ঐদিন নর্থ ডাকোটা সাউথ ডাকোটা রিসার্চ সামিটে আমার একটা পোস্টার প্রেজেন্টেশন থাকে। ওখানে বাংলাদেশি একজনের সাথে পরিচয় হয়। দেখতে এশিয়ানরা অনেকটা এক রকম হলেও আমি এখন বাঙালি, পাকিস্তানি, ভারতীয় মোটামুটি আলাদা করতে পারি। চীনা, জাপানি, কোরিয়ান এদের সবারই নাক বোঁচা, কুতকুতে চোখ, তবু কোথায় জানি পার্থক্যটা বোঝা যায়। আমি নিজে থেকে যেয়ে ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করি বাঙালি কিনা, উনি হ্যাঁ বলেন। বেশ ভাল সময় কাটে আমার। অনেক খাওয়া দাওয়া থাকে। যদিও আমি কিছুই খেতে পারিনা। আমার পাশে বসে হোসেন তিন মানুষের খাবার খেয়ে ফেলে। অনুষ্ঠান শেষে বেষ্ট পোস্টারের পুরস্কার দেওয়া হয়। আমি কিছুই পাই না। কান্তা আপু প্রথম পুরস্কার পায়। বাংলাদেশি একটি মেয়ে প্রথম পুরস্কার পাওয়াতে খুব ভাল লাগে আমার। অনুষ্ঠান শেষে ল্যাবে আসি। সবাই বলতে থাকে, ইউ আর ইন ফ্যান্সি ড্রেস। খুব সুন্দর দেখাছে তোমাকে। শুধু রোমান কিছু বলে না। আমার দিকে তাকায় না পর্যন্ত। দেখি আমেরিকান মেয়েটি ওর পাশে বসা। প্রচণ্ড হাসাহাসি করছে ওরা।

আমি বাসায় চলে আসি। পরদিন ল্যাবে যাই। দেখি মেয়েটিও বসে আছে। রোমান তাকে জাগ্লিং শেখাচ্ছে। জাগ্লিং হল অনেকগুলো বল নিয়ে খেলা। বলগুলো ছুঁড়তে হবে উপর দিকে। আর মাটিতে আসার আগেই ধরে ফেলতে হবে। খেলাটা খুব মজার তবে আমার কাছে খুব কঠিন মনে হয়েছে। রোমান একজন ভাল জাগ্লার। ও প্রফেশনালিও খেলে। একসাথে চার পাঁচটি বল নিয়ে খেলতে পারে। ও আমাকে খেলার ট্রিকটা শিখিয়েছিল। ট্রিকটা হল খুব উঁচুতে বল গুলো ছোঁড়া। যাতে বেশি উচ্চতার কারণে ওরা মাটিতে পৌছাতে বেশি সময় নেয়। আর এই সময়ের মধ্যে অন্য বলগুলো ধরে ফেলতে হবে, আবার কোনটি ছুঁড়তে হবে। রোমানের মেয়েটিকে খেলা শেখানো শেষ হয়। ওরা চলে যাবার পর নেপালি ছেলেগুলো নিজেদের মধ্যে আলাপ করে।, আলাপের বিষয়বস্তু মেয়েটি ওর গার্লফ্রেন্ড কিনা। মোটাসোটা অমেয়া বলে, আশি কেজি ওজনের মুটকি কি করে গার্লফ্রেন্ড হয়! রাতে বাসায় যেয়ে দেখি রোমান ফেসবুকে মেয়েটির সাথে একটি ছবি দিয়েছে আর লিখেছে ইন এ রিলেসনশিপ উইথ মিশেল। সবাই অভিনন্দন জানায় ওকে। আমিও জানাই। ভীষণ মন খারাপ হয় আমার। নাসরিনকে বলি সে কথা। নাসরিন বলে, ও তো তোর প্রেমিক নয়, তাহলে কেন তুই মন খারাপ করবি? কেন জানি তবুও খুব মন খারাপ থাকে আমার।

