সামনে জিআরই পরীক্ষা! হাতে একদমই সময় নেই। আগে পরীক্ষা দেবার অভিজ্ঞতা না থাকায় শেষ সময়ে এসে অনেকেই ঘাবড়ে যান। মানসিক চাপে শেষ সময়ে এসে কি করনীয় সে বিষয়টি একেবারেই ভুলে যান। তবে একটু আগাম পরিকল্পনা থাকলে এই সমস্যা অনেকখানি এড়ানো যায়, বাড়ানো যায় মনোবল। যা হয়তো আপনাকে ভালো জিআরই স্কোর গড়তে সহায়ক হতে পারে।

চাই পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্ষিপ্ত তালিকা:

পরীক্ষা শেষ করা মাত্রই পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা চাইবে ইটিএস যেগুলোতে বিনামূল্যে চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে জিআরই স্কোর পাঠানোর সুয়োগ পাবেন। পরীক্ষার আগের দিন তাই পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রস্তুত করে রাখতে হবে। যেন চাওয়া মাত্র তাৎক্ষণিকভাবে হাতের নাগালে পেতে পারেন। অন্যথায় বিনামূল্যের এই সুযোগ হেলায় ফেলায় চলে যেতে পারে।

ভেন্যু চিনে আসা:

ঢাকা শহরের প্রধান সমস্যা ট্রাফিক জ্যাম। সময় মতো বের হয়েও সঠিক সময়ে পৌছানো সম্ভব নাও হতে পারে। আর অপরিচিত জায়গায় হলে ভেন্যু খুঁজে বের করার জন্যও সময়ের দরকার। আগের দিন ভেন্যু চিনে আসলে পরেরদিন খুঁজে পাওয়া সহজ হবে। তাছাড়া যাতায়াতে কতো সময় লাগতে পারে তা একটি আনুমানিক হিসেব কষা সহজ হবে। ভালো হয় আগে থেকে কোন সিএনজি ট্যাক্সির সাথে চুক্তি করে রাখা, তাহলে যানবাহন খোঁজার সময় নষ্ট হয় না। 

সঙ্গী হোক কাছের বন্ধু:

পরীক্ষার আগে একা থাকলে বেশি টেনশন কাজ করতে পারে। একজন বন্ধুকে ঐদিন আপনার সাথে রাখা উচিত। বন্ধুর সাথে খোশ-গল্প করে পরীক্ষার আগে টেনশনের ব্যাপরাটি এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব।

আর পড়া নয়: শেষ মুহুর্তে আপনার জন্য চাঙ্গা থাকা জরুরী। আর জিআরই আপনার একাডেমিক পরীক্ষার মতো আহামরি কিছু নয়। পরীক্ষার আগের রাতে পড়াশুনা মানসিক চাপ বাড়াতে পারে। এ চাপ থেকে দূরে থাকতে টিভি দেখে, গান শুনে অথবা খেলাধূলা করে সময় পার করা যেতে পারে। সকাল বেলা যেটুকু সময় হাতে পাওয়া যায় পাজল সুডুকু ধরণের গেইম খেলে পার করা উচিত। বই পত্র বাসায় রেখে আসা উত্তম কাজ। কেননা হাতের কাছে বই থাকলেই ইচ্ছে করবে আরো একটু পড়তে। মনের মাঝে বিভ্রম কাজ করতে পারে। মনে হবে সব কিছু ভুলে যাচ্ছি। ফলাফল হিসেবে মস্তিষ্ক আগে থেকেই লোড হয়ে থাকতে পারে।

নিয়ম-কানুন যাচাই করা:

নিয়ম-কানুনের সাথে মানিয়ে নিতে ভালোভাবে নিয়ম-কানুন দেখে নেওয়া যেতে পারে। ইটিএসের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট অথবা  জিআরই পাওয়ার-প্রিপ-২ এ টিউটোরিয়াল গাইড-লাইন থেকে নিয়ম-কানুন আয়ত্ব করে নিতে পারেন। পাওয়ার-প্রিপ-২ এর গাইড-লাইন হুবহু আসল পরীক্ষার মতোই।  

প্রয়োজনীয় জিনিস ব্যাগে গুছিয়ে রাখা:

পরীক্ষার দিন তাড়াহুড়োয় দরকারী জিনিস নিতে ভুলে যাওয়া একটি সাধারণ ঘটনা। পরীক্ষা হলে কি কি কাগজ লাগতে পারে তার একটি তালিকা করে প্রয়োজনীয় কাগজ (পাসপোর্ট/জাতীয় পরিচয় পত্র, জিআরই রেজিস্ট্রেশন টিকেটের প্রিন্ট কপি, কাটা-ওয়ালা হাত ধড়ি, খুচরা টাকা, কলম ইত্যাদি) আগের দিন রাতে একটি ব্যাগে গুছিয়ে রাখা উচিত। অন্যথায় সঠিক সময়ে দরকারি জিনিস পাওয়া যাবে না।

