আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি প্রক্রিয়ায় একজন প্রফেসরের সাথে যোগাযোগ কতটুকু ভূমিকা রাখে, সেই বিষয়টা আমার কাছে ততটা স্পষ্ট নয়। তবে ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতার আলোকে এতটুকু বলতে পারি, যদিও একটি ভাল প্রোফাইল এর কোন বিকল্প হয়না, তবে তার সাথে যদি যুক্ত হয় প্রফেসসরদের সাথে সামান্য যোগাযোগ, সেটা ভর্তি প্রক্রিয়াকে আরেকটু ত্বরান্বিত করবে-নিঃসন্দেহে।
প্রফেসসরেদের সাথে যোগাযোগ করাটা সহজ না মোটেও। অনেকেই শখানেক ইমেইল করে উত্তর পান হাতে গোনা দুচারটা। তবে কোন ভর্তি ইচ্ছুক শিক্ষার্থী যদি মনেপ্রানে প্রফেসসরদের সাথে যোগাযোগ করতে চান, তবে সেটার জন্য তাকে কিছুটা সময় আর শ্রম দিতেই হবে।
প্রথমেই যেটা করা যেতে পারে তা হল, নিজের প্রোফাইল অনুযায়ী নির্বাচিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট টা পুরোটা একবার দেখে নেয়া, তারপর পছন্দের বিষয়ে কর্মরত শিক্ষকদের প্রোফাইল টায় একবার চোখ বুলিয়ে নেয়া। এইসময় যার যার কাজ আপনার সাথে অনেকটাই মিলে যাবে তাদের আলাদা করে ফেলতে হবে।
এবার শুরু আসল কাজ- আলাদা করে নেয়া প্রফেসরদের আদ্দপান্ত জানার চেষ্টা করা। তাদের গবেষণা, অনন্যা কাজ, সাম্প্রতিক অংশগ্রহণ সবকিছুর একটা সম্যক ধারনা নিতে হবে। প্রফেসসরদের সবচে আগ্রহের বিষয়টা বের করতে পারলে ত কথাই নেই। শুরু করা যেতে পারে একটা ইমেইল লেখা। খুব ছোট করে মুল কথাগুলোকে উল্লেখ করে পাঠিয়ে দিতে হবে তার সাথে কাজ করার আগ্রহের কথা। চাইলে নিজের সিভি সংযুক্ত করা যেতেই পারে। যতটা পরিশ্রম আপনি সততার সাথে করবেন এইখেত্রে আপনার উত্তর পাবার সম্ভাবনা ততটাই বেড়ে যাবার কথা- একবার চেষ্টা করে দেখুনি না কি হয়।
অনেকের মনেই প্রশ্ন, প্রফেসরদের সাথে প্রথম আলাপচারিতা কেমন হবে। প্রফেসরকে একটা ইমেইল লিখার আগে অবশ্যই আপনাকে যথেষ্ট হোম ওয়ার্ক করে নিতে হবে। আপনার সাথে যার কাজের অনেকটাই মিল খুঁজে পাবেন তাকে নিয়ে শুরু করে দিন আপনার রিসার্চ। গুগল, ইউটিউব, রিসার্চ গেট- আর যা যা ওয়েবসাইট ঘাটাঘাটি করা সম্ভব, সবগুলোতেই একটা ঢুঁ মেরে আসতে পারেন, সর্বোপরি বের করার চেষ্টা করবেন, ওই প্রফেসরের সবচে আলোচিত এবং পছন্দের কাজ খানা। তারপর ছোট করে একটা ইমেইল লিখে ফেলেন, নিজে কয়েকবার পড়ে দেখুন কোন ভুল বা বিরক্তির উদ্রেক করতে পারে- এমন কিছু আছে কিনা, থাকলেই ব্যাকস্পেস চাপুন এবং বাড়তি কথাগুলোকে মুছে মূলকথাটি গুছিয়ে নিন। এবার সাহস করে পাঠিয়ে দিন ইমেইলটি। প্রথম আলাপে আপনার পড়াশোনা, রিসার্চ, কাজের অভিজ্ঞতা এসব তুলে ধরতে পারেন। সাথে এটাও জিজ্ঞেস করে নিবেন যে, এই বছর উনি নুতন কাউকে তার ল্যাবএ নিচ্ছে কিনা। ব্যাস! এবার অপেক্ষা করুন, আর হে, ইমেইল এর উত্তর না পেলে হতাশ হবেন না মোটেও, ৭-৮ দিন পর আবার একবার ঐ প্রফেসরকেই আরেকটা ইমেইল করতেই পারেন- এতে কোন সমস্যা থাকার কথা না।
GRE দেবার আগে না পরে, প্রফেসরদের সাথে যোগাযোগ করা ভাল- তা নিয়ে অনেকের মাঝেই সংশয় রয়েছে । আমার মনে হয় আপনি যে বছরের জন্য ( যেমনঃ ফল’১৫) অ্যাপ্লাই করবেন বলে ঠিক করেছেন, তার আগের বছর ( অর্থাৎ ২০১৪) থেকে প্রফেসরদের ইমেইল করা আরম্ভ করতে পারেন। GRE দেবার আগে যে ইমেইল টা করবেন, সেখানে উল্লেখ করে দিবেন যে, আপনি GRE রেজিস্ট্রেশান করেছেন এবং খুব শীঘ্রই পরীক্ষায় অংশ নিবেন, স্কোর পাবার পর তাকে অবশ্যই জানাবেন, তাহলেই আর সমস্যা থাকল না। সেইখেত্রে আপনি GRE দেবার আগেই কিন্তু যোগাযোগ করতে পারবেন, এতে হাতে অনেকটা সময়ও পাওয়া যাবে প্রফেসরকে রাজি করানোর জন্য। অনেক সময় কিন্তু এটাও দেখা যায় যে, আগে থেকেই প্রফেসরের সাথে যোগাযোগ থাকলে, স্কোর কিছুটা কম হলেও প্রফেসর চাইলে আপনি অ্যাপ্লাই করতে পারবেন। কাজেই যোগাযোগ টা আগে থেকেই শুরু করা ভাল, অন্তত কোন ক্ষতি তো নেই, কিন্তু লাভ হলেও হতে পারে।
আগে থেকে যোগাযোগ করার অনেকগুলোই সুবিধা আছে, যেমন কেও রাজি হলে সেই ইউনিভার্সিটি তে আপনি স্কোর পাঠাতে পারবেন। রাজি না হলে, নিজের প্রোফাইল অনুযায়ী স্কোর পাঠাতে হবে। সব তো আর নিয়ম মেনে হবে না, তবে চেষ্টা করতে সমস্যা কোথায়? হয়ত দেখা যাবে, ৫০ জনকে ইমেইল করলে, ১০ জনের কাছ থেকে নেগেটিভ উত্তর পাবেন, যে এই বছর স্টুডেন্ট নিচ্ছে না। ২০ জন হয়ত উত্তর দিল না। ১০ জন বলল উনি এখনও জানেনা কয়জন কে নিবেন। আর বাকি ১০ জনের মাঝে অন্তত একজন ও যদি পজিটিভ উত্তর দেয়! কাজেই চেষ্টা করতে ক্ষতি কি?