11994290_492896034207219_312109015_nএই প্রবন্ধটি 2015 সালের অাগস্ট মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়। সামান্য সম্পাদনা করে জিআরই সেন্টারের ওয়েবসাইটে এটি পরিবেশিত হলো।

২০০৩ সালের প্রথম দিন থেকে আমেরিকায় ৪ বছর মেয়াদী ডক্টর অব ফার্মেসি (ফার্ম. ডি.) প্রবর্তন করা হয়। ফার্ম. ডি. কে ৬ বছর মেয়াদীও বলা হয়, কারণ ৪ বছর মেয়াদী ফার্মেসি স্কুলে প্রবেশের শর্ত হিসাবে ২ বছর মেয়াদী প্রি-ফার্মেসি করা থাকতে হয়। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় একই প্যাকেজের মধ্যে হাইস্কুল পাশ করা (বাংলাদেশের এইচএসসি সমমানের) স্টুডেন্টদের ভর্তি করে দুই বছর প্রি-ফার্মেসি করিয়ে তারপর চার বছরের ফার্ম. ডি. কোর্স করিয়ে থাকে। ফার্ম. ডি. কোর্স ৪ বছর নাকি ৬ বছরের এই প্রশ্নে আশা করি এখন আর কেউ দ্বিধায় পড়বেনা। ২০০৩ সালের আগে ছিল ব্যাচেলর অব ফার্মেসি, ঠিক বর্তমানের বাংলাদেশের মতোই। ডক্টর অব ফার্মেসিতে বড় যে পরিবর্তন আনা হলো তা হচ্ছে স্টুডেন্টদের পাশ করে বের হবার আগেই পেশেন্টের প্রত্যক্ষ সংষ্পর্শে আনার স্বার্থে ক্লিনিক্যাল রোটেশনের সংযুক্তি। অনেকটা বাংলাদেশে মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস হিসাবে বের হবার আগে বাধ্যতামূলক যে ইন্টার্ন করতে হয়, সেরকম। আমেরিকার অভ্যন্তরীন ফার্মেসি কোর্সে এই বিরাট পরিবর্তনের সাথে সাথে বিদেশ থেকে আমেরিকায় পাড়ি জমানো ফার্মাসিস্টদের যোগ্যতা পরিমাপেও নতুন শর্ত চাপিয়ে দেওয়া হলোঃ ৪ বছরের বিদেশী ডিগ্রি হলে হবে না, বরং ডিগ্রিটা হতে হবে ৫ বছরের। বিদেশী ডিগ্রির নাম বি.ফার্ম হোক আর ফার্ম. ডি.-ই হোক, সেটা হতে হবে ৫ বছর মেয়াদী, তার কম নয়।

অনেককেই প্রশ্ন করতে দেখা যায়, আমি আমেরিকায় গিয়ে M. Pharm করতে চাই। ফার্মেসির বিশেষায়িত শাখায় আমেরিকায় এমএস বা পিএইচডি করার বিষয়ে এই আর্টিকেলটি পড়ুন

এই গ্যাড়াকলে বন্দী হয়ে পড়লো ২০০৩-২০১৬ মধ্যবর্তী আমার মতো বাংলাদেশের ফার্মেসী গ্র্যাজুয়েট, যারা ৪ বছরের বি. ফার্ম. করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ বছর মেয়াদী বি.ফার্ম ডিগ্রি চালুর সাথে সাথে আমাদের সামনে আবারো আমেরিকায় ফার্মাসিস্ট হবার সুযোগ খুলে গেছে। কিন্তু সেই লক্ষ্যপূরণ করতে প্রয়োজন পুরো প্রক্রিয়াটির স্বচ্ছ ধারণা এবং সেই মোতাবেক প্রস্তুতি।

এক নজরে সুখবর:

২০১২ সালের স্ট্যাট অনুযায়ী আমেরিকায় ফার্মাসিস্টদের গড় বেতন ঘণ্টায় ৫৬ ডলার করে বছরে ১১৭ হাজার ডলার, এবং আগামী দশ বছরে এই চাকুরির ১৪% বৃদ্ধি ঘটবে। বাংলাদেশ থেকে ৫ বছর মেয়াদী বিফার্ম করেই কিছু পরীক্ষা দিয়ে এই আকর্ষণীয় রোজগারের অধিকারী হওয়া যাবে।

