Vocabulary: এতে দুর্বলতা, ভীতি, সমস্যা, সমস্যা কাটাবার উপায় এবং – এটি কি আসলেই গুরুত্বপূর্ণ নয়?!

হায়ার স্টাডির জন্য জিআরই-টোফেলের প্রিপারেশন যারা নিচ্ছেন, তাদের সবার প্রশ্ন থেকে ডেটা নিলে বোধহয় কমন সমস্যা বা দুর্বলতা হিসেবে ঘুরেফিরে আসবে – Vocabulary, Reading Comprehension, Analytical Writing এবং Speaking (TOEFL). এক এক করে এগুলো নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা রাখছি। ম্যাথ নিয়ে সমস্যা থাকে সম্ভবত তুলনামূলক কম মানুষের, তাছাড়া হাই স্কুল লেভেলের ম্যাথে প্র্যাকটিস করলেই যে কারো উন্নতি করা সম্ভব, কাজেই সেটি নিয়ে লিখলেও হয়তো ভবিষ্যতে লিখবো।

রিয়েল সিচুয়েশানঃ

বাংলাদেশ কিংবদন্তী এবং “শোনা কথা” – র দেশ। এখানে হায়ার স্টাডি এবং বিদেশ যাবার প্রায় প্রতিটি স্টেজ নিয়ে নানান কিংবদন্তী চালু আছে। তেমনি একটি কিংবদন্তী হল – জিআরই তে এখন আর ভোকাবুলারি লাগে না।

কিন্তু সঠিক কথাটি হল – বছর কয়েক আগে জিআরই এর প্রশ্নের ধরণ একটু চেঞ্জ হয়েছে, সরাসরি ভোকাবুলারি রিলেটেড প্রশ্ন আসে না। এবং খুব কঠিন কঠিন শব্দ তুলনামূলক কম আসে। কিন্তু ইন জেনারেল নিজের স্ট্রেংথ বাড়াতে হলে – একজনের স্ট্রং ভোকাবুলারি তাকে নানাভাবে সাহায্য করবে, যেমন –

১. অ্যানালিটিক্যাল রাইটিংয়ে ভালো রেসপন্স লেখা (এই অংশের স্কোর নিয়ে অনেকে তেমন মাথা না ঘামালেও, এটির স্কোর খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং ইমপ্যাক্ট ফেলে),
২. পড়ার স্পিড বাড়া,
৩. ভার্বালে সবক’টি সেকশনে সবল হওয়া,
৪. ইংরেজিতে কমিউনিকেশানে ফ্লুয়েন্ট হওয়া ইত্যাদি।

এবং অতি অবশ্যই, দুর্বল ভোকাবুলারি তাকে সমস্যায় ফেলবে।

সাধারণ কিছু সমস্যা এবং সমাধানঃ

১. ভোকাবুলারি পড়তে খুব বিরক্ত লাগে। “মুখস্ত” হয় না। যা পড়ি, পরদিন তার অর্ধেক ভুলে যাই। আমার জন্য সঠিক উপায় কোনটি?

**সত্যি বলতে একবার একটা ওয়ার্ড পড়লেই মনে রাখতে পারবে, এটা একজন গড়পড়তা মানুষের কাছ থেকে আশা করা যায় না। আপনি একটি শব্দ ব্যবহার করার মত দক্ষ হবেন অন্তত আট-দশবার শব্দটি দেখলে, পড়লে, বললে, শুনলে, লিখলে। অর্থাৎ ব্যবহার করলে। যতগুলো ইন্দ্রিয় ব্যবহার করবেন, শব্দটি ততই পরিচিত হবে। বানান সহ। ব্যবহারের সঠিক পরিস্থিতি সহ। শব্দ “মুখস্ত” করবার চেয়ে শব্দের সাথে নিজেকে ফ্যামিলিয়ার করুন। শব্দটি আমাকে মনে রাখতে হবে – এই ভারটি মন থেকে নামিয়ে ফেলতে পারলে শব্দ আর ভীতিকর কিছু হয়ে সামনে আসবে না। একদিনে বেশী প্রেশার নয়, বরং বেশ কিছুদিন সময় নিয়ে প্রতিদিন অল্প অল্প করে পড়তে পারলে কাজে দেয়। বিশটি শব্দ পড়তে সময় লাগে খুব কম। পরদিন সেই বিশটির দশটি ভুলে যাবেন, কাজেই রিভিউ করবেন দশ মিনিট নিয়ে। ব্যস।

আর সঠিক উপায় হিসেবে একেকজন একেকভাবে এগোয়। কেউ ম্যানুয়ালি, ওয়ার্ড লিস্ট পড়ে (সাধারণত A থেকে আর B তে যাওয়া হয়ে ওঠে না!)। কেউ নেমোনিক্স দিয়ে মনে রাখে। কেউ রুট দিয়ে। নিজের জন্য সঠিক উপায়টা কিন্তু নিজেকেই বের করতে হবে। কখনো কখনো অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ (যেমন – Painless GRE) কাজে দেয়।

