অনেকে এই সেকশনকে যমের মত ভয় পায়। তবে ভালো স্কোর করতে হলে একে ফেইস করতেই হবে, কারণ ভার্বালের প্রায় অর্ধেক প্রশ্ন আসে রিডিং কম্প্রিহেনশন থেকেই। নানান টপিক, যেমন আর্টস, সায়েন্স, স্পেইস, জিওলজি, হিস্ট্রি, লিটরেচার, কালচার, পলিটিক্স সব থেকেই আসতে পারে। ছোট, মাঝারি, বড় সব সাইজেরই আসে। একটা সেকশানের টিপস অ্যান্ড ট্রিক্স নিয়ে কথা না বলে ইন জেনারেল স্ট্র্যাটেজি নিয়ে কথা বলা সুবিধা, তাই সেভাবেই বলছি।

এখানে আপনাকে মস্ত সুবিধে দেবে ভালো রিডিং স্পিডঅর্থাৎ দ্রুত পড়ে একটা প্যাসেজ শেষ করতে পারা। অনেক সময় ট্রিক্স হিসেবে বলা হয় যে আগে প্রশ্ন পড়ে তারপর উত্তরটা প্যাসেজের ভেতর খুঁজে বার করা উচিৎ, কিন্তু এটা ভুল ধারণা। এটা ফলো করতে গেলে আপনি কয়েকবার আধাখাপচাভাবে প্যাসেজটা পড়ার টাইম ঠিকই নষ্ট করবেন, কিন্তু পুরো প্যাসেজটা বুঝে উঠতে পারবেন না। কাজেই প্রশ্ন দেখার আগে প্যাসেজটা ভালোভাবে খুব দ্রুত পড়ে নিন (Skimming, not skipping). খুব দ্রুত এবং সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে পড়াটা অভ্যাসের ব্যাপার।

প্যাসেজ পড়ার সময় কী কী প্রশ্ন থাকতে পারে, কোন প্যারাটা একটু বেশী মন দিয়ে দেখবো এসব প্রশ্ন মাথা থেকে সরাতে হবে, কারণ এগুলো ডিস্ট্র্যাকশান। অনেক সময় শেষ পর্যন্ত খেই রাখা যায় না, শুরুতে কী নিয়ে কথা শুরু হয়েছিল তা আর মনে থাকে না শেষে এসে! এজন্যই বড় বড় প্যাসেজ পড়া জরুরী, যেমন জিআরই বিগ বুকের পুরনো দিনের প্যাসেজগুলো। রিয়েল জিআরইতে এত বড় প্যাসেজ আসবে না, কিন্তু এগুলোর প্র্যাকটিস কাজে দেবে খুব। প্যাসেজ পড়তে পড়তে খুব দ্রুত গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো নোট ডাউন করে নিন। হাতে শর্ট নোট নিলে যে উপকারটা হবে, তা হল গুরুত্বপূর্ণ অনেক পয়েন্ট আপনার মাথায় থেকে যাবে, প্রশ্ন পড়তে পড়তে একশোবার প্যাসেজে ব্যাক করতে হবে না। এছাড়াও আপনি ব্যাক করার সময় জানবেন, কোথায় কী খুঁজতে হবে।

প্যাসেজ পড়া হয়ে গেলে তারপর প্রশ্ন পড়ুন, অপশনগুলো যাচাই করুন। দেখবেন অনেকগুলো প্রশ্নই প্যাসেজটি পড়ার কারণে আপনি জানেন। তারপর ঠিকটাতে দাগ দিন। আগেই হতাশ হবেন না, বরং বেশ কয়েকটি প্যাসেজ বেশ কয়েকদিন ধরে প্রথমে আনটাইমড কন্ডিশনে, তারপর টাইমড কন্ডিশনে পড়া প্র্যাকটিস করুন। ধীরে ধীরে উন্নতি হবে। আপনি যদি সায়েন্স ব্যাকগ্রাউন্ডের ছাত্র হোন তাহলে আর্টস রিলেটেড প্যাসেজ বেশী প্র্যাকটিস করুন। যদি আর্টস ব্যাকগ্রাউন্ডের ছাত্র হোন তাহলে সায়েন্স রিলেটেড প্যাসেজ পড়ুন। অর্থাৎ, কমফোর্ট জোন ছেড়ে বেরিয়ে এসে প্র্যাকটিস করুন।