এপ্রিল মাসের আর দু একদিন বাকি। মোটামুটি সব বরফ গলে গেছে। মরা ঘাসগুলো উঁকি দিচ্ছে। আমেরিকানরা সবাই এখন শর্টস পরে হাঁটে। গাড়ির বদলে অনেকেই সাইকেল নিয়ে স্কুলে আসে। কেউ কেউ আসে রোলার স্কেটিং এ চড়ে। খেলতে খেলতে চলে আসে। তারপর স্কেটিংটা বগল দাবা করে ডিপার্টমেন্টে ঘোরে। এক বিল্ডিং থেকে আর এক বিল্ডিং এ ক্লাস করতে যায় স্কেটিং এ চড়ে। আমার টি এ ল্যাবের একটি মেয়ে স্টুডেন্টকে দেখি প্রায় স্কেটিং এ চড়ে আসে। নাসরিন এখন সোয়েটার পরে সাইকেল নিয়ে বের হয়। অনেক অজানা রাস্তায় যায় ও। আর ফিরে এসে আমাকে গল্প করে শোনায়। মাঝে মাঝে আমাকে নিয়ে সন্ধ্যায় হাঁটতে বের হয়। আমরা রাস্তায় অনেক আসবাব পত্র দেখি। খাট, সোফা, টিভি নানান জিনিস বাসার সামনে আমেরিকানরা রেখে দিয়েছে। যার যেটা প্রয়োজন নিয়ে যাচ্ছে। সামারের শুরুতে সাধারনত আমেরিকানরা বাসা পরিষ্কার করে। তখন অনেক পুরনো অকেজো জিনিস ফেলে দেয়। ফেলে দেয় মানে বাসার সামনে রেখে দেয়। ঐ অকেজো জিনিসটি যার কাছে ভীষণ কাজের, সে কুড়িয়ে নিয়ে যায়। কেউ না নিলে একটা নির্দিষ্ট সময় পর মিউনিসিপালের লোক এসে নিয়ে যায়। ডাম্প করে ফেলে। নেপালি একটি ছেলে একটি টিভি কুড়িয়ে নিয়ে যায়। আমার খুব লজ্জা করতে থাকে। আশে পাশে তাকিয়ে আমি একটা সাইকেল নেই। নাসরিন আমাকে সাইকেল চালানো শেখায়। ও অনেক চেষ্টা করে। আমিও চেষ্টা করি। তবু কিছুতেই শিখে উঠতে পারি না।

এপ্রিল মাসের ত্রিশ তারিখ। আজকে একাউন্টে মে মাসের বেতন জমা হওয়ার  কথা। কিন্তু আমার একাউন্টে কোন টাকা জমা হয়নি। নাসরিনকে জিজ্ঞেস করি। ও বলে ওর একাউন্টে জমা হয়েছে। এটা মনে হয় ডিপার্টমেন্ট ওয়াইজ ভেরি করে। তুই এক তারিখ পর্যন্ত দেখ। তারপর ডিপার্টমেন্টে জানা। আমি ফাইনাল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি।

মে মাসের এক তারিখ। আমাকে সাইকেল চালানো শেখানোর মাঝপথে রেখে আজ নাসরিন দেশে যাচ্ছে। যাবার আগে ও আমাকে ল্যাবে এসে হাগ দিল। আমি খুব কাঁদলাম। ওর সামনে কেঁদে ফেললাম। ও চলে গেল। আমি বাথরুমে যেয়ে শব্দ করে কাঁদলাম। আমার পাশের টয়লেটে যারা ছিল তারা  হয়ত শুনছিল। তবু আমি চিৎকার করে কাঁদলাম। আমাকে মে মাসের বেতন দেওয়া হয়নি। আমি খুব কাঁদছি। পুরা পৃথিবীর কাছ থেকে নিজেকে লুকিয়ে কাঁদছি। আমার টিচিং এসিস্টেন্টশীপ কন্ট্রাক্ট থেকে রিসার্চ এসিস্টেন্টশীপ করার সময় ওরা ভুল করে মে কে মার্চ লিখেছে। মার্চ মাসের বেতন এপ্রিলে দেওয়া হয় তাই এপ্রিলে বেতন পেয়েছি। তবে দশ দিন লাগবে। এর মধ্যে বেতন পেয়ে যাব। এজন্য ওরা ভীষণ দুঃখ প্রকাশ করে আমার কাছে।

