জিআরই এবং টোফেল: হায়ারস্টাডির প্রস্তুতি হোক স্ট্র্যাটিজিক্যালি (পার্ট- ১) পড়তে ক্লিক করুন এখানে
১. পড়ার অভ্যাস করুন। রিডিং ম্যাটেরিয়ালও বাছাই করে পড়ুন। ভালো এবং দ্রুত পড়তে পারলেই ভালো এবং দ্রুত লিখতে পারবেন। New York Times, Washington Post অথবা যেকোনো ভালো অনলাইন পত্রিকা থেকে একটা দুটো করে আর্টিকেল নিয়ম করে পড়ুন। মিডিয়া গসিপ টাইপের হালকা খবর নয়, বরং অ্যানালাইসিস থাকে, পড়তে বিরক্ত লাগে বা মাথা খাটাতে হয় এমন টপিক বাছাই করে পড়ুন। দ্রুত পড়ে বোঝার চেষ্টা করুন। পড়ার ক্ষেত্রে যখনই Comfort Zone থেকে বার হতে পারবেন, তখুনি আপনার স্কিল বাড়তে শুরু করবে।
২. যা-ই লিখুন না কেন, টাইম ধরে লিখুন। ত্রিশ মিনিটের ভেতর একটা টপিক বুঝিয়ে লেখা প্র্যাকটিস করুন। নিজের রেসপন্সের কোয়ালিটিও বোঝার চেষ্টা করুন। স্পেল চেকার অফ করে লিখুন। দরকার হলে একই টপিকে কয়েকবার লিখুন ভিন্ন ভিন্ন দিনে। আপনার চিন্তার গতি বাড়বে।
৩. লেখার আগে ব্রেইনস্টর্মিং আর শর্ট নোট নেয়া প্র্যাকটিস করুন। দু’তিন শব্দে একটা পয়েন্ট লিখুন কাগজে, তারপর সেগুলো বিশ্লেষণ করুন। শর্ট নোট নিতে গিয়ে যেন রচনা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন।
৪. লেখার ভাষার ক্ষেত্রে একটু Flexible থাকুন। সবদিকের অপশনই ভাবুন। খুব এক্সট্রিম কোন ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার না করাই ভালো, অর্থাৎ ফর্মালিটি বজায় রাখুন। ঝরঝরে ভাষায় লেখাই ভালো। যদি দেখেন জটিল করে লিখতে পারছেন না, তাহলে দরকার নেই, একটু সহজ করেই লিখুন। কিন্তু লেখাটা গোছানো যেন হয়। জটিলতার চেয়ে লেখার সাবলীলতা বেশী গুরুত্বপূর্ণ।
৫. আপনার রেসপন্সে কী কী ছেলেমানুষি বা অকারণ আবেগ আছে, কোথায় আরও একটু ম্যাচিউর হওয়া দরকার, কী করে লিখলে লেখাটা আরও লাগসই হত, এগুলো অনেক সময় নিজে বুঝতে পারবেন না। কাজেই ভালো লেখে এমন কাউকে দিয়ে পারলে দেখিয়ে নিন। অবশ্য একটু কসরত করলে নিজেই উন্নতি করতে পারবেন।
এখানে তিন রকমের প্রশ্ন পাবেন। Text Completion, Sentence Equivalence, Reading Comprehension.
