বাংলাদেশে কিছু কিছু দৃশ্য খুবই সম্ভব। তার মধ্যে একটি হল, রোগী ডাক্তারকে গিয়ে বলছে, ডাক্তার সাহেব, আমার পেটে ব্যথা। ঐ ওষুধটা লিখে দিন। যদিও ডাক্তারের মূল কাজ “ওষুধ লেখা” নয়, মূল কাজ রোগ নির্ণয় করা।

আমরা যারা স্টুডেন্ট, তারা অনেক সময় টিচারকে ব্যবহার করার চেষ্টা করি একটি জীবন্ত টেপরেকর্ডার অথবা একটি চলমান গাইড বই হিসেবে। তাই বেশীরভাগ সময়ই প্রশ্ন থাকে,“ভাই, এই অঙ্কটা মেলাবো কী করে?” অথবা, “এই প্রশ্নটার উত্তর কী হবে? এ, বি না সি?” খুব কম সময়ই প্রশ্ন থাকে গাইডলাইন বিষয়ে, রিজনিং বিষয়ে। এমনকি সঠিক উত্তর কেন এটা হবে তা নিয়েও অনেক সময় চিন্তা থাকে না! বেশীরভাগ স্টুডেন্টের প্রধান মাথাব্যথা থাকে –বাসায় যাবার আগে সব প্রশ্নের সঠিক উত্তর যেন “দাগিয়ে” নিয়ে যেতে পারি।

একটা প্রবাদ আছে, “যে গুরুর গৃহে পা রাখার দিন মনে হবে, গুরুকে ছাড়া এক পা-ও অগ্রসর হতে পারো না, আর বেরিয়ে আসার দিন মনে হবে, গুরুকে তোমার প্রয়োজন নেই, তিনিই শ্রেষ্ঠ গুরু। তিনি যেন একদিন শিষ্যের জন্য সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় হতে পারেন”।

সত্যিই তাই। কথাটা বোধকরি আরও বেশী সত্যি জিআরই, টোফেল ইত্যাদি পরীক্ষার ক্ষেত্রে। এই পরীক্ষাগুলোতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেটি শেখা, তা হল “রিজনিং (Reasoning)”. অর্থাৎ যৌক্তিকভাবে একটা সমস্যা সমাধান করতে কী করে এগুতে হয় তা শেখা। একটি সমস্যার উত্তর কী তা নয়, বরং একটি সমস্যার সমাধানে চিন্তা করতে হবে কীভাবে এটি শেখা। আর এটিই শেখানোর কথা টিচারের। এই ডেফিনিশনটা যেকোনো কোর্সের শুরুতেই মাথায় ঢুকিয়ে দিলে একজন টিচার যেমন সম্পূর্ণ দিতে পারবেন, একজন স্টুডেন্টও তেমনি সম্পূর্ণ আদায় করতে পারবেন।

কয়েকটি পয়েন্ট সবসময় মনে রাখা উচিৎ, যেটি আমাদের দেশে বাচ্চাদের কখনো শেখানো হয় না বা মনে করিয়ে দেয়া হয় না। একটি হল, প্রাইমারী লেভেলের পড়াশোনায় টিচারের ইমপ্যাক্ট থাকে খুব বেশী, কারণ স্টুডেন্ট একেবারেই কাদার দলার মত, তার কাছে কিছুই নেই। যত ওপরের দিকে যাওয়া হতে থাকে, টিচারের ইমপ্যাক্ট কমতে থাকে আর নিজের ইমপ্যাক্ট বাড়তে থাকে। গ্র্যাজুয়েট লেভেলের পড়াশোনায় স্টুডেন্টের নিজে থেকেই অনেক কিছু করার সুযোগ থাকে; টিচার, অ্যাডভাইজার বা প্রোফেসর শুধু গাইড করেন আর কোন পথে এগুনো উচিৎ সেটি সময়ে সময়ে ধরিয়ে দেন, ভুলত্রুটি হলে বা ট্র্যাকের বাইরে চলে গেলে আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসেন – এটুকুই।

তাহলে কেন টিচারের ওপর এত নির্ভরতা? কারণ হিসেবে হয়তো বলা হতে পারে স্টুডেন্ট দুর্বল, তাই। কিন্তু সম্ভবত মূল কারণ হল স্টুডেন্টের একটু কষ্ট করার প্রতি অনীহা। কাগজকলম হাতে একটি সমস্যা নিয়ে কাটাকুটি, একটু চিন্তা করার ধৈর্য, ইচ্ছে আজকাল বড় কম। বেশীরভাগ কষ্ট করা বলতে বোঝে পেন্সিল অথবা হাইলাইটার দিয়ে দাগানো!