পুরো প্যাসেজটি পড়ে ফেললে তারপর প্রশ্নের দিকে এগোন। অপশনগুলো যাচাই করে উত্তর দিন। আর উত্তর দেয়ার সময় মনে রাখবেন এই পয়েন্টগুলোঃ

১. প্যাসেজে যা বলা হয়েছে তা-ই ঠিক। আপনি কী জানেন না জানেন তাতে কিছু যায় আসে না।
২. প্যাসেজে এক্সপ্লিসিটলি যা বলা নেই, তা অনুমান করার অধিকার নেই। কাজেই কিছু আন্দাজে ধরে নেবেন না।
৩. যা সত্যি, তা কি পুরোপুরি সত্যি? যা মিথ্যে, তা কি পুরোপুরি মিথ্যে? নিজেকে জিজ্ঞেস করুন। একটা কথার তিনটি অংশ আছে। একটা অপশনে দুটো অংশ কাভার করছে। সেক্ষেত্রে কিন্তু অপশনটি ভুল।

এভাবে মাল্টিপল চয়েজ প্রশ্নগুলো সমাধান করুন।

আরও আছে। অনেক ক্ষেত্রে জানতে চাইবে, অথারের মূল বক্তব্য কী? মূল উদ্দেশ্য কী? প্যাসেজের সামারি কী? মূল আইডিয়া কী? অথবা প্যাসেজের দ্বিতীয় অংশে কী কী চেঞ্জ এসেছে? এক্ষেত্রে নিজেকে প্রশ্ন করুন, পুরো প্যাসেজটাকে যদি এক শব্দে বা এক বাক্যে প্রকাশ করতে বলা হয়, তাহলে আপনি কী করে বলবেন? উত্তর যা হবে, তা-ই হল মূল আইডিয়া।

নিজেকে পরিমাণমত অবিশ্বাস (!) করতে শিখুন। আপনার মন অনেক ক্ষেত্রেই ভুল বলবে, বেশী বলবে বা কম বলবে, বিরক্তির কারণে বাদ দিতে বলবে। ভ্রূ কুঁচকে বার করুন – লজিক কী বলে? প্যাসেজটি কী বলে?

এবার প্র্যাকটিস শুরু করুন, যেকোনো ভালো বই থেকে, এক পাশ থেকে। বেশ কয়েকটি প্যাসেজ সবগুলো টপিক বা থিম থেকে সলভ করুন। প্রশ্নগুলো নিয়ে মাথা ঘামান, অপশনগুলো নিয়ে ভাবুন, আর ব্যাখ্যাগুলো বুঝে নিন। প্র্যাকটিস করতে করতে দক্ষতা বাড়বে।

প্র্যাকটিস করলে উন্নতি হয় এটা তো সবাই জানে, তারপরও একই ভ্যাজর ভ্যাজর বারবার করছি কেন? কারণ জিআরই জাতীয় পরীক্ষাগুলোতে প্র্যাকটিস করতে করতে একটা Intuition ডেভেলপ করে, যেটা মস্ত বড় অস্ত্র। বেশী বেশী প্র্যাকটিস করতে করতেই দেখবেন একটা সময় আন্দাজ করতে পারবেন কী করে একটা প্রশ্ন সলভ করতে এগুতে হয়, কীভাবে আন্দাজ করতে হয়, কীভাবে ভুল উত্তরটা বাদ দেয়া যায়। এটা একদিনের জন্য বসলে পারা যাবে না, এজন্যই দীর্ঘমেয়াদী এবং বিরক্তিকর প্রসেসের সমর্থন করছি (ঠিক এই পোস্টটা যেমন!)। আণ্ডারগ্র্যাডের টার্ম ফাইনাল পরীক্ষাগুলো, যেখানে অনেক তথ্য মাথায় রাখতে হয়, সে পরীক্ষাগুলোর সাথে জিআরই-জাতীয় পরীক্ষাগুলোর পার্থক্য এই যে, এখানে প্র্যাকটিস করতে করতে দক্ষতা বাড়ে, নতুন করে শেখার জিনিস কমই আছে। এটা বুঝে ফেললেই আপনি বেশ খানিকটা সবল।

