বাংলাদেশে চাকরির জন্য কোন ধরণের লিখিত প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষা দেইনি, তাই ধারণা নাই আসলে কিভাবে প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। আমার আব্বা মাঝে মাঝে বলেন দেশে দু’একটা চাকরীর ট্রাই করলে ভালো হইতো। আমি অনুমান করে নিলাম উচ্চশিক্ষা, স্বপ্ন ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা নামক একটা কাল্পনিক বিভাগে স্বপ্নদ্রষ্টা পদে (যে হতাশদের আশার আলো দেখাবে এই পদে) আমি এক প্রতিযোগী হিসাবে একটি পরীক্ষায় এসে বসেছি।

জনৈক পরীক্ষক এসে বোর্ডে প্রশ্ন লিখে বলেন- আপনি যদি স্পপ্নদ্রষ্টা নির্বাচিত হন, তাহলে কিভাবে ক্লাসের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সব গুলো ছাত্রছাত্রীর মাঝে উচ্চ শিক্ষার জন্য আশার আলো বা স্বপ্ন দেখাবেন এই মর্মে একটা পূর্ণ রচনা লিখুন।

আপনার লেখায় আরো যে বিষয়গুলো বিস্তারিত থাকতে হবে উচ্চ শিক্ষায় প্রতিবন্ধকতা, করণীয়, সময়ের সঠিক ব্যবহার, সিজিপিএর প্রভাব, বয়সের প্রভাব, ইংরেজী দুর্বলতা কাটানোর উপায়, নেটওয়ার্কিং, ছাত্রের রিকমেন্ডেশন ছাত্রের নিজ হাতে লেখা ও আপনার দৃষ্টিতে আরো যদি কোন গুরত্বপূর্ণ বিষয় থাকে। লোক নিবে ৫ জন, পরীক্ষার্থী ২০ হাজার। সবাইকে কিভাবে আপনি স্বপ্ন দেখাবেন এই নিয়ে লিখে যান, আনলিমিটেড টাইম, যত খুশী লুজ নেন, বিভিন্ন রংয়ের কলম ব্যবহার করেন, সাথে কিছু স্বপ্নপিয়াসী ছাত্রছাত্রীর মনের কথা লেখা ফ্ল্যাশকার্ড দেওয়া আছে, খাতা দরকার হলে দশটা দিবো, আপনি শুধু লিখে যান।

বি.দ্র. কোন কবির উক্তি লেখা যাবে না, কোন স্যার, বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ধরা যাবে না। বেশী দরকার হলে কাল্পনিক নাম ব্যবহার করুন, আর স্কলারশীপের নাম ব্যবহার করতে পারেন।

সময় শুরু!! গুড লাক!!

আমার উত্তর শুরু এখানে:

ক্লাসে ৫০-থেকে ৮০ জন ছাত্র। সবাই মেধাবী না, সবাই মনোযোগী না, কেউ দারিদ্রতায় ভোগে, কেউ উচ্চবিলাসিতায় ভোগে, কেউ আবার নেশা গ্রস্থ, কেউ একটা টিউশনির আশায় রাতে ঘুম আসে না। কেউ আবার স্বপ্ন নিয়ে ঘুরে বেড়ায়, একটু দিক নির্দেশনা দেবার মতো লোক পায় না, কেউ আবার একটু বাদাইমনামার্কা (আন-অফিসিয়াল শব্দ) সকালে কারেন্ট এপ্যায়ার্স পড়ে, তো বিকালে আইবিএর জন্য পড়ে, রাতে ব্যাংকের জন্য, আবার দেখি জিআরই ও পড়ে, আবার মাঝে মাঝে ফোনেটিস্ক ও পড়ে। মানে মন যে কি চায় সে নিজেও জানে না। এসব কোমলমতি ছেলেমেয়েরা কিভাবে জীবনকে সুন্দর ভাবে সাজানোর জন্য এগোবে তা উল্লেখের আগে কি ধরণের প্রতিবন্ধকতা তাদের সামনে আসতে পারে বাস্তবতার আলোকে কিছু গুরত্বপূর্ণ পয়েন্ট নিম্নে তুলে ধরা হলো:

১.

