বিষয় : ফোনেটিক্স বা উচ্চারনবিদ্যায় দক্ষতা অর্জন ও করণীয়

Phonetics

২০০৯ সালের মার্চের কোন একদিন। সাইফুর্সে স্পিকিং ক্লাবে যাবার সাথে সাথে Phonetics কোর্স শুরু করেছি। ফোনেটিক্স ক্লাসে পড়াতেন শফিক স্যার। তার অসাধারণ ব্রিটিশ এক্সেন্ট। তাঁর এক্সেন্ট শুনে মনে হতো আকাশের চাঁদ যে ভাবেই হোক ধরবোই। কিন্তু ২০-২১ বছর বয়সে কি আর হুট করে এমন এক্সেন্ট কি সম্ভব!! না মনে হয়!! বাংলাদেশে বড় হওয়া একজন মানুষের ইংরেজী এক্সেন্ট এতো সুন্দর হতে পারে!! প্রথম দিনে সবাইকে ইংরেজী আলফাবেট A to Z জিজ্ঞাস করলেন। কারো হয় নি। আশ্চর্য না ? আসলেই ।

16195272_10207276375138938_3373324664684382752_n

মেট্রিক, ইন্টার, অনার্স, মাষ্টার্স, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়ে যাই, ইংরেজী উচ্চারণ বিদ্যা অনুসারে A to Z উচ্চারণ ৯০ ভাগের বেশিরই হয় না। বিশ্বাস না হলে আজই নিজেকে পরখ করে দেখতে পারেন! আমি A to Z পারি না সত্যি অবাক হলাম। ইংরেজীতে তে এতো ভেরিয়েশন এই ক্লাসের আগে কখনো জানতাম না; আমেরিকান, ব্রিটিশ, অষ্ট্রেলিয়ান, নিউজল্যানড স্টাইল, আবার নাকি ইন্ডিয়ানদেরও নাকি নিজস্ব একটা স্টাইল আছে। তবে আমাদের কোন নিজস্ব স্টাইল নাই। আমরা জগা-খিচুড়ি বানিয়ে ব্রিটিশ-আমেরিকান মিশিয়ে বলি।

ফোনেটিক্স এর বইয়ের সাথে একটা সিডি দিলো আর কিনলাম কেম্ব্রিজ ডিকশিনারী সিডি সহ। উচ্চারণ শিখতে হলে আগে উচ্চারণ শুনতে হবে। শুনতে হলে কম্পিউটার লাগবে আর নাহলে স্মার্ট ফোন। পথে ঘাটে এই উচ্চারণ শুনার জন্য মোবাইল কিনার শখ হলো। কামাল উদ্দিন হলের ইংলিশ ৩৪ ব্যাচের Mondip ভাই (ভাই এখন ম্যাজিস্ট্র্যাট ) ১০,০০০ হাজার টাকা দিয়ে নোকিয়া 6124C একটা সেট বিক্রি করবেন। ভাঙ্গাচুরা মোবাইলটার খণ্ডবিখন্ড এখনো আছে আমার কাছে। আমার কাছে ৮,৫০০ টাকায় বিক্রি করলেন। ভাই তখন জানতেন না, কথা বলা ছাড়াও যে আমার আরেকটা একটা উদ্দেশ্য ছিলো এই মোবাইলে!!তার পর শুরু হলো আমার রাত দিন এই ফোনেটিক্স নিয়ে পড়ে থাকা। এই ফোনেটিক্সে বহু সময় দিয়েছি।

16265442_10207276394499422_1540851186044816432_n

সারাদিন এসব নিয়ে থাকতাম, কিছু কিছু বন্ধু আমাকে ফোনেটিক্স বলে ডাকতো। আমার বন্ধু সাগর, হলের পাশ দিয়ে যাবার সময় আমার জানালা দিয়ে মুখ দিয়ে ফোনেটিক্স ফোনেটিক্স বলে দু’একটা ডাক দিয়ে যেতো। খুব আহামরি এক্সেন্টের উন্নতি হয়নি। তবে কোনটা সঠিক কোনটা ভুল ঠিক সেটা উপলব্ধি হতো। প্রথম সুযোগে সঠিক না হলে ২য় বা ৩য় চেষ্টায় ঠিক হতো। আর যদি ফোনেটিক্স নাই জানা থাকে তাহলে ১০০ চেষ্টায় ও কাজ হবে না। তবে ফোনেটিক্স ছাড়াও লোকজন বেশ ভালোই চলছে, তবে ফোনেটিক্স জানা থাকলে আরেকটি ভালো হতো আর কি। g,j,z f,p এসব উচ্চারণে আমার খুব সমস্যা ছিলো। ইংলিশ লোকজন যে যুক্তাক্ষরকে সঠিকভাবে উচ্চারণ করতে পারে না, এইটা এই কোর্স করার আগে জানা ছিলো না। যেমন ধরুণ “আক্কাস আলীকে” কোন আমেরিকান কখনো আক্কাস না বলে আকাস বলে ডাকবে। আক্কাস বলে ডাকার ক্ষমতা তাদের নাই। এরকম আরো অসংখ্য উচ্চারণ রহস্য আছে, যা না শিখলে আপনার আহামরি কোন সমস্যা হবে না, তবে ফোনেটিক্স জানলে বীদেশে জীবন একটু সহজ হবে।