জেনরেলি একটা কথা বলে রাখি। ভার্বাল অংশে অবশ্যই চেষ্টা করবেন যেন একটা ডিসেন্ট স্কোর আসে, কারণ অনেক ভার্সিটিতে অ্যাপ্লাই করার জন্য ভার্বালে ১৫০ এর ওপরে চায়। চেষ্টা করুন এ থেকেও ওপরে রাখতে, এবং বিশ্বাস রাখুন যে এটা খুবই সম্ভব যদি আপনি সময় দেন।

 

– ইসহাক খান, প্রাক্তন গ্রেক ফ্যাকাল্টি


নিচের লিংক থেকে ইসহাক খানের লেখা অন্যান্য আর্টিকেলগুলো পড়তে পারেন-

 স্টুডেন্টদের সাধারণ দুর্বলতা – পার্ট ১ – Vocabulary
 স্টুডেন্টদের সাধারণ দুর্বলতা – পার্ট ২ – Analytical Writing
 স্টুডেন্টদের সাধারণ দুর্বলতা – পার্ট ৩ – Reading Comprehension
 স্টুডেন্টদের সাধারণ দুর্বলতা – পার্ট ৪ – Speaking (TOEFL)
 Originality of writing: এসওপি, এলওআর, ইমেইলিং প্রফেসরস, সিভি ও রেজুমে (১ম খণ্ড)
 Originality of writing: এসওপি, এলওআর, ইমেইলিং প্রফেসরস, সিভি ও রেজুমে (২য় খণ্ড)
 Customized Routine: নিয়মিত ফলো করা (১ম খণ্ড)
 Customized Routine: নিয়মিত ফলো করা (২য় খণ্ড)
 আমার জন্য সঠিক রাস্তা কোনটা: বিদেশ, জিআরই, স্বদেশ, বিসিএস, চাকরি?
 রেকমেন্ডেশন বিড়ম্বনা!
 Research: রিসার্চ বা গবেষণা
 ইউএস অ্যাম্বেসির ভেতরের পরিবেশ এবং স্টেপগুলো
 ইংরেজিতে দক্ষতা এবং কিছু স্ট্র্যাটিজি
 Teaching: শেখা ও শেখানো, দেয়া ও নেয়া
 ইউএস ভিসা পাওয়া না পাওয়া এবং হায়ার স্টাডির কিছু পয়েন্ট
 জিআরই এবং টোফেল: হায়ারস্টাডির প্রস্তুতি হোক স্ট্র্যাটিজিক্যালি (পার্ট- ১)
 জিআরই এবং টোফেল: হায়ারস্টাডির প্রস্তুতি হোক স্ট্র্যাটিজিক্যালি (পার্ট- ২)
 জিআরই এবং টোফেল: হায়ারস্টাডির প্রস্তুতি হোক স্ট্র্যাটিজিক্যালি (পার্ট- ৩)
 জিআরই এবং টোফেল: হায়ারস্টাডির প্রস্তুতি হোক স্ট্র্যাটিজিক্যালি (পার্ট- ৪)
 আমার অভিজ্ঞতা: জিআরই প্রস্তুতি এবং পরীক্ষা
 আমার অভিজ্ঞতা: টোফেল প্রস্তুতি এবং পরীক্ষা
 আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা এবং দরকারি কৌশল