এক নজরে চ্যালেঞ্জ সমূহ:

(ক) বি.ফার্ম ডিগ্রি চার বছরের হলে হবে না। হতে হবে ৫ বছর মেয়াদী।
(খ) ফার্মেসি কাউন্সিল অব বাংলাদেশ থেকে রেজিস্ট্রেশন সনদ নিতে হবে। অতীতে দেখা গেছে নানান ঝামেলার কারণে দীর্ঘদিন সার্টিফিকেট দেওয়া স্থগিত ছিল। এরকম কিছু হলে পুরো প্ল্যানই বরবাদ হয়ে যাবে।
(গ) যে কোন পরীক্ষা দেবার আগেই আমেরিকার মাটিতে পা রাখতে হবে। এমনকি টোফেল পরীক্ষাটাও বাংলাদেশে বসে দিলে স্কোর গ্রহণ করা হবে না।
(ঘ) পরীক্ষাগুলো বেশ ব্যায়বহুল। প্রধান পরীক্ষা FPGEE দিতে 93 হাজার টাকা লাগে। প্রতিবার ফেইলের জন্য রিটেক করতে লাগে ৫৯ হাজার টাকা, আর ৫ বারের বেশি পরীক্ষা দেওয়া যায় না। আর তিনটি ছোট পরীক্ষা (TOEFL, NAPLEX and Law) দিতে সব মিলিয়ে ৬৭ হাজার টাকার মতো। ডলারের দাম ৮০ করে ধরে এই হিসাব করা হয়েছে।
(ঙ) FPGEE পরীক্ষা হয় বছরে দুই বারঃ এপ্রিল আর সেপ্টেম্বরে। সুতরাং একটা ডেট মিস করলে বা ফেইল করলে পুরো ৬ মাস পিছিয়ে যেতে হবে।
(চ) FPGEE পরীক্ষা দিয়েই সরাসরি NAPLEX পরীক্ষায় বসার অনুমতি মিলবে না। সেজন্য দরকার হবে ১,২০০ থেকে ২,০০০ ঘন্টার প্র্যাকটিসের অভিজ্ঞতা, যা একেক স্টেটে একেক রকম।

এবার ধাপে ধাপে আলোচনা করবো বাংলাদেশে বি ফার্ম ৫ম বর্ষে ওঠার পর থেকে আমেরিকায় ফার্মেসি প্র্যাকটিসের আগ পর্যন্ত কি কি করতে হবে।

পঞ্চম বর্ষের পরিকল্পনা:

১. Comprehensive Pharmacy Review for NAPLEX বইটাকে নিজের সার্বক্ষণিক সঙ্গী বানিয়ে ফেলতে হবে। মনে রাখতে হবে, যদিও ন্যাপলেক্স পরীক্ষা FPGEE এর চেয়ে কঠিন, আপনাকে FPGEE পরীক্ষার প্রস্তুতি ন্যাপ্লেক্সের বই দিয়েই দিতে হবে, কিছুটা এগিয়ে থাকার জন্য।

২. সমান্তরালে চলবে জিআরই এবং TOEFL বা IELTS এর প্রস্তুতি। এই প্রস্তুতির উদ্দেশ্য হলো স্টুডেন্ট ভিসায় আমেরিকার মাটিতে পা রাখা। আপনার লক্ষ্য থাকবে কোন একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফান্ডেড অ্যাডমিশন জোগাড় করা। পিএইচডিতে ফান্ডিং পাওয়া যায়, কিন্তু শেষ করতে লম্বা সময় লাগে। এমএস প্রায় সব ক্ষেত্রেই নিজের খরচে করতে হয়, তবে সময় বাঁচানো যায়। যাহোক, যদি ফ্যামিলি থেকে সাপোর্ট পাওয়া সম্ভব হয় তাহলে পিএইচডিতে ফান্ড না পেলেও মাস্টার্সে ভর্তি নিয়ে আমেরিকায় আসতে হবে। বাংলাদেশে অনার্স শেষে আমেরিকায় স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে পড়তে আসার আলোচনা অনেক ব্যাপক এবং আমাদের এই ওয়েবসাইটে সে বিষয়ে প্রচূর আর্টিকেল পরিবেশিত হয়েছে। প্রাসঙ্গিকতার স্বার্থে আমি ওই ধাপগুলো স্কিপ করে যাচ্ছি।

