বাংলাদেশে আমরা যাকে ওষুধের দোকান বলি, আমেরিকায় সেটািই হলো রিটেইল বা কমিউনিটি ফার্মেসি। বাংলাদেশের ফার্মেসি গ্র্যাজুয়েটরা এসব ওষুধের দোকানে কাজ করেন না। তাদের বলতে গেলে শতভাগেরই কর্মস্থল হয় বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানীর কারখানা বা মার্কেটিং এরিয়ায়। কেউ কেউ অবশ্য হাসপাতাল এবং সরকারী প্রতিষ্ঠানেও কাজ করেন। আমেরিকায় ফার্মাসিস্টরা বেশ ভালো আয় করেন, তাদের স্টার্টিং স্যালারি হয় ১০০ হাজার ডলারের উপরে। একদম সহজ ভাষায় বলতে গেলে, রিটেইল ফার্মেসিতে তাদের প্রধান কাজ হয় ডাক্তারের কাছ থেকে কাগজে বা টেলিফোনে প্রেসক্রিপশন গ্রহণ করা, সেই প্রেসক্রিপশন অনুসারে ওষুধ দেওয়া, ইন্সুরেন্সের সাথে যোগাযোগ করা, রোগীকে কাউন্সেলিং করা এবং দরকার অনুসারে ওষুধ বানিয়ে দেওয়া।

অনেকেই জানতে চান, বাংলাদেশে বি.ফার্ম শেষ করে আমেরিকায় এসে এম.ফার্ম করা যাবে কি না। প্রথমেই বলে রাখি, আমেরিকার ফার্মেসি সংক্রান্ত ডিগ্রি হলো চারটি:

  • ফার্মেসি টেকনিশিয়ান
  • প্রফেশনাল ডক্টর অব ফার্মেসি – যাদেরকে সাধারণ ভাষায় ফার্মাসিস্ট বলে (2003 সালের জানুয়ারির পর এটাই একমাত্র ডিগ্রি যার সাহায্যে আমেরিকায় বসে ফার্মাসিস্ট হওয়া যায়)
  • মাস্টার্স, ফার্মেসি বিষয়ক যে কোন সাবজেক্টে
  • পিএইচডি, ফার্মেসি বিষয়ক যে কোন সাবজেক্টে

উল্লেখিত চারটি ডিগ্রির মধ্যে প্রথম দুটি করা থাকলে রিটেইল/হসপিটাল ফার্মেসিতে কাজ করতে পারবেন। বাংলাদেশ থেকে ফার্মেসি ডিগ্রি নেওয়া থাকলে বিশেষ শর্তে আপনি আমেরিকায় প্রফেশনাল ফার্মাসিস্ট হিসাবে রেজিস্ট্রি করতে পারবেন, মানে Registered Pharmacist (RPh) হতে পারবেন। সে গল্প অন্য আর্টিকেলে বলছিঃ বিফার্ম শেষে আমেরিকায় রেজিস্টার্ড ফার্মাসিস্ট হতে হলে

প্রসংগ: ফার্মেসিতে মাস্টার্স

ফার্মেসি বিষয়ক কোন সাবজেক্টে মাস্টার্স করলে তখন ডিগ্রিটা হবে এমএস ইন… এরকম। যেমন, Regulatory Affairs এ এমএস করলে আপনার ডিগ্রি হবে MS in Regulatory Affairs, ফার্মাসিউটিক্সে করলে হবে MS in Pharmaceutics ইত্যাদি। তবে এগুলো আর দশটা নন-প্রফেশনাল ডিগ্রির মতোই। বাংলাদেশে বহুল প্রচলিত ডিগ্রি M.Pharm নামে আমেরিকায় কোন ডিগ্রি দেওয়া হয় না। যে এরিয়াতে আপনি মেজর করবেন সেটার নাম জুড়ে দিয়েই ডিগ্রির নাম হয়। উদাহরণ আগেই দিয়েছি। তাহলে আমেরিকায় ফার্মেসি সংক্রান্ত সাবজেক্টে এমএস শেষে তারা কোথায় কাজ করেন? উত্তর: ইন্ডাস্ট্রি। শুধুমাত্র এমএস নিয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে গিয়ে অনেকেই বোধ করেন, সেখানে প্রমোশনের জন্য টার্মিনাল ডিগ্রি পিএচইডি থাকাটা খুবই জরুরী। এ কারণে এমএস শেষে অনেকেই ভালো কোন গ্র্র্র্যাজুয়েট স্কুলে পিএইচডি প্রোগ্রামে ঢুকে পড়েন।

ফার্মেসিতে পিএইচডি?

ঠিক একই ভাবে, ফার্মেসিতে ডক্টর অব ফিলোসফি হয় না। পিএইচডি হয় ফার্মেসি বটবৃক্ষের বিশেষায়িত শাখার উপরে। এরকম কয়েকটা এরিয়া দেখুন:

  • PhD in Pharmaceutical Sciences -এটা সবচেয়ে কমন
  • PhD in Medicinal Chemistry
  • PhD in Pharmacology & Toxicology
  • PhD in Pharmacy Administration ইত্যাদি

পিএইচডি ডিগ্রিধারীরা কোথায় যায়?

পিএইচডি যেমন একটা টার্মিনাল ডিগ্রি (মানে এটার ছাদের উপর ফাঁকা জায়গা, আর কোন ডিগ্রি নেই) এবং শুনতে অনেক বাগাড়ম্বর মনে হয়, এটার কিছু সীমাবদ্ধতাও আছে। এক এরিয়াতে পিএইচডি করে অন্য এরিয়ায় জব ম্যানেজ করা বেশ কঠিন। তাছাড়া ইন্ডাস্ট্রিতে অল্প বেতনে যেখানে এমএস দের পাওয়া যায়, চাকুরীদাতারা বেশি বেতন দিয়ে একজন পিএইচডিকে রাখতে অনেক ক্ষেত্রে আগ্রহী নাও হতে পারেন। ফ্রেশ পিএইচডিদের অনেকেই পোস্ট ডক্টরাল রিসার্চার হিসাবে কাজ করেন। অনেকেই ইন্ডাস্ট্রিতে যান, আবার একাডেমিয়াতেও অনেকে গিয়ে থাকেন। তবে যেখানেই যান, রিটেইল বা হসপিটাল ফার্মেসিতে প্রফেশনাল ফার্মাসিস্ট হিসাবে তারা প্র্যাকটিস করতে পারবেন না।

আমেরিকায় এখনো কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাচেলর অব ফার্মেসি বা বি.ফার্ম করানো হয়। তবে তারা ফার্মাসিস্ট হিসাবে বের হন না, তাদের কাজের ক্ষেত্র হয় ইন্ডাস্ট্রিতে। অনেকেই আবার গ্র্যাজুয়েট স্কুলে যান। সংখ্যায় একেবারেই ক্ষুদ্র বলে এই গ্রুপটাকে উপরের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

বাংলাদেশে যারা বি.ফার্ম শেষ করে আমেরিকায় আসতে চান, তাদের জন্য সেরা অপশন হচ্ছে ফার্মাসিউটিক্যাল সায়েন্সে পিএইচডি করা। প্রচূর ফান্ডিং আছে, প্রতিবছর প্রচূর স্টুডেন্টও আসছে। তবে যাদের ৫ বছরের বি.ফার্ম. ডিগ্রি আছে তাদের পরিকল্পনা হতে হবে আমেরিকায় এসে আরপিএইচ হওয়া।