আরেকটি ছোট্ট পয়েন্ট দিয়ে লেখা শেষ করি। একজনের কাছ থেকে বহুদিন আগে পাওয়া উপদেশ এটি। কোথাও লিখে রাখি নি, কিন্তু মনে আছে। তিনি বলেছিলেন, যখন কোন সলিউশন দেখবে, তখন দেখবে “কেন” এভাবে করা হয়েছে। কখনোই দেখবে না, “কীভাবে”করা হয়েছে। যখুনি আমরা দেখতে যাবো “কীভাবে” সলিউশন করা হয়েছে, অর্থাৎ অঙ্কের বা সলিউশনের স্টেপগুলো কী, তখুনি মুখস্ত করার প্রবণতা শুরু হবে। এবং ধীরে ধীরে তা আমাদেরকে দুর্বল করে দেবে। “কেন” এভাবে করা হয়েছে তা বুঝতে চাওয়ার ইচ্ছেই প্রমাণ করে, আমরা রিজনিং শিখতে চাই। আর এটাই দরকার। এটাই সবচেয়ে বড় অস্ত্র।

জিআরই টোফেলের প্রায় সমস্ত ম্যাটেরিয়ালই এমনভাবে তৈরি করা, যেন একজন স্টুডেন্ট নিজে নিজেই এগুতে পারে, অর্থাৎ সেলফ-এক্সপ্ল্যানেটরি। তাছাড়া এখানে এমন কিছুই নেই, যা আমরা আগে থেকে জানি না, করতে হয় শুধু নির্দিষ্ট কিছু টপিকের ওপর প্র্যাকটিস।বইপত্র যত দুর্বোধ্য হয়, ততই লেখাপড়ার মান খারাপ হয় কারণ স্টুডেন্টরা পড়ে বুঝতে পারে না (যেমন আমাদের মাধ্যমিক আর উচ্চ-মাধ্যমিকের বাংলা মিডিয়ামের বোর্ড বইগুলো)। নিজে নিজে বুঝতে শেখা, নিজে নিজে সমাধান করতে শেখার মত বড় ক্ষমতা একজন স্টুডেন্টের জন্য কিছুই হতে পারে না। আর এটির জন্যই দরকার একটু সময় নিয়ে খাটুনির মানসিকতা। আবেগের বশে এক রাত্তিরে দশ ঘণ্টা খাটুনি নয়, দু’মাস ধরে বেশ বিরক্তির সাথে নিয়মিত কয়েক ঘণ্টা করে খাটুনি।

ধন্যবাদ এবং শুভকামনা।

 

– ইসহাক খান, প্রাক্তন গ্রেক ফ্যাকাল্টি


নিচের লিংক থেকে ইসহাক খানের লেখা অন্যান্য আর্টিকেলগুলো পড়তে পারেন-

 স্টুডেন্টদের সাধারণ দুর্বলতা – পার্ট ১ – Vocabulary
 স্টুডেন্টদের সাধারণ দুর্বলতা – পার্ট ২ – Analytical Writing
 স্টুডেন্টদের সাধারণ দুর্বলতা – পার্ট ৩ – Reading Comprehension
 স্টুডেন্টদের সাধারণ দুর্বলতা – পার্ট ৪ – Speaking (TOEFL)
 Originality of writing: এসওপি, এলওআর, ইমেইলিং প্রফেসরস, সিভি ও রেজুমে (১ম খণ্ড)
 Originality of writing: এসওপি, এলওআর, ইমেইলিং প্রফেসরস, সিভি ও রেজুমে (২য় খণ্ড)
 Customized Routine: নিয়মিত ফলো করা (১ম খণ্ড)
 Customized Routine: নিয়মিত ফলো করা (২য় খণ্ড)
 আমার জন্য সঠিক রাস্তা কোনটা: বিদেশ, জিআরই, স্বদেশ, বিসিএস, চাকরি?
 রেকমেন্ডেশন বিড়ম্বনা!
 Research: রিসার্চ বা গবেষণা
 ইউএস অ্যাম্বেসির ভেতরের পরিবেশ এবং স্টেপগুলো
 ইংরেজিতে দক্ষতা এবং কিছু স্ট্র্যাটিজি
 Teaching: শেখা ও শেখানো, দেয়া ও নেয়া
 ইউএস ভিসা পাওয়া না পাওয়া এবং হায়ার স্টাডির কিছু পয়েন্ট
 জিআরই এবং টোফেল: হায়ারস্টাডির প্রস্তুতি হোক স্ট্র্যাটিজিক্যালি (পার্ট- ১)
 জিআরই এবং টোফেল: হায়ারস্টাডির প্রস্তুতি হোক স্ট্র্যাটিজিক্যালি (পার্ট- ২)
 জিআরই এবং টোফেল: হায়ারস্টাডির প্রস্তুতি হোক স্ট্র্যাটিজিক্যালি (পার্ট- ৩)
 জিআরই এবং টোফেল: হায়ারস্টাডির প্রস্তুতি হোক স্ট্র্যাটিজিক্যালি (পার্ট- ৪)
 আমার অভিজ্ঞতা: জিআরই প্রস্তুতি এবং পরীক্ষা
 আমার অভিজ্ঞতা: টোফেল প্রস্তুতি এবং পরীক্ষা
 আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা এবং দরকারি কৌশল