একজন ছাত্র আইএলটিসে ৭ পেয়ে তার বিভাগের গুরত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত একজন গুরুর কাছে ERASMUSMUNDUS SCHOLARSHIP এর আওতাধীন সুইডেনের LUND UNIVERSITY মাষ্টার্সের স্কলারশীপের জন্য একটা রেফারেন্সের জন্য গেলে শিক্ষক তাকে যদি বলে তোমার তো রেজাল্ট খারাপ, এই রেজাল্ট নিয়ে স্কলারশীপ হয় নাকি, পড়া শোনা করেনা কিছুনা, আসছে রেফারেন্সের জন্য!!!! এমন একটা কমেন্টে একটি ছাত্রের স্বপ্ন গলা টিপে হত্যা করার সামিল। এমন পরিস্থিতিতে যে কারো জন্য ছেলেটির স্বপ্নটিকে পুনরদ্ধার করা কঠিন। একজন গুরুজীর এ ধরণের কার্যকলাপ ছাত্রের স্বপ্ন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পাহাড় সমান প্রতিবন্ধকতার সামিল

২.

প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় ডিগ্রীর পর ডিগ্রী অর্জনের পর ও বিভিন্ন বিশ্বের সাথে তাল মিলানোর জন্য প্রতিযোগীতামূলক বিভিন্ন ইংরেজী পরীক্ষা যেমন আইএলটিস বা টোফেলে আশাব্যঞ্জক স্কোর না আসা আরেকটি বড় প্রতিবন্ধকতা।

৩.

ছাত্রদের যদি সিজিপিএ কম থাকে কানাডার কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, মনবসু স্কলারশিপ, ইউরোপের আরো বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে ফান্ডিংসহ কিছু সম্মানজনক স্কলারশীপের পাবার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।

৪.

ছাত্রছাত্রীদের পারিবারিক অর্থনীতি উচ্চ শিক্ষার স্বপ্নের ক্ষেত্রে বিরাট একটা প্রভাবকের কাজ করে। এই ব্যাপারে অনেক কিছু বলার আছে। বিস্তারিত পরের কোন এক পর্বে আসবে।

৫.

ছাত্রছাত্রীরা যদি বিভিন্ন প্রতিযোগীতা মূলক পরীক্ষার প্রস্তুতীর জন্য অনার্সের চার বছরে সময় না দিয়ে বিভিন্ন পীরবাবার পেছন পেছন ঘোরে আর প্রণয় ঘটিত ব্যাপারগুলোতে বেশী সময় দেয় তা স্বপ্ন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিশাল প্রতিবন্ধকতা হিসাবে কাজ করে।

৬.

স্বপ্ন দেখানো লোকের অভাব ছাত্রদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে আরো বিশাল একটা বাধা। অবাক করা কান্ড এই যে, একজন গুরু বছরের পর বছর পড়িয়ে যান, অথচ ক্লাসে কখনো চার-পাঁচ বছরে কখনো বলেনি দেখি কে কে ভবিষ্যতে এই বিষয় নিয়ে গবেষণা করতে চাও, পিএইচডি করতে চাও!! দুএকজন বলতে পারে হয়তো বা। আই হেভ ডাউট। স্বপ্ন কি এত সোজা এমনে এমনে আসে, এইটা দেখানোর লোক লাগে!!

এই ছয়টি গুরত্বপূর্ণ পয়েন্ট ছাত্রছাত্রীদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিশাল প্রতিবন্ধকতা হিসাবে কাজ করে।

পরবর্তী আর্টিকেলটি পড়তে ক্লিক করুন এখানে

– Rejaul Hoq Nayem, Teaching Assistant (TA) at Purdue University


নিচের লিংক থেকে রেজাউল হক নাঈমের লেখা অন্যান্য আর্টিকেলগুলো পড়তে পারেন-

 উচ্চশিক্ষা, স্বপ্ন ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা, বাধা, উত্তরণ ও করণীয় (পর্ব- ১)
 উচ্চশিক্ষা, স্বপ্ন ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা, বাধা, উত্তরণ ও করণীয়
য় (পর্ব- ২)
 উচ্চশিক্ষা, স্বপ্ন ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা, বাধা, উত্তরণ ও করণীয় (পর্ব- ৩)
 উচ্চশিক্ষা, স্বপ্ন ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা, বাধা, উত্তরণ ও করণীয় (পর্ব- ৪)
 উচ্চশিক্ষা, স্বপ্ন ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা, বাধা, উত্তরণ ও করণীয় (পর্ব- ৫)