৩. অ্যামেরিকান ধাঁচের উচ্চারণে দক্ষতা বাড়ানো। মনে রাখবেন FPGEE পরীক্ষার শর্ত হিসাবে যে TOEFL দিতে হয় তার প্রধান প্রতিবন্ধকতা হলো স্পিকিং সেকশন। নতুন নিয়ম অনুসারে আপনাকে ৩০ এর মধ্যে ২৬ বা তার বেশি পেতে হবে। ঢাকার জিআরই/টোফেল শিক্ষকদের সাথে কথা বলে আমি জেনেছি শতকরা ১০ জনও এই স্কোর তুলতে পারেনা। কাজেই পঁচা শামুকে যাতে পা না কাটে তাই FPGEE’র বই পড়ার পাশাপাশি ইংলিশে কথা বলার দক্ষতাও বাড়াতে হবে।

উপরে ২ ও ৩ নং ধাপে যে দুই টোফেলের কথা বলা হয়েছে তারা কিন্তু আলাদা। প্রথমটা আমেরিকায় স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে আসার জন্য। এতে “টোটাল” স্কোর গুরুত্বপূর্ণ, এবং তা ইউনিভার্সিটি ঠিক করে দেবে। পরেরটা নিতে হবে আমেরিকার মাটিতে বসেই, এবং এর প্রতি সেকশনে ন্যূনতম নাম্বার থাকতে হবে; স্পিকিং সেকশনের স্কোর ২৬ বা তার বেশি হতে হবে।

বি.ফার্ম ৫ম বর্ষের ফল প্রকাশের সাথে সাথেই

৪. বি.ফার্ম কোর্সের ট্রান্সক্রিপ্ট তুলে নিন, মোটামুটি দশ কপি। ট্রান্সক্রিপ্টের খামে বিশেষ কায়দায় সিল বসানো থাকে।
৫. রেজিস্ট্রার্স অফিস থেকে সার্টিফিকেট সংগ্রহ করুন। সনদপত্র একসাথে একটাই রাখা যায়।
৬. বাংলাদেশ ফার্মেসী কাউন্সিল থেকে লাইসেন্স বা রেজিস্ট্রেশন সংগ্রহ করুন।
৭. সুবিধাজনক কোন আমেরিকান গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে অ্যাডমিশন ম্যানেজ করুন। এই ধাপটি আলাদা ভাবে অত্যন্ত ব্যাপক এবং সময় সাপেক্ষ। আগেই বলেছি, কেবলমাত্র এই প্রবন্ধের বিষয়বস্তুর স্বার্থে আমি সেগুলো স্কিপ করে যাচ্ছি। অ্যাডমিশন ম্যানেজ করা মানে হলো অফার লেটার ও ফরম আই-২০ হাতে পাওয়া। তারপর এগুলো দিয়ে এম্ব্যাসিতে ভিসার জন্য দাঁড়াতে হবে। স্টুডেন্ট হিসাবে আমেরিকায় আসলে F1 ভিসা ইসু করা হবে। স্টুডেন্টের সাথে ডিপেন্ডেন্ট হিসাবে আসা স্পাউজ/সন্তান পাবেন F2 ভিসা।

