ইমেইল চালাচালি মানেই আবেদন করা নয়

ইউনিভার্সিটির গ্র্যাজুয়েট কোঅর্ডিনেটরের সাথে প্রতিদিন অনেকেই ইমেইলে যোগাযোগ করেন। কিন্তু অ্যাডমিশন কমিটর সামনে বিবেচনার জন্য কেবলমাত্র সঠিকভাবে আবেদনকারীদের নামই যায়।

কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করার আসল ঘটনাটি ঘটে যখন আপনি তাদের ওয়েবসাইটে গিয়ে অনলাইন ফরম পূরণ করে টার্মস এন্ড কন্ডিশনে টিকচিহ্ন দিয়ে কড়কড়ে ডলার ব্যায় করে সেই ফরমটি সাবমিট করেন। তার আগ পর্যন্ত যতই আপনি তাদের কাছে দরকারী ম্যাটেরিয়ালস পাঠান না কেন অথবা কোন প্রফেসরের সাথে যোগাযোগ করেন না কেন, আপনি আসলে সত্যিকার অর্থে সেখানে আবেদন করেননি। কাজেই তাদের কাছ থেকে অ্যাডমিশন অফার পাওয়া অথবা ডিনাই হওয়া কোনটাই আপনার জন্য প্রযোজ্য হবে না।

প্রধানত: কি কি কারণে আপনার অ্যাপ্লিকেশনটি সফল হওয়া থেকে বঞ্চিত হয় (মানে, ডিনাই হয়) সেগুলোই আমি এই আর্টিকেলে বলার চেষ্টা করবো।

প্রধান কারণগুলোকে আমি দুই ভাগে ভাগ করছি: আপনার দায়ভার আর আপনার কপাল।

অবহেলা, আলস্য অথবা অন্য কোন ত্রুটি কিংবা কোন ঝামেলার ফলে আবেদন প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ করা হয়নি
যথেষ্ট যোগ্যতা থাকা সত্বেও অন্যসব সেরা আবেদনকারীদের ভীড়ে টিকতে পারেননি

ক) আপনার দায়ভার

দায়ভার শব্দটা কিছুটা এক্সট্রিম হয়ে যায়, মোটকথা এই কারণগুলোর জন্য সরাসরি আপনার কৃতকর্ম দায়ী। উদাহরণ দেখুন:

  1. বিশ্ববিদ্যালয়ে জিআরই স্কোর না পাঠানো, দেরিতে পাঠানো
  2. জিআরই স্কোর একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুল ক্যাম্পাসে পাঠিয়ে তাদেরকে সেখান থেকে সংগ্রহ করে নিয়ে আসতে অনুরোধ করা
  3. উপরোক্ত কারণদ্বয়, টোফেল বা আয়েল্টস এর ক্ষেত্রে
  4. বিশ্ববিদ্যালয় চেয়েছিল ইভ্যালুয়েশনকৃত ট্রান্সক্রিপ্ট কিন্তু আপনি সরাসরি তাদেরকে ইভ্যালুয়েশন ছাড়াই ট্রান্সক্রিপ্ট দিয়ে বলেছেন তোমাদের স্কেলে জিপিএ কত হয় তা বাপু হিসাব করে বের করে নাও।
  5. লেটার অব রেকমেন্ডেশন না পাঠানো অথবা প্রয়োজনীয় সংখ্যার চেয়ে কম পাঠানো।
  6. ইলেকট্রনিক রেকমেন্ডেশন লেটার বা ফরম পাঠানোর কথা ছিল কিন্তু আপনি শুধু প্রিন্টেড কপি পাঠিয়েছেন
  7. অনলাইন অ্যাপ্লিকেশন ফরম পূরণ শুরু করা কিন্তু শেষ না করা।
  8. অ্যাপ্লিকেশন ফরম সাবমিট না করা এবং পেমেন্ট না করা।
  9. জিআরই এবং ট্রান্সক্রিপ্ট বা অ্যাপ্লিকেশনে নাম ভিন্ন রকম থাকা এবং তা গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রাম কোঅর্ডিটেনরকে আগে থেকে অবহিত না করা।
  10. একইসাথে একাধিক অনলাইন ফরম শুরু করা (ভিন্ন ইমেইল ও ইউজার নেইম দিয়ে), একটি সাবমিট করা কিন্তু অন্যটি মাঝপথে ঝুলিয়ে রাখা। এই ঝুলন্ত আবেদন ফরমের কথা গ্র্যাজুয়েট কোঅর্ডিনেটরকে অবহিত না করানো।

খ) আপনার কপাল

নিয়ম মেনে আবেদন করা এবং সবকিছু ঠিকঠাক ভাবে পাঠানোর পরেও আপনার অ্যাডমিশন ডিনাই হতে পারে পর্যাপ্ত সংখ্যক ওপেনিং না থাকার কারণে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মই হলো গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্টদেরকে ভর্তির সাথে অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ দিয়ে আনা হয়, কেউই সেলফ ফান্ডে আসে না। সেসব ক্ষেত্রে প্রফেসরদের ল্যাবে জায়গা না থাকলে আপনি অ্যাডমিশনের অফারই পাবেন না। আবার অনেক ক্ষেত্রেই টোপ ফেলার মতো করে বলা হয়, অ্যাডমিশন দিচ্ছি কিন্তু টাকা পয়সা দিতে পারবো না, পারলে নিজের পয়সায় পড়ো। এ সবক্ষেত্রে আপনার করণীয় তেমন কিছু নেই। সবচেয়ে বড় কথা, মনে রাখতে হবে যে আপনার সাথে আরো অনেকেই আবেদন করেছিল যাদের প্রোফাইল (জিপিএ, জিআরই, গবেষণায় দখল ইত্যাদি) হয়ত আপনার চেয়ে অনেক বেশি ছিল। আপনার মান কমে যায়নি, কিন্তু অন্যদের ধাক্কায় আপনার অবস্থানটা নীচে নেমে গেছে মাত্র। এসব ক্ষেত্রে অ্যাডমিশন না হলে আসলে কিছুই করার নেই। প্রফেসরকে একটা ধন্যবাদ ইমেইল দিয়ে পরবর্তীতে ওপেনিং হলে যেন আপনাকে বিবেচনা করা হয় তার অনুরোধ করতে পারেন।

শেষ কথা: 

কারণ যাই হোক, অ্যাডমিশন ডিনাই হওয়া মানে তিক্ত সিদ্ধান্তটাকে মেনে নেওয়া, কিন্তু অবশ্যই হাল ছেড়ে দেবেন না। আপনি হয়ত পরিচিত গণ্ডির মধ্যে অনেককেই দেখছেন ফান্ডেড অ্যাডমিশন নিয়ে আমেরিকায় পড়তে যাচ্ছে। তাদের হাসিমুখ দেখে আর সাফল্যের পোস্ট পড়ে নি:শব্দে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন, কিন্তু খোঁজ নিয়ে দেখবেন তাদের অনেকেরই আপনার মতো দীর্ঘশ্বাস ফেলার অজস্র কাহিনী রয়েছে। কাজেই, সব ছাড়ুন, খালি হাল ছাড়বেন না।