এ এক সুখ-সুখ অনুভূতি মেশানো বিব্রতকর অবস্থা। আপনাকে অলরেডি একটা ইউনিভার্সিটি থেকে আই-২০ পাঠিয়ে দিয়েছে এবং আপনার হবু প্রফেসরের সাথে ল্যাবের প্রজেক্ট এবং এ বিষয়ে দরকারী আগাম পড়ালেখার টুকটাক মিষ্টিমধুর কথাবার্তাও চলছিল। এমন সময় অপ্রত্যাশিত সুখবরের মতো আপনি অ্যাডমিশন অফার পেয়ে গেলেন অনেক উঁচু র্যাংক এবং ভালো স্টাইপেন্ড দেবে এমন একটা প্রোগ্রাম থেকে। যে কোন বিচারে আগের অফারের চেয়ে এটা অনেক ভালো অফার, এবং সব দিক বিবেচনা করে আপনাকে আগের প্রফেসরকে না বলতে হবে। এই আর্টিকেলের বিষয় হলো, সেই ‘না’-টাকে কিভাবে বলা উচিত সে বিষয়ে।
প্রথমেই বলে রাখি, এথিক্যাল দিক দিয়ে বিবেচনা করতে গেলে একবার কাউকে হ্যাঁ বলে দিলে সেই সময় থেকে পরবর্তী সকল আবেদনকে আপনার বিবেচনা থেকে সরিয়ে রাখা উচিত। তার পরেও “একটি দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না”র মতো একটি নীতিবান ভুল সিদ্ধান্ত যাতে সারাজীবনের হুহু আফসোসের কারণ না হয় সেজন্য এমন কিছু করা উচিত যাতে উভয়কুলই মোটামুটি রক্ষা হয়।
ওকে, আপনি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন যে সম্প্রতি পাওয়া অফারটিই আপনি গ্রহণ করতে যাচ্ছেন। আপনাকে খুব সুন্দর ভাবে গুছিয়ে একটি ইমেইল পাঠাতে হবে আগের প্রফেসরকে, যেখানে আপনি পেশাদারী ভাষায় ধন্যবাদ ও অপারগতা প্রকাশ করতে চান।
ইমেইলে যা থাকবে:
ধন্যবাদ: আপনাকে তার প্রজেক্টে নির্বাচন করার জন্য আপনি আবারও তাকে ধন্যবাদ দিন। আপনি উল্লেখ করুন যে এমন নামকরা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে অ্যাডমিশন অফার পাওয়া অত্যন্ত প্রতিযোগিতাপূর্ণ ও সম্মানের বিষয়।
সত্যি কথাই বলুন: আপনি উল্লেখ করুন যে, গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামগুলো অত্যন্ত প্রতিযোগিতাপূর্ণ বলে আপনি আরো কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেছিলেন। সেখান থেকেই আরেকটি প্রোগ্রামে আপনি অ্যাডমিশন অফার পেয়েছেন যা আপনাকে সবকিছু নতুন করে চিন্তা করতে বাধ্য করছে। ভয় পাবেন না, প্রফেসররা এই ঘটনার সাথে পরিচিত; পছন্দের হবু স্টুডেন্ট সচরাচরই হাত ফসকে যায়। এ কারণেই আপনার পরেও তাদের তালিকায় আরো কয়েকজন আছে। আর আপনি তো এটাও জানেন না যে আপনাকে ওই প্রফেসর ডেকেছে কারণ তার হাাতের আগের ঘুঘু উড়ে চলে গেছে। সুতরাং, সততার সাথে, সাবলিল ভাবে সত্যি কথাটাই বলুন।
কারণ হিসাবে ব্যক্তিগত অপারগতা/পারদর্শিতা উল্লেখ করুন: মাত্র এক বা আধা লাইনের মধ্যে বলে দিন কেন ওই প্রোগ্রাম আপনি নির্বাচন করছেন। এর কারণ, উক্ত ল্যাবের কাজের ধরণ আপনার ইতিপূর্বে করে আসা কাজের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং এরকম প্রজেক্টেই আপনি নিজের দক্ষতা ভালো ভাবে প্রমাণ করতে পারবেন বলে বোধ করেন।
আই উইশ…: মানে হলো, ইশ যদি আপনার ল্যাবে কাজ করতে পারতাম তাহলে কতইনা ভালো হতো। এরকম দুই একটা বাক্যের মধ্যে বলে দিন যে আপনি তার প্রজেক্টে কাজ করতে পারলে অত্যন্ত আনন্দিত হতেন। আরো বলুন, এরকম হুট করে না বলে দেওয়ায় তাদের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যে বিলম্ব হতে পারে তার জন্য আপনি অত্যন্ত দু:খিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।
ইমেইলে যা থাকবে না:
টাকা পয়সা, র্যাংক ইত্যাদির প্রসংগ: ভুলেও বলবেন না যে তোমরা আমাকে কম টাকা বেতন দিবে বলেছো আর ওরা আমাকে বেশি টাকা সাধছে, অথবা ওদের র্যাংক তোমাদের চেয়ে উপরে। একদম উঁচু লেভেলের ভার্সিটি ছাড়া আমেরিকান প্রফেসররা র্যাংকের বিষয়টা একদমই পছন্দ করে না, কাজেই উটকো অপছন্দের বিষয় ইমেইলে আনতে যাবেন না।
নতুন ল্যাবের পরিচয়: নতুন কোনখান থেকে অফার এসেছে, কার ল্যাব, কি প্রজেক্ট এগুলো কিচ্ছু বলার দরকার নেই। ইমেইল হবে ছোট, সংক্ষিপ্ত এবং সিদ্ধান্তবাহী।
সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন, চাচ্ছেন না: উপরের লাইনে বলেছি, আপনার ইমেইল হবে সিদ্ধান্তবাহী। মানে আপনি প্রফেসরকে সবিনয়ে নেগেটিভ সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিচ্ছেন। এখানে কোন ধরণের মিনমিনে সিদ্ধান্তহীনতা বা প্রশ্ন থাকবেনা। যেমন, আপনি অবশ্যই বলবেন না, “আমি যদি তোমার অফার ফিরিয়ে দেই তাহলে তুমি কি খুব ঝামেলায় পড়বে”। আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন, আপনার পেশাদারী ইমেইলের রিপ্লাই হিসাবে ওই প্রফেসর আপনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে সুন্দর ভাবে উভয় পক্ষের ইস্তফা টানবেন।
ভালো সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার লাভ অনেক। আমেরিকায় আসার পরে এত স্বপ্ন আর আশা নিয়ে যে ল্যাবে কাজ শুরু করলেন, বাস্তবে দেখা গেল সেটা আসলে ততটা সুবিধার না। তখন আগের প্রফেসরকে আবার হয়ত যোগাযোগ করতে হতে পারে।
ধরুন আপনার বাজারদর এতই ভালো, যে সাম্প্রতিকতম প্রফেসরকে হ্যাঁ বলে দেবার পরদিন আরেকটা সুপার ডুপার অফার পেলেন: তখন কি করবেন? দেখুন, সিদ্ধান্ত আপনার, আমি শুধু বলতে পারি সোজা উপরে গিয়ে এই আর্টিকেলের দ্বিতীয় প্যারাটা আবার পড়ুন।
শুভ কামনা রইলো।