বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাডমিশন বা ফান্ডিং যে কোন কিছুর জন্যই সবচেয়ে মোক্ষম কৌশল হলো প্রফেসর ম্যানেজ করা। আগে থেকে প্রফেসর যদি আপনার সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখে এবং আপনার দক্ষতা-অভিজ্ঞতা বিষয়ে সন্তুষ্ট থাকেন তাহলে অ্যাডমিশন কমিটির অনুমোদনের আগেই চাইলে আপনার অ্যাডমিশন নিশ্চিত হয়ে যেতে পারে। তবে তার জন্য দরকার সবার শুরুতে খুব কার্যকর একটি ইমেইল দিয়ে যোগাযোগ শুরু করা।
বিদেশে উচ্চ শিক্ষায় ভর্তি হওয়ার প্রথম ধাপ হলো জিআরই দেওয়া। জিআরই/টোফেল দেবার পরেরই ধাপই হলো প্রফেসরকে ই-মেইল পাঠানো। সঠিক গাইড লাইন আর ইংরেজি দক্ষতা না থাকায় অনেকেই মে-ইমেল পাঠানোকে ঝক্কি-ঝামেলা হিসেবে বিবেচনা করেন। তবে ফরমেট আগেভাগে জানা থাকলে এই ভয়কে সহজেই জয় করা যায়।
মেইল করার আগে করণীয় যা:
- জানতে হবে প্রফেসরকে:
প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েব সাইটে প্রত্যেক প্রফেসরের জন্য আলাদা আলাদা ওয়েব পেইজ থাকে। মেইলে লিখতে বসার আগে আপনার কাজ হবে এসব ওয়েব পেইজে যাওয়া। প্রফেসরের গবেষণা ক্ষেত্র সম্পর্কে সম্ম্যক ধারণা নেওয়া। অনেক প্রফেসরের ওয়েব পেইজে প্রফেসরের নিজস্ব গুগল স্কলার লিংক থাকতে পারে। এ যাবত প্রফেসর যত কাজ করেছেন কিংবা সামনে করতে যাচ্ছেন সব কিছু বিস্তারিতভাবে এখানে পাওয়া যাবে। প্রফেসরের লিঙ্কেডিন আইডি অনুসরণ করে জানা যাবে প্রফেসরের ব্যক্তিগত তথ্য। প্রফেসরকে জানার আরো একটি ভালো উপায় হলো প্রসেসরের বর্তমান স্টুডেন্ট কারো সাথে আলাপচারিতা করা।
- প্রফেসরের দৌড় কতখানি:
প্রফেসরকে জানার পর্ব শেষ। এখন জানতে হবে সেই প্রফেসরের দৌড় কতখানি। এ কাজ ততটা সহজ না হলেও আবার খুব কঠিন কিছু না। একটু কৌশল খাটিয়ে বের করা সম্ভব। আমেরিকান ন্যাশনাল সাইন্স ফাউন্ডেশনের ওয়েব সাইটে প্রফেসরের নাম সার্চ করে জানা যাবে প্রফেসরে গবেষণা কাজে অতীতে কি পরিমাণ ফান্ড পেয়েছেন, সম্প্রতি কোন সরকারী ফান্ড পেয়েছেন কিনা ইত্যাদি সম্পর্কিত তথ্য।
ই-মেইল পাঠানোর সময়:
টাইমিং বা সময় মেনে ই-মেইল পাঠানো একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর- এই দুই মাস হলো প্রফেসরদের ই-মেইল পাঠানোর জন্য বসন্তকাল। ডিসেম্বরে ফল সেশন শেষ হওয়ার সাথে সাথে প্রচুর ছাত্র-ছাত্রী গ্রাজুয়েট হয়ে বের হয়। অনেক প্রফেসরের ল্যাব তাই প্রায় ফাঁকা হয়ে যায়।
- ই-মেইল এ থাকতে হবে যা:
- সাবজেক্ট: ই-মেইলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যত অল্প শব্দে লেখা যায় ততো ভালো।
- মূল অংশ: ই-মেইলের মূল বডিতে কয়েকটি অংশ থাকা দরকার। যেমন-
- সম্বোধন:
আরেকিানদের কাছে সম্বোধন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সঠিকভাবে সম্বোধন না করা অসৌজন্যমূলক আচরণ হিসেবে ধরা হয়। যেমন- কোন প্রফেসরের নাম Robert Hickey; আপনার সম্বোধন হওয়া উচিত Professor Hickey অথবা Dr. Hickey; অথবা Dear Hickey.