একটা পরীক্ষা ছিল দিলাম। তারপর ঘরে ফিরলাম। নাসরিনের ঘর ফাঁকা। এ ঘর ফাঁকা ও ঘর ফাঁকা। মনে হল শুধু ঘর ফাঁকা নয় পুরো পৃথিবীটাই ফাঁকা হয়ে গেছে। কেউ নেই আমার। খুব অচেনা আর ভীষণ ভয়ের রাস্তায় যেন একা হাঁটছি আমি। যে রাস্তায় আর কোন পথিক নেই। হাঁপিয়ে গেলে, ক্লান্ত হলে আশ্রয় দেবার কেউ নেই। কোথায় যাব কাকে বলব আমার পরিশ্রান্তির কথা, এক দংগল কাঁটা মাড়িয়ে ক্ষত বিক্ষত হয়ে যে হাঁটছি তার কথা। ফ্রিজ খুললাম, দেখি নাসরিন রান্না করে রেখে গেছে আমার জন্য। খেতে ইচ্ছে হল না। ভীষণ নিষ্ঠুর মনে হল সব। খুব কাঁদলাম আমি। অনেক্ষন শুধু কাঁদলামই। এ ছাড়া আর কি করতে পারি আমি। আর কি করার আছে আমার। তবে সেই কান্নার কথা কেউ কি জানল! দেয়ালগুলো হয়ত শুনল। বাথরুমের জলের ধারায় সে কান্নার জল হয়ত কিছু মিশল। কিন্তু কেউ জানল না, আমেরিকার ব্রুকিংস নামের এক শহরে একটি মেয়েটি আজ খুব কাঁদছে। এই মাসে মেয়েটি বেতন পায়নি। এই দশ দিন সে কি খাবে, কিভাবে বাড়িভাড়া দিবে।

সকালে উঠে দেখি ভীষণ জ্বর। মাথা তুলতে পারছি না। বমি হয়ে গেল। ডিপার্টমেন্ট গেলাম। বিকেলে প্রজেক্টের রিপোর্ট জমা দিলাম। বাসায় এসেছি। সেই সে শূন্য ঘর। নাসরিনের কথা মনে পড়ল। মনে হল পৃথিবীর একমাত্র আপনজন আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। আবারও খুব কাঁদলাম আর পর্দা তুলে, রেস্টুরেন্টে আসা মানুষ দেখতে থাকলাম।  কিন্তু তামাটে চামড়ার কালো চুলের কাউকে সেখানে দেখলাম না। আম্মু ফোন দিয়েছিল। নাসরিন দেশে এসেছে, দেশে না আসতে না পারায়, আমার মন খারাপ কিনা। বললাম, না। আব্বু বলল, সব ঠিক আছে কিনা, টাকা-পয়সার কোন সমস্যা আছে কিনা। বললাম, না।