আমেরিকায় আসার পর

৮. আপনি যে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট হিসাবে এসেছেন সেখানে ক্লাস শুরু করুন। আপনার জরুরী কিছু ডকুমেন্ট যেমন সোস্যাল সিকিউরিটি কার্ড, ড্রাইভার্স লাইসেন্স ইত্যাদি কয়েক দিনের মধ্যেই হয়ে যাবে।
৮. FPGEE পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সংস্থা NABP-এর সাম্প্রতিকতম অ্যাপ্লিকেশন বুলেটিন অনুসরণ করতে হবে। অনেক প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট ও ব্লগ নিজেদের মতো করে FPGEE দেবার তথ্য দিয়ে থাকে, যা চোখ বুজে বিশ্বাস না করে মূল nabp.net সাইট থেকে যাচাই করে নিতে হবে।
৯. FPGEE পরীক্ষা বছরে দুইবার হয়। যদি আপনি অগাস্ট মাসে স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে আমেরিকায় ঢোকেন তাহলে ওই বছরের সেপ্টেম্বর মাসের পরীক্ষা ধরতে পারবেন না, কারণ এক মাসে সবকিছু শেষ করা অসম্ভব। বরং পরের বছরের এপ্রিলের পরীক্ষা টার্গেট করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে হাতে মোটামুটি ৭ মাসের মত সময় পাওয়া যাচ্ছে। এই সাত মাসে FPGEC (NABP) দিয়ে ডকুমেন্ট মূল্যায়ন, ECE দিয়ে ট্রান্সক্রিপ্ট ইভালুয়েশন এবং TOEFL পরীক্ষা দেওয়া থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে, টোফেল পরীক্ষায় প্রতি সেকশনে ন্যূনতম নম্বর পাওয়া এবং ECE থেকে FPGEC এর হাতে বি ফার্মের ট্রান্সক্রিপ্ট মূল্যায়িত হয়ে যাওয়ার উপর নির্ভর করছে FPGEE পরীক্ষায় বসার অনুমতি।
১০. আমেরিকায় প্রবেশের পর পরই অনতিবিলম্বে ডকুমেন্ট ইভ্যালুয়েশনের কাজটি শুরু করতে হবে। ECE এবং NABP (FPGEC) ডকুমেন্ট ইভ্যালুয়েশন করে পরীক্ষায় বসার অনুমতি দিতে ৬ মাস পর্যন্ত সময় নিতে পারে। NABP’র ইলিনয়স্থ প্রধান কার্যালয়ে জমা দিতে হবে এগুলো: (১) তিন পৃষ্ঠার একটি অ্যাপ্লিকেশন ফরম, যার শেষ পৃষ্ঠায় নিজের ছবি এবং নোটারাইজেশনের বিশেষ সিল ও স্বাক্ষর থাকবে, (২) ১২০০ ডলার অ্যাপ্লিকেশন ফি, যার ৭৫০ ডলার হলো পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন ফি এবং বাকীটা ডকুমেন্ট ইভালুয়েশনের ফি, (৩) বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল থেকে পাওয়া সনদপত্র, (৪) নিজের আরেক কপি ছবি, যাতে কোন সিল বা স্বাক্ষর থাকবে না, (৫) আইডেন্টিফিকেশন ডকুমেন্টের নোটারিকৃত কপি, যেমন পাসপোর্ট বা ড্রাইভার্স লাইসেন্স। NABP আপনার ডকুমেন্ট তাদের কাছে রেখে দেবে, এবং যদি প্রথমবারে পরীক্ষায় ফেইল করেন (৭৫% এর কম স্কোর আসে) তাহলে পরেরবার ৭৫০ ডলার দিয়ে আবার পরীক্ষার আবেদন করতে হবে, এবং যথারীতি ৬ মাস অপেক্ষা করতে হবে। উল্লেখ্য, সাড়ে ৫ ঘণ্টা দীর্ঘ FPGEE পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় পিয়ার্সন ভু তে (বাংলাদেশে জিম্যাট পরীক্ষা হয় পিয়ার্সন ভু এর অনুমোদিত একটি সেন্টারে)।

১১. ECE সম্পূর্ণ আলাদা প্রতিষ্ঠান, যাদের অফিস উইসকন্সিনে অবস্থিত। তাদের কাছে অ্যাপ্লিকেশন ফি এবং, বি.ফার্ম ডিগ্রির কপি ও ট্রান্সক্রিপ্ট পাঠাতে হবে ইভ্যালুয়েশনের জন্য। আলাদা ভাবে এখানে লাগবে ৮৫ ডলার ও বাড়তি এক কপির জন্য আরো ২৫ ডলার। FPGEE প্রত্যাশীদের জন্য ECE এর আলাদা বিশেষ ব্যবস্থা আছে, যেখানে এরা আপনার ডকুমেন্টগুলো ইভ্যালুয়েশন করে সরাসরি ইলিনয়ের NABP অফিসে পাঠিয়ে দেবে।

১২. এবার অপেক্ষার পালা। সব ডকুমেন্ট ঠিক থাকলে NABP আপনাকে পরীক্ষার অনুমতি দেবে। নির্দিষ্ট দিনে যে সেন্টারে রেজিস্ট্রেশন করেছেন সেখানে গিয়ে FPGEE পরীক্ষায় বসতে হবে।

এক নজরে FPGEE পরীক্ষা:

