস করি যে উন্নতির উপায় হচ্ছে নিজের যে সমস্ত দুর্বলতাগুলোকে আমরা পুষে রাখি, যেগুলো নিয়ে কথা বলতে চাই না, এড়িয়ে যাই – সেগুলো নিয়ে কাজ করা, সেগুলোর মুখোমুখি হওয়া। না হয় নিজের দুর্বলতাগুলো নিজেকে একটু লজ্জা দিলো, তারপরও যেন আমরা কাটিয়ে উঠতে পারি।]
– ইসহাক খান, প্রাক্তন গ্রেক ফ্যাকাল্টি
নিচের লিংক থেকে ইসহাক খানের লেখা অন্যান্য আর্টিকেলগুলো পড়তে পারেন-
☑ স্টুডেন্টদের সাধারণ দুর্বলতা – পার্ট ১ – Vocabulary
☑ স্টুডেন্টদের সাধারণ দুর্বলতা – পার্ট ২ – Analytical Writing
☑ স্টুডেন্টদের সাধারণ দুর্বলতা – পার্ট ৩ – Reading Comprehension
☑ স্টুডেন্টদের সাধারণ দুর্বলতা – পার্ট ৪ – Speaking (TOEFL)
☑ Originality of writing: এসওপি, এলওআর, ইমেইলিং প্রফেসরস, সিভি ও রেজুমে (১ম খণ্ড)
☑ Originality of writing: এসওপি, এলওআর, ইমেইলিং প্রফেসরস, সিভি ও রেজুমে (২য় খণ্ড)
☑ Customized Routine: নিয়মিত ফলো করা (১ম খণ্ড)
☑ Customized Routine: নিয়মিত ফলো করা (২য় খণ্ড)
☑ আমার জন্য সঠিক রাস্তা কোনটা: বিদেশ, জিআরই, স্বদেশ, বিসিএস, চাকরি?
☑ রেকমেন্ডেশন বিড়ম্বনা!
☑ Research: রিসার্চ বা গবেষণা
☑ ইউএস অ্যাম্বেসির ভেতরের পরিবেশ এবং স্টেপগুলো
☑ ইংরেজিতে দক্ষতা এবং কিছু স্ট্র্যাটিজি
☑ Teaching: শেখা ও শেখানো, দেয়া ও নেয়া
☑ ইউএস ভিসা পাওয়া না পাওয়া এবং হায়ার স্টাডির কিছু পয়েন্ট
☑ জিআরই এবং টোফেল: হায়ারস্টাডির প্রস্তুতি হোক স্ট্র্যাটিজিক্যালি (পার্ট- ১)
☑ জিআরই এবং টোফেল: হায়ারস্টাডির প্রস্তুতি হোক স্ট্র্যাটিজিক্যালি (পার্ট- ২)
☑ জিআরই এবং টোফেল: হায়ারস্টাডির প্রস্তুতি হোক স্ট্র্যাটিজিক্যালি (পার্ট- ৩)
☑ জিআরই এবং টোফেল: হায়ারস্টাডির প্রস্তুতি হোক স্ট্র্যাটিজিক্যালি (পার্ট- ৪)
☑ আমার অভিজ্ঞতা: জিআরই প্রস্তুতি এবং পরীক্ষা
☑ আমার অভিজ্ঞতা: টোফেল প্রস্তুতি এবং পরীক্ষা
☑ আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা এবং দরকারি কৌশল