পরীক্ষা টরীক্ষা সব শেষ হল। সবাই কাজে কর্মে খুব ঢিলেঢালা। এর ওর বাড়িতে পার্টি হচ্ছে। মলি ভাবী বাঙালিদের সবাইকে ওনার বাসায় দাওয়াত দিলেন। আমি গেলাম না। পাঁচ তারিখ পড়ে গেছে। নাসরিনের কাছ থেকে কিছু টাকা ধার নিয়েছিলাম। তাই এ মাসে বাড়িভাড়া, বিল আমার দেবার কথা। বিলের অংক খুব কম নয়। কিভাবে কি করব বুঝতে পারছিলাম না। লেটার বক্স চেক করলাম। এ মাসের বিল দেখি অদ্ভুতভাবে খুব কম এসেছে। আমি একাউন্টের আগের টাকা থেকে বিল দিয়ে ফেললাম। এবার বাসাভাড়া দিতে হবে। একটা অনুনয় বিনয়ের গল্প সাজিয়ে বাড়িয়ালার অফিসে গেছি। বাড়িয়ালা নিশ্চয়ই কথা শুনবে না, বলবে তোমরা এশিয়ানরা অজুহাত দিতে খুব ভালবাসো, সমস্যা শুধু তোমাদেরই হয় কিন্তু আমার তো এ ব্যাপারে করার কিছু নেই। এরকম কিছুই শুনব নিশ্চয়ই। তারপর লেট ফি ধরিয়ে দেবে, অপমানিত হতে হবে। বাড়িয়ালাকে বললাম, এই এই সমস্যা, আমি তোমাকে দশ তারিখে ভাড়া দিব। উনি বললেন, তোমরা দুটি মেয়ে অনেক কষ্ট করেছ। তিনজনের ভাড়া দুইজনে দিয়েছো। তোমাদেরকে এ মাসে ভাড়া দিতে হবে না। তোমাদের লিজতো পনের তারিখে শেষ, এ মাসেই বাসা ছাড়ছ। তাই সিকিউরিটি মানির নয়শ ডলার আমি ভাড়া আর মেইন্টেনেন্স কস্ট হিসেবে কেটে নিলাম । খুব অবিশ্বাস্য শোনাচ্ছিল তার কথা। নিয়ম অনুযায়ী বাড়িভাড়া দেবার কথা। বাড়ি ছাড়ার পর ইন্সপেকশন করা হয়। সিকিউরিটি মানির টাকা ইন্সপেকশন রিপোর্ট অনুযায়ী ফেরত দেওয়া হয়। আমি মনে মনে সৃষ্টিকর্তাকে অসংখ্য ধন্যবাদ দিলাম।

ল্যাবে এসে দেখি ডোনাট দিয়েছে। রোমান আর তার বান্ধবী ওরাও ডোনাট খাচ্ছে। মেয়েটিই আমার সাথে কথা বললো। মেয়েটিকে বেশ ভাল লাগল আমার। গ্রাফিক্স ডিজাইনে পড়ে। সাউথ ডাকোটার মেয়ে, ওয়াটার টাউনে থাকে। ঘোড়ায় চড়তে খুব ভালবাসে। আমাকে অনেক ঘোড়ায় চড়া ছবি দেখাল। বেশ ভাল একটা দিন কাটল আমার। রাতে দেখি মলি ভাবী এসেছে, সাথে রুমা আপুও এসেছে। আমি পার্টিতে যাইনি বলে আমাকে খাবার দিতে এসেছেন। মলি ভাবীর ছোট মেয়ে নুশেরাকে বাসায় রেখে এসেছেন। তাই ওনারা বসলেন না, খাবার দিয়ে চলে গেলেন। আর দাওয়াতে যাইনি বলে কিছুটা বকা ঝকা করে গেলেন। আমি খাবার খেলাম। মলি ভাবী অনেক খাবার দিয়ে গিয়েছেন। ওনার রান্না সবসময় খুব ভাল। ঐ খাবারে আমার একদিন চলে গেল।

ক’দিন খুব কাজ করলাম। আবার জ্বর এসেছে আমার।। মাথাব্যথা ভীষণ বেড়েছে। বমিও হচ্ছে খুব। দু’দিন এভাবে আছি। প্রচণ্ড খারাপ লাগছে শরীর। আর থাকতে পারছিলাম না। ভোরের আলো তখনও ফোটেনি বাইরে এসে বসলাম। একটু ভাল লাগতে শুরু করল। কিন্তু অন্ধকারে ভীষণ ভয় লাগছিল, ঘরে চলে আসলাম। সকালে দেখি জ্বর আরও বাড়ছে। সাজ্জাদকে ফোন করলাম। সাজ্জাদ এল। বাসায় একা ছিলাম বলে বেশীক্ষণ বসল না। ও বললো আমি কিছু খেতে চাই কিনা। রাতে সকালে আমি কিছুই খাইনি। খুব কমলা খেতে ইচ্ছে করছিল। তবুও না বললাম।