২. ৮০০ ওয়ার্ড তো পড়ে ফেললাম। হাতে তো সময় এক মাস। এত ওয়ার্ড পড়ে লাভ নেই, শেষ করতে পারবো না, মনেও রাখতে পারবো না।

**সত্যি বলতে, বেছে পড়া, গুণে পড়া – এ প্রবণতা আমাদের স্কুল-কলেজের সাজেশন অনুযায়ী পড়ার মত। আপনি একটু বেশী পড়লে কখনোই ঠকবেন না। অনেক সময় দেখা যায় আমরা তাড়াহুড়ো করে, ঝোঁকের মাথায়, অন্যেরটা দেখাদেখি প্রিপারেশন নিয়ে আধাখাপচা প্রস্তুতির পরীক্ষা দিই। দিয়ে নিজেরও অস্বস্তি লাগে, ফলও মনমত হয় না। এজন্য একটু আগে থেকে প্ল্যান করা উচিৎ। আর ভোকাবুলারি যদি সমৃদ্ধ হয়, তাহলে এটি লং টার্মে উপকার করবে। জিআরই দিয়ে দিলেই তো শেষ – এটি ভাবার কোন কারণ নেই, আপনাকে গ্র্যাজুয়েট লাইফেও অনেক কিছু লিখতে ও প্রেজেন্ট করতে হবে।

ধরি কেউ দশ হাজার শব্দ মুখস্ত করে ফেলেছে (কথার কথা), আর আপনি তিনশো ওয়ার্ড খুব কষ্টে মুখস্ত করে কোষ্ঠকাঠিন্যের রুগীর মত চেহারা করে ঘুরছেন। আসলে কষ্ট পাবার কিছু নেই। যে বেশী জানে, সে আসলেই কি খুব বেশী জানে? আসলে দশ হাজার শব্দের মিনিং জানলেই যে তার ভোকাবুলারি খুব স্ট্রং তা নয়, বরং তাকে নিশ্চিত করতে হবে –

ক) সে শব্দগুলির সেকেন্ডারি, টারশিয়ারি এবং আরও কোন মিনিং থাকলে সেটা জানে,
খ) সে শব্দগুলির “টোন” জানে (অর্থাৎ পজিটিভ না নেগেটিভ, কড়া না নরম অর্থাৎ Connotation),
গ) সে শব্দগুলো কোন পরিবেশে ব্যবহার করতে হয় সেটি জানে, অর্থাৎ এটি রেস্টুরেন্টে বসে বন্ধুর কাঁধে চাপড় মেরে ব্যবহার করার মত শব্দ, না শুধুই ফর্মাল পরিবেশে ব্যবহার করার শব্দ,
ঘ) সে শব্দগুলি শুধু জানেই না, ব্যবহার করতে পারে এবং করে ইত্যাদি।

সহজেই অনুমেয়, এই স্কিলগুলো ডেভেলপ করা শর্ট টার্মে সম্ভব নয়। কাজেই লং টার্মে একটু কষ্ট করুন। দু’চার হাজার টাকা জমাতে আমরা কত কষ্ট করি, তারপর যেখানে সেখানে ঢেলে দিই। যা আপনার সম্পদ হয়ে থাকবে, সেটি জমাতে একটু কষ্ট করা কেন নয়?

তিন-চার হাজার শব্দ মুখস্ত করতে হবে, এটি অনেকের কাছে খুব ভয়ের ব্যাপার হয়ে দেখা দেয়। এভাবে চিন্তা করুন, হাতে সময় ছয় মাস। ছয় মাসে একশো আশি দিন। তিন হাজারকে যখন একশো আশি দিয়ে ভাগ দেবেন, তখন কিন্তু ভার খুবই কম হয়ে আসবে। আমি পারছি তো? পারবো তো? এত স্লো কেন? সব ভুলে যাই কেন? – এ জাতীয় প্রশ্ন না করে চেষ্টা করুন সমস্যা সমাধানে মন দিতে – সেটিই যুক্তিসঙ্গত।

৩. পড়ার সময় মনে থাকে। লেখার সময় ওয়ার্ডটা মনে থাকে না। আবার দেখলে তারপর মনে পড়ে।

**এটিই একটি শব্দের বৈশিষ্ট্য। তবে এই দুর্বলতা দূর হয়ে যাবে যখন আপনি বারবার শব্দটি ব্যবহার করবেন। সাহস করে ব্যবহার করুন, দেখবেন ঠিকই পারবেন। একটু কষ্ট করে মনে করার চেষ্টা করুন, মাঝে মাঝে ঠিকই মনে পড়বে!