- পরিচয়:
সম্বোধনের পরে নিজের পরিচয় (যেমন- বিশ্ববিদ্যালয়, ডিপার্টমেন্ট, পাসের সাল ইত্যাদি) তুলে ধরতে হবে। সাবলীল ভাষায় ২ থেকে ৪ লাইনে গুছিয়ে লেখুন। প্রয়োজনে হাতে সময় নিয়ে পরিমার্জিত ও সুস্থ-স্বাভাবিক ইংরেজিতে লেখার চর্চা করতে হবে।
- আগ্রহ প্রকাশ:
পরিচয় পর্ব শেষ করে নতুন প্যারা শুরু করা উচিত। এই প্যারায় প্রফেসরের কোন কাজ ভালো লেগেছে, সেই কাজের সাথে কিভাবে আপনার বিষয়ের সাথে মিল পাচ্ছেন, আপনি কতটা প্রত্যয়ী ইত্যাদি আপনার মতো করে গুছিয়ে লিখতে হবে। সবশেষে ছোট করে আগ্রহের কথা জানান দিতে হবে। ৩ থেকে ৫ লাইনের মধ্যে এই প্যারার ইতি টানতে হবে। মূল লক্ষ্য হবে যাকে ইমেইল পাঠাচ্ছেন তার আস্থা অর্জন করা, আর আপনাকে ছাত্র হিসাবে নিলে ভালো হবে- এই ধারণা দেয়া। উপস্থাপনের সুবিদ্বার্থে বোল্ড, আনডারলাইন, ইটালিক এই তিন অপশন প্রয়োজনে ব্যবহার করা যাবে।
- অবদান:
এই প্যরায় গবেষণা ক্ষেত্রে কি করেছেন সে বিষয়গুলো তুলে ধরতে হবে। গবেষণা না থাকলে থিসিস বা প্রজেক্ট অথবা পাবলিকেশন অথবা অন্য কোনো কাজে ভালো অবদান থাকলে তার শিরোনাম লিখতে হবে। সম্ভব হলে শিরোনামের সাথে ওয়েব লিংক দিয়ে দেওয়া উত্তম।
- শেষ কথা:
শেষ করার আগে সিজিপিত্র, জিআরই, টোফেল/আই.এল.টি.এস স্কোর উল্লেখ করে সুন্দরভাবে জিজ্ঞাসা করতে পারেন আপনি আবেদন করার যোগ্য কিনা। তার গবেষণা দলে আপনার ঠাঁই হবে কিনা। শেষ লাইনে ধন্যবাদ জানিয়ে শেষ করা উচিত। তবে জেনে রাখা ভালো গুগল ড্রাইভে সিভি আপলোড করে ই-মেইলের শেষ প্রান্তে মাই সিভি লিখে হাইপার লিংক করে দেওয়া উত্তম কাজ।
ই-মেইলে বর্জনীয় যা:
- ইয়াহু আইডি থেকে ই-মেইল না করাই ভালো। কেননা অনেক ওয়েব আছে যারা ইয়াহু থেকে আগত ই-মেইলকে স্প্যাম হিসেবে দেখায়। সে কারনে আগে থেকে নিরাপদে থাকার জন্য ইয়াহু থেকে মেইল করা করা যাবে না।
- প্রফেসরকে না জেনেই অনুমান করা।
- ভুলে ভরা বানান আর ভুল ব্যাকরণ।
- একই ই-মেইল বারবার কপি পেষ্ট।
- অপ্রাসঙ্গিক ই-মেইল আইডি। উদাহরন হিসেবে বলা যায়- বিগবস০০৭@জিমেইল.কম, লাভার-বয়@জিমেইল.কম এই টাইপের ই-মেইল আইডি থেকে ই-মেইল পাঠানো।
- রচনার মতো এক প্যারায় শেষ করা যাবে না।