মে মাসের নয় তারিখ। আমার একাউন্টে টাকা এসেছে। একদিন আগেই ওরা আমাকে টাকা পাঠিয়েছে। আমার শরীর ভাল লাগতে শুরু করল। আমি দু’রাকাত নফল নামাজ পড়লাম। খুব খিদে পেল। ফ্রিজ খুলে দেখি তেমন কিছু নেই। আমি ফেসবুকে একটা অভিমানী স্ট্যাটাস দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।

আমি হাঁটছি। এ শহরে বাস সার্ভিস নেই। বাসে যেতে হলে আগে ফোন দিতে হয়। আমি হাঁটলাম। দু ঘণ্টা জ্বর গায়ে হাঁটলাম। আমরা বাসা ছেড়ে দিচ্ছি। তাই ইলেকট্রিক, গ্যাস ও ইন্টারনেট অফিসে অনেক কাজ ছিল। সেগুলোও বেশ দূরে দূরে। সেগুলো সারলাম। আমি হাঁপিয়ে গেলাম। দুপুরের রোদ ভীষণ চড়ে গেছে তখন। আমার গলা শুকিয়ে আসছিল। পুরা শার্ট ভিজে গেছে। আমি ডিম, মাংস, দুধ, চাল, ডোনাট আর কমলালেবু কিনলাম। কিছু কাঁধে আর কিছু হাতে নিয়েছি। আমি হাঁটছি। দুমাইল পথ আমার কাছে দুশো মাইল মনে হল। পথ ফুরচ্ছিলোনা। সূর্য মাঝ আকাশে, পথের কোথাও ছায়া ছিল না। আমি বাড়ি পৌঁছাব কিনা আমার  ভীষণ ভয় হতে লাগল। আমি শুধু নিজেকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলাম, এইতো আরেকটু পথ, প্রায় এসে গেছি। কিন্তু পথ আসলে ফুরচ্ছিলনা না। আমি রাস্তার মাঝে মাঝে বার বার থামছিলাম। কাঁধ থেকে ব্যাগ নামাচ্ছিলাম। মেরুদণ্ড ভেঙে যাচ্ছিল মনে হচ্ছিল। প্রচণ্ড রোদে দর দর করে ঘামছিলাম। থামলে আরও বেশি কষ্ট হচ্ছিল যেন। যা হয় হোক ভেবে আমি একটানে হাঁটা দিলাম। আমি বাড়ি পৌঁছেছি। বাড়ি পৌঁছাতে পেরে অদ্ভুত আনন্দ হল আমার। মেঝেতে শুয়ে থাকলাম কিছুক্ষণ। দুইটা ডোনাট খেলাম। নুডুলস চাপিয়েছি। খুব সুস্থ লাগল শরীর। রাতে নাসরিন আমাকে ফেসবুকে জিজ্ঞেস করল কেমন আছি। ওকে সব বললাম। ও খুব বকা দিল, ওকে আগে কেন সব বলিনি।

কদিন পর আমি চলে যাব এ বাসা ছেড়ে। গোছগাছ করছি। জরিমানা এড়াতে বাসা নিখুঁত ভাবে পরিষ্কার করছি। সন্ধ্যেই সুরিয়া এল, যে মেয়েটির কাছে আমি উঠছি। ও খুব অবাক হল, নাহার তুমি কি করে এত বড় বাড়িতে একা থাক? তোমার ভয় লাগে না? বললাম, ভয় লাগে না। শুধু ঘুমোতে যাবার আগে রুমের মধ্যে একটি পাত্র নিয়ে ঘুমাতে যাই, যাতে বাথরুমের জন্য রাতে বেরুতে না হয়। তবে এখন পর্যন্ত পাত্রের দরকার হয়নি। সুরিয়া হেসে কুটি কুটি। আমিও হেসে কুটি কুটি। আমি আমার আমেরিকার প্রথম বাসা ছেড়ে সুরিয়ার বাসায় উঠলাম।