 পরীক্ষা হয় কম্পিউটারে, জিআরই বা জিম্যাটের মতোই। টানা সাড়ে পাঁচ ঘন্টার মতো সময় লাগবে।
 বিভিন্ন সময়ে সর্বোচ্চ পাঁচ বার পরীক্ষায় বসা যায় (আড়াই বছর ধরে) । এর মধ্যে পাশমার্ক (৭৫%) তুলতে না পারলে আবার নতুন করে NABP তে প্রসেসিং শুরু করতে হবে। ভালো প্রস্তুতি থাকলে প্রথম এক/দুই বারেই পাশ নম্বর উঠিয়ে নেওয়া যায়। দেশ অনুসারে FPGEE তে সাফল্যের ক্রম হলো নাইজেরিয়া > কানাডা > ইজিপ্ট > ইন্ডিয়া > ফিলিপাইন > দক্ষিণ কোরিয়া (২০১০ সালের রিপোর্ট)।
 পরীক্ষায় মোট ২৫০ টি প্রশ্ন থাকবে যারা এই চারটি ক্যাটাগরিতে বিভক্ত: Basic Biomedical Sciences (16%), Pharmaceutical Sciences (30%) Social/Behavioral/Administrative Pharmacy Sciences (22%) এবং Clinical Sciences (22%)
 কোন রচনামূলক প্রশ্ন থাকবে না। প্রশ্নের কাঠামো হয় এই পাঁচ ক্যাটাগরির: multiple-choice, multiple-response, constructed-response, ordered-response, এবং hot spot formats. হট স্পট প্রশ্ন হলো একটা ছবি দেওয়া হবে, তার উপর নির্দিষ্ট জায়গায় ক্লিক করে উত্তর সাবমিট করতে হবে। উদাহরণ স্বরূপ একটা সেলের ছবি দিয়ে বললো একটা ড্রাগ কোন জায়গায় কাজ করে তা ক্লিক করে দেখাও।
 FPGEE পরীক্ষার আগে Pre-FPGEE পরীক্ষায় বসা যায় নিজের প্রস্তুতি ঝালাই করে নেবার জন্য।

FPGEE পাশ করার পর

১৩. এই স্টেপে আপনি আমেরিকান Pharm.D. ডিগ্রিধারীদের অনেকটা সমমানের হয়ে যাবেন; একমাত্র ঘাটতি হলো তাদের এক বছরের প্র্যাকটিস রোটেশন আছে যা আপনার নেই। কাজেই এই ঘাটতি মেটাতে আপনাকে “ঘণ্টা পূরণ” করতে হবে। আমেরিকায় প্রত্যেক স্টেটের নিজস্ব ফার্মেসি বোর্ড আছে, যাদের নিজস্ব কিছু আইন আছে। আপনি যে স্টেটে লাইসেন্স পেতে চান তাদের চাহিদা মোতাবেক আপনাকে তত ঘন্টা ফার্মেসিতে কাজের অভিজ্ঞতা দেখাতে হবে। উদাহরণ স্বরূপ, নিউ ইয়র্কে লাইসেন্স পেতে হলে ১৫০০ ঘন্টা প্র্যাকটিস দেখাতে হবে। এ পর্যায়ে আপনাকে নিজের নেটওয়ার্কিং, বাংলাদেশী ফার্মেসি মালিকদের সাহায্য অথবা BAPA (Bangladeshi American Pharmacists Association) থেকে সাহায্য নিয়ে কাজ করে করে এই ঘণ্টা পূরণ করতে হবে। ভার্জিনিয়ার রিচমন্ডে ভিএ হসপিটালের ফার্মাসিস্ট মোরশেদ ভাইয়ের সাথে এ বিষয়ে গল্প করতে গিয়ে বুঝলাম, ব্যক্তিগত নেটওয়ার্কিং থাকলে এই ঘণ্টা পূরণ তেমন অসুবিধা হবার কথা না। মনে রাখতে হবে, অনেক আগে আমেরিকায় ফার্মাসিস্টের ঘাটতি ছিল বলে সহজেই এ ধরণের কাজ জোগাড় করা যেত, গ্র্যাজুয়েট ইনটার্ন হিসাবে ঘন্টায় ৩০-৪০ ডলার করে পাওয়াও যেত। কিন্তু এখন এটা ম্যানেজ করা বেশ কঠিন।