দাবা খেলার একটি লেসনে Joshua Waitzkin বলেছিলেন, When your brain hurts, when you don’t want to think, when you can’t take it anymore – that’s when you’re learning. অর্থাৎ, যখন আপনার খুব কষ্ট হয় একটা কিছু শিখতে, তখুনি বুঝবেন, আরেকটু এফোর্ট দিলে আপনি শিখতে পারবেন।

অনেক মন্দ কথার মধ্যে (!) একটা সুখের কথা বলে দিই। খুব কঠিন ভোকাবুলারি ব্যবহার না করেও, যদি আপনার লেখার অর্গানাইজেশন ভালো হয় – অর্থাৎ গুছিয়ে, ম্যাচিউরড ওয়েতে যদি আপনার লেখাকে প্রেজেন্ট করতে পারেন, তাহলেও আপনার স্কোর ভালো আসবে। কথা বড় অস্ত্র, একে ব্যবহার করতে পারলে সবক্ষেত্রেই উপকার হবে, চাই রিটেন ফর্মেই হোক আর অরাল ফর্মেই হোক।

পরিশেষে বলবো, নিজেকে একটা ছোট্ট বাচ্চা হিসেবে কল্পনা করুন। সে যখন মায়ের ভাষায় একটা শব্দ বেশ কষ্ট করে ভুলভাল উচ্চারণ করে, তখন কিন্তু তাকে কেউ দোষ দেয় না, কারণ সে শিখছে। আমরা যখন গ্রামার, নিয়মকানুন ইত্যাদি ব্যাপার মাথায় রেখে একটা সেকেন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ শিখতে এগুই, তখন ব্যাপারটি কঠিন হয়। কিন্তু যখন একটা বাচ্চার মতই আগ্রহ নিয়ে নতুন শব্দ শিখবো, তখন ব্যাপারটি সহজ এবং আনন্দময় হবে। ছোটবেলায় সবাই একটা ভয় ঢুকিয়ে দেয়, অংক আর ইংরেজি হল সবচেয়ে কঠিন, সেটি আমাদের ব্রেইনে পাকাপোক্তভাবে বসে যায়। এটি সরিয়ে এগোন। অনেক অশিক্ষিত মানুষ হয়তো লিখতে পারে না, কিন্তু বলতে বলতেই বলা শিখে যায়। কারণ ভাষায় দক্ষতা অর্জন করতে গেলে এভাবে শেখার চেয়ে ইফেক্টিভ কিছু নেই।

হ্যাপি লার্নিং।

 

– ইসহাক খান, প্রাক্তন গ্রেক ফ্যাকাল্টি


নিচের লিংক থেকে ইসহাক খানের লেখা অন্যান্য আর্টিকেলগুলো পড়তে পারেন-

 স্টুডেন্টদের সাধারণ দুর্বলতা – পার্ট ১ – Vocabulary
 স্টুডেন্টদের সাধারণ দুর্বলতা – পার্ট ২ – Analytical Writing
 স্টুডেন্টদের সাধারণ দুর্বলতা – পার্ট ৩ – Reading Comprehension
 স্টুডেন্টদের সাধারণ দুর্বলতা – পার্ট ৪ – Speaking (TOEFL)
 Originality of writing: এসওপি, এলওআর, ইমেইলিং প্রফেসরস, সিভি ও রেজুমে (১ম খণ্ড)
 Originality of writing: এসওপি, এলওআর, ইমেইলিং প্রফেসরস, সিভি ও রেজুমে (২য় খণ্ড)
 Customized Routine: নিয়মিত ফলো করা (১ম খণ্ড)
 Customized Routine: নিয়মিত ফলো করা (২য় খণ্ড)
 আমার জন্য সঠিক রাস্তা কোনটা: বিদেশ, জিআরই, স্বদেশ, বিসিএস, চাকরি?
 রেকমেন্ডেশন বিড়ম্বনা!
 Research: রিসার্চ বা গবেষণা
 ইউএস অ্যাম্বেসির ভেতরের পরিবেশ এবং স্টেপগুলো
 ইংরেজিতে দক্ষতা এবং কিছু স্ট্র্যাটিজি
 Teaching: শেখা ও শেখানো, দেয়া ও নেয়া
 ইউএস ভিসা পাওয়া না পাওয়া এবং হায়ার স্টাডির কিছু পয়েন্ট
 জিআরই এবং টোফেল: হায়ারস্টাডির প্রস্তুতি হোক স্ট্র্যাটিজিক্যালি (পার্ট- ১)
 জিআরই এবং টোফেল: হায়ারস্টাডির প্রস্তুতি হোক স্ট্র্যাটিজিক্যালি (পার্ট- ২)
 জিআরই এবং টোফেল: হায়ারস্টাডির প্রস্তুতি হোক স্ট্র্যাটিজিক্যালি (পার্ট- ৩)
 জিআরই এবং টোফেল: হায়ারস্টাডির প্রস্তুতি হোক স্ট্র্যাটিজিক্যালি (পার্ট- ৪)
 আমার অভিজ্ঞতা: জিআরই প্রস্তুতি এবং পরীক্ষা
 আমার অভিজ্ঞতা: টোফেল প্রস্তুতি এবং পরীক্ষা
 আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা এবং দরকারি কৌশল