 


প্রবাসে সিরিজের গল্পসমূহঃ

 পর্ব ১ঃ যাত্রাপথের গল্প
 পর্ব ২ঃ নতুন বাসা, ওরিয়েন্টেশন, রাস্তা হারানো
 পর্ব ৩ঃ পুলিশ আসা, রেজিস্ট্রেশন বিড়ম্বনা
 পর্ব ৪ঃ ডরমেটরির গল্প, প্রথম তুষারপাত
 পর্ব ৫ঃ ইন্টারন্যাশনাল নাইট, বাসা নিয়ে ঝামেলা, শায়লা আপুর চলে যাওয়া
 পর্ব ৬ঃ কামরানকে হাসপাতালে নেওয়া, টেকো সুদীপ আর ব্রিটিশ প্রফেসরের গল্প
 পর্ব ৭ঃ ল্যাব ও ফরাসী যুবকের হৃদয় ভাঙার গল্প।
 পর্ব ৮ঃ সামার এসেছে, বেতন পাইনি, প্রথম বাসা ছেড়ে দিলাম
 পর্ব ৯ঃ সঙ্গীহীন জীবন, সুরিয়া মথুর গল্প, সামারের দিনলিপি, একা পথ চলা
 পর্ব ১০ঃ বিদেশী ভাষা শেখা ও আমেরিকান চাষাবাদের গল্প
 পর্ব ১১ঃ আমার বাইবেল শেখা
 পর্ব ১২ঃ সাজ্জাদের চলে যাওয়া, লিবিয়ান পরিবারের গল্প
 পর্ব ১৩ঃ মুহিত ভাইয়ের গল্প, আমার আগুন ধরিয়ে ফেলা
 পর্ব ১৪ঃ মসজিদ, ঈদ, ইয়ামিনী আসা, নতুন বাসা, আমেরিকান বিয়ে ও অরিগন যাবার গল্প
 পর্ব ১৫ঃ
 পর্ব ১৬ঃ
 পর্ব ১৭ঃ
 পর্ব ১৮ঃ
 পর্ব ১৯ঃ

লেখক পরিচিতিঃ

 জান্নাতুন নাহার তন্দ্রা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ‘নর্থ ক্যারোলিনা এ এন্ড টি স্টেট’ ইউনিভার্সিটিতে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ ‘PhD’ করছেন এবং তার গবেষণার বিষয় হল ‘Real time Object detection with Higher Accuracy’। jannatunজান্নাতুন নাহার তন্দ্রার স্কুল জীবন কেটেছে চুয়াডাঙ্গা শহরে, কলেজ জীবন হলিক্রস কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয় জীবন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগে। এবং সেখান থেকেই ২০১০ সালে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন তিনি। এরপর একটি সংক্ষিপ্ত কর্মজীবন শেষে ২০১২ সালে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে এবং ২০১৪ সালে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। জান্নাতুন নাহার তন্দ্রা অবসরে লিখতে ভালবাসেন এবং সে অভ্যাস বশতই আমেরিকার গ্রাজুয়েট প্রোগামে একা একটি মেয়ে পড়তে আসার অভিজ্ঞতা (সাউথ ডাকোটা) একসময় তিনি লিখতে শুরু করেন। এবং তার এই অভিজ্ঞতা নিয়ে ‘প্রবাসে’ নামে ২০১৫ সালের ‘একুশে বই মেলায়’ তার একটি বই প্রকাশিত হয়। বইটি কোন তথ্যমূলক বই নয় বরং বলা যায় এটি লেখিকার রোজকার ডায়েরী।