১৪. ঘণ্টা পূরণের জন্য ভিসা আরেক বড় বাধা। আপনি যেহেতু F1 ভিসায় থাকবেন, আপনার কোন ফার্মেসিতে গ্র্যাজুয়েন্ট ইন্টার্ন হিসাবে পেমেন্ট নেবার অনুমতি থাকবে না। সেক্ষেত্রে দুটি রাস্তা খোলা আছে। এক, বিনা পয়সায় ভল্যান্টিয়ার হিসাবে ঘন্টা পূরণ। দুই, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে CPT নিয়ে কাজ করা। CPT এর পুরো নাম Curricular Practical Training, যার অনুমতি আমেরিকায় আসার পরে কমপক্ষে এক বছর লেখা পড়া করে পাওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া CPT পাবার আরেক শর্ত হলো আগে থেকে জবের অফার থাকা। মানে বুঝতেই পারছেন আপনাকে আগে থেকে কোন ফার্মেসি মালিকের সাথে কথা বলে অনুমতি ও অফার নিয়ে রাখতে হবে, তারপর সিপিটি ম্যানেজ করে সেখানে কাজ করে ঘণ্টা পূরণ করতে হবে।

১৫. ঘন্টা পূরণের পর পর দরকার NAPLEX ও Law (MPJE) পরীক্ষায় বসার অনুমতি বা Authorization To Test, যাকে সংক্ষেপে ATT বলে। এটা দেবে NABP। আমেরিকার মধ্যে থেকে পাশ করা ফার্ম. ডি. গ্র্যাজুয়েটদেরও এই ATT নিয়ে NAPLEX & MPJE পরীক্ষায় বসতে হয়। MPJE এর পুরো নাম Multistate Pharmacy Jurisprudence Examination, যাকে সাধারণ ভাষায় Pharmacy Law পরীক্ষা বলা হয়ে থাকে। এটা একেবারেই সহজ পরীক্ষা, মোরশেদ ভাইয়ের ভাষায় “পরীক্ষার আগের দিন পাঁচ ঘন্টা একটু পড়াশোনা করেও পাশ করা যায়”। সেই তুলনায় NAPLEX অনেক কঠিন, এবং তার প্রস্তুতি আপনাকে FPGEE এর চেয়ে আরেকটু ভালো ভাবে নিতে হবে। অভিজ্ঞতায় দেখেছি প্রথম বর্ষের ফার্ম.ডি. স্টুডেন্টরাও RxPrep নামের একটা বই কিনে সাথে রাখে, যা আসলে NAPLEX এর জনপ্রিয় গাইড বই। পরীক্ষার ফি জেনে নিন: NAPLEX ৪৮৫ ডলার এবং MPJE ২০০ ডলার।

Law পরীক্ষা NAPLEX এর আগেও নেওয়া যায়। ন্যাপলেক্সে খারাপ করলে আবার দেওয়া যায় তিন মাস অপেক্ষা করে। জিআরই পরীক্ষার মতোই অনলাইনে ন্যাপলেক্সের ফল প্রকাশিত হয়, এবং এটার প্রিন্ট আউট নিয়েই পুরোদস্তুর ফার্মাসিস্ট হিসাবে ক্যারিয়ার শুরু করা যায়।

শেষের কথাঃ

এই আর্টিকেলে আমি বাংলাদেশের একজন পাঁচ-বছর মেয়াদী বি.ফার্ম. পড়ুয়া স্টুডেন্টের আমেরিকায় ফার্মাসিস্ট হবার পুরো গাইডলাইন বর্ণনা করার চেষ্টা করেছি। যে কোন তথ্যের জন্য nabp.net সাইটের রেফারেন্স নিতে হবে, কারণ উপরে বর্ণিত নিয়ম যে কোন সময় বদলে যেতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমানের বি.ফার্ম. সংক্রান্ত তথ্য দিয়ে মাহমুদুল হাসান ঈমন আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক, আমার যুক্তরাষ্ট্রে পড়ালেখা ও ক্যারিয়ারের মেন্টর প্রফেসর ড. ওমর ফারুক খান (চেয়ারম্যান, মার্শাল ইউনিভার্সিটি, ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া) এবং ভার্জিনিয়ার রিচমন্ডের ভিএ হসপিটালের ফার্মাসিস্ট মোরশেদ ভাইয়ের কাছে আমি এই আর্টিকেলের বিভিন্ন তথ্যের জন্য কৃতজ্ঞ।