আমেরিকার সাউদার্ন কৃঞ্চাঙ্গদের উচ্চারন বোঝা এতো কঠিন, এত প্রস্তুতি নিয়ে ও প্রথম দিকে ২-৩ বার দু:খিত বলা লাগতো, তাদের শব্দের উচ্চারনের অর্ধেক থাকে মুখের ভিতরে, এদিক থেকে শেতাঙ্গদের উচ্চারণ অনেক ভালো। ২য় বর্ষ থেকে ২.৫ বছরের ইংরেজী শিখার প্রস্তুতি শেষ হয় ৪র্থ বর্ষের প্রথম দিকে। ততোদিনে মনে হয় ইংরেজী আমার একটু একটু হয়। সাইফুরর্সের স্পিকিং ক্লাবে আমার পারফরমেন্স তখন তুঙ্গে!! স্যার তখন আমার নাম ধরে ডাকে!! শেষ দিকে সব কোর্স শেষ হয়ে গেলে ও স্পিকিং ক্লাবে যাওয়া হতো। সেই সুবাদে বেশ কজন গুণীজনের সাথে ও পরিচয় হয়। এমন একজন হলো জাহিদুল ইসলাম ভাই, মনবসু স্কলার! কুষ্টিয়া ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের ছাত্র ছিলেন।

সুফল : এত কিছু করেও আইএলটিসে একবারে আমার সুফল আসে নি। মন মতো স্কোর পেতে আমার 2 বার পরীক্ষা দিতে হয়েছিলো। ভাবছেন এতবার!! হুম আসলেই আমি অধম। আমি জানি আমার একবারে হবে না, তাই সময় থাকতেই মাঠে নেমেছি। যাতে হতাশ হওয়া না লাগে।

রাইটিং, স্পিকিং, ফোনেটিক্স, স্পিকিং ক্লাব, সাইফুর্স; এসবের বড় সুফলটা পেলাম ২০১৫ সালের অগাষ্টে। Purdue University তে ভর্তির পর Teaching Assistant দের একটা টিচিং কোয়ালিটি পরীক্ষার জন্য একটা পরীক্ষা নিবে, যার উপর নির্ভর করবে আমি কি সরাসরি টিচিং করবো নাকি শুধু গ্রেডি বা প্রক্টরিং করবো (মানে যেসব কাজে স্টুডেন্টের সাথে কথা বলার দরকার হয় না।)

16142534_10207276366978734_5945133107179965360_n

রসায়নের ১০ টি প্রশ্ন দেয়া হয়েছে, যা পরিদন আমাকে পড়াতে হবে, ছাত্র হিসাবে থাকবে ৩-৪ জন প্রফেসর আর ৩-৪ জন সিনিয়র গ্রেজুয়েট স্টুডেন্ট। তারাই সবাই ১ম, ২য় বর্ষের ছাত্রের মতো আমাকে যে কোনখান থেকে প্রশ্ন করবে এটা ছিল নিয়ম। বেশ কিছু ইন্ডিয়ান আর চাইনীজকে পেছনে ফেলে আমি পরীক্ষায় পাশ করেছি, ইংরেজীতে টিচিং এর জন্য আর বিশেষ কোন কোর্স নেয়া লাগে নি। সেই থেকে শুরু টিচিং এসিস্ট্যান্ট হিসাবে লেকচার দেওয়া শুরু । এখনো চলছে। আর সব সময়ইতো আমেরিকানদের সাথে কথা বলে যেতেই হয়। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এখনো স্টুডেন্টের সামনে উচ্চারনে সমস্যা হয়। আবার বিদেশী বন্ধু-বান্বের সাথে আড্ডার সময় মনের কথা মুখে আসেনা, ম্যামলিং(mumbling) হয়। তবে এসব ইগনোরেবল। প্রায়ই মনে পড়ে লালমাটিয়া পানির টাঙ্কির পিছনের সাইফুর্সের ছোট্ট উঠোনটির কথা যেখানে আমার ইংরেজীর ভীত গড়েছি…

আর্টিকেলটির পূর্ববর্তী পর্বটি পড়তে এখানে এবং ১ম পর্ব পড়তে ক্লিক করুন

– Rejaul Hoq Nayem, Teaching Assistant (TA) at Purdue University


নিচের লিংক থেকে রেজাউল হক নাঈমের লেখা অন্যান্য আর্টিকেলগুলো পড়তে পারেন-

 উচ্চশিক্ষা, স্বপ্ন ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা, বাধা, উত্তরণ ও করণীয় (পর্ব- ১)
 উচ্চশিক্ষা, স্বপ্ন ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা, বাধা, উত্তরণ ও করণীয় (পর্ব- ২)
 উচ্চশিক্ষা, স্বপ্ন ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা, বাধা, উত্তরণ ও করণীয় (পর্ব- ৩)
 উচ্চশিক্ষা, স্বপ্ন ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা, বাধা, উত্তরণ ও করণীয় (পর্ব- ৪)
 উচ্চশিক্ষা, স্বপ্ন ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা, বাধা, উত্তরণ ও করণীয় (পর্ব- ৫)