রিমাইন্ডার দিয়ে রাখা: 

কাজের চাপে পরীক্ষার সময় ভুলে যাওয়া অসম্ভব কিছুনা। ভুলে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে অহরহ। যেমন- সম্প্রতি গ্রেকের এক ছাত্র রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন। পরীক্ষা দিতে গিয়ে দেখলেন তার নাম নেই। পরীক্ষা দেওয়া হলো না। অকারনেই টাকা গচ্ছা গেলো। পরে অনেক খোঁজ নিয়ে জানতে পারলেন তার পরীক্ষা তারিখ তার আগের দিন চলে গেছে। এরকম দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতিতে যাতে পড়তে না হয় সেজন্য মোবাইলের ক্যালেন্ডার সেটিংস এ গিয়ে পরীক্ষার দুই দিন আগে রিমাইন্ডার সেট করতে পারেন। তাছাড়া গুগল ক্যালেন্ডারেও রিমাইন্ডার সেট করতে পারেন। অবশ্য ইটিএস থেকে একটা ইমেইল পাবেন এ বিষয়ে, তার পরেও বাড়তি রিমাইন্ডার সেট করা দোষের কিছু নেই।  

ভালো খাওয়া-দাওয়া:

 খাবারের দিকে মনোযোগী হওয়া উচিত। শেষ সময়ে পেট খারাপ হওয়া, অ্যাসিডিটি হতে পারে এমন সব খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে। পরীক্ষার সকালে খুব বেশি খাওয়া উচিত হবে না। ঘুম ঘুম ভাব চলে আসতে পারে। সে কারনে স্বাস্থ্যকর হালকা খাবার গ্রহন করা উচিত।

 মোটা কাপড় পড়া:

অধিকাংশ পরীক্ষার কেন্দ্র তাপমাত্রা অনেক কমানো থাকে। আগে থেকে প্রস্তুতি না থাকলে পরীক্ষার সময় ঠান্ডায় আপনার অস্বস্থি লাগতে পারে। মনোযোগ নষ্ট হতে পারে। ভালো প্রস্তুতি থাকার পরও স্কোর কমে যেতে পারে। তাই আগে থেকেই মোটা কাপড় পড়ে যাওয়া ভালো। যদি গরমের সময়ে আপনার পরীক্ষা থাকে তাহলে ব্যাগে করে মোটা কাপড় নিয়ে যেতে পারেন। তবে মনে রাখতে হবে পরীক্ষার সময়ে আপনার সামনে কেবল ৬ টা কাগজ, একটা পেন্সিল, একটা ইরেজার আর পাসপোর্ট নিয়ে বসতে দেবে। তাই ভেন্যুর তাপমাত্রা বুঝে আগেভাগে গায়ে জড়িয়ে নিতে পারেন। 

সঠিক সময়ে হাজির হওয়া:

পরীক্ষা কেন্দ্রে কমপক্ষে ৪৫-৬০ মিনিট আগে আসা উচিত। কেননা মূল পরীক্ষার আগে কয়েকটি ধাপ পার হতে হবে। ছবি তুলা, স্ক্যান করা, তথ্য মিলিয়ে দেখা, এক রাউন্ড প্রাকটিস করানোর জন্য ৩০মিনিটের অধিক সময় লাগতে পারে। সে কারনে সঠিক সময়ের আগে ভেন্যুতে হাজির হওয়া আবশ্যক।  

সাথে করে খাবার নিয়ে যাওয়া:

 ১৮০ মিনিটের মূল পরীক্ষার সাথে শুরুর ট্রায়াল হিসেবে আরো ৪০-৬০ মিনিট। সে হিসেবে মোট চার ঘন্টা আপনাকে পরীক্ষার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে। এই প্রস্তুতির জন্য আপনার শরীরের চাই নিরবিচ্ছিন্ন গ্লুকোজের যোগান। পরীক্ষার সময় ব্যাগে করে হালকা খাবার (স্ন্যাকস জাতীয় খাবার) এবং গ্লুকোজের শরবত রাখুন। মনে রাখবেন ব্রেইনের প্রধান কোষ নিউরনের শক্তির উৎস হলো গ্লুকোজ, কাজেই ব্রেইনকে খাটানোর আগে তাকে প্রস্তুত করে নিন। প্রতিটি ভেন্যুতে লকার রুম থাকে, চাইলে লকার রুমে জমা রাখা যাবে। বিরতির সময়ে সহজেই ১০ মিনিটের সময় তাড়াতাড়ি খেয়ে নেবেন।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.