Text Completion:
এগুলো শূন্যস্থান পূরণ। একটা বাক্য থাকবে, তাতে একটা, দুটো কিংবা তিনটা শূন্যস্থান থাকবে। ওপরের ক্লু থেকে আপনাকে বাছাই করে বসাতে হবে। এ অংশে আপনার ভোকাবুলারি ভালো থাকলে একটা ভালো সুবিধা পাবেন, কারণ অর্থ আন্দাজ করে হাতড়াতে হবে না। তাছাড়া বড় বড় সেন্টেন্স যত হ্যান্ডেল করবেন, এ সেকশনে তত সুবিধা। অর্থাৎ, এখানে এক নম্বর অস্ত্র হল প্র্যাকটিস। আজকাল খুব কঠিন ভোকাবুলারি আসে না, সাধারণত আটকে যেতে হয় Sentence Structure এর জটিলতার কারণে ঠিক কী বোঝাচ্ছে সেটা ধরা যায় না এজন্য। কাজেই এদিকে জোর দিতে হবে।
Sentence Equivalence:
এগুলোও শূন্যস্থান পূরণ। তবে ক্লু থেকে এমন দুটো শব্দ বেছে নিয়ে বসাতে হবে, যেন দুটোর ক্ষেত্রেই সেন্টেন্সের মিনিং একই হয়। এক জোড়া Synonym বেছে নিয়ে বসিয়ে দেবেন ব্যাপারটা এত সহজ নয়, কাজেই শব্দের Secondary Meaning, Sentence এর Connotation(অর্থাৎ সেন্টেন্সের টোনটা কী), Trigger words, Direction of Sentence এসব নিয়ে প্র্যাকটিস করতে হবে।
Reading Comprehension:
অনেকে এই সেকশনকে যমের মত ভয় পায়। তবে ভালো স্কোর করতে হলে একে ফেইস করতেই হবে, কারণ প্রায় ভার্বালের প্রায় অর্ধেক প্রশ্ন আসে রিডিং কম্প্রিহেনশন থেকেই। নানান টপিক, যেমন আর্টস, সায়েন্স, স্পেইস, জিওলজি, হিস্ট্রি, লিটরেচার, কালচার, পলিটিক্স সব থেকেই আসতে পারে। ছোট, মাঝারি, বড় সব সাইজেরই আসে।
এখানে আপনাকে মস্ত সুবিধে দেবে ভালো রিডিং স্পিড। অর্থাৎ দ্রুত পড়ে একটা প্যাসেজ শেষ করতে পারা। অনেক সময় ট্রিক্স হিসেবে বলা হয় যে আগে প্রশ্ন পড়ে তারপর উত্তরটা প্যাসেজের ভেতর খুঁজে বার করা উচিৎ, কিন্তু এটা ভুল ধারণা। এটা ফলো করতে গেলে আপনি কয়েকবার আধাখাপচাভাবে প্যাসেজটা পড়ার টাইম ঠিকই নষ্ট করবেন, কিন্তু পুরো প্যাসেজটা বুঝে উঠতে পারবেন না। কাজেই প্রশ্ন দেখার আগে প্যাসেজটা ভালোভাবে খুব দ্রুত পড়ে নিন (Skimming, not skipping). তারপর প্রশ্ন পড়ুন, অপশনগুলো যাচাই করুন। তারপর ঠিকটাতে দাগ দিন। আগেই হতাশ হবেন না, বরং বেশ কয়েকটি প্যাসেজ বেশ কয়েকদিন ধরে প্রথমে আনটাইমড কন্ডিশনে, তারপর টাইমড কন্ডিশনে পড়া প্র্যাকটিস করুন। ধীরে ধীরে উন্নতি হবে। আপনি যদি সায়েন্স ব্যাকগ্রাউন্ডের ছাত্র হোন তাহলে আর্টস রিলেটেড প্যাসেজ বেশী প্র্যাকটিস করুন। যদি আর্টস ব্যাকগ্রাউন্ডের ছাত্র হোন তাহলে সায়েন্স রিলেটেড প্যাসেজ পড়ুন। অর্থাৎ, কমফোর্ট জোন ছেড়ে বেরিয়ে এসে প্র্যাকটিস করুন।
প্র্যাকটিস করলে উন্নতি হয় এটা তো সবাই জানে, তারপরও একই ভ্যাজর ভ্যাজর বারবার করছি কেন? কারণ জিআরই জাতীয় পরীক্ষাগুলোতে প্র্যাকটিস করতে করতে একটাIntuition ডেভেলপ করে, যেটা মস্ত বড় অস্ত্র। বেশী বেশী প্র্যাকটিস করতে করতেই দেখবেন একটা সময় আন্দাজ করতে পারবেন কী করে একটা প্রশ্ন সলভ করতে এগুতে হয়, কীভাবে আন্দাজ করতে হয়, কীভাবে ভুল উত্তরটা বাদ দেয়া যায়। এটা একদিনের জন্য বসলে পারা যাবে না, এজন্যই দীর্ঘমেয়াদী এবং বিরক্তিকর প্রসেসের সমর্থন করছি (ঠিক এই পোস্টটা যেমন!)।
ভার্বাল অংশে অবশ্যই চেষ্টা করবেন যেন একটা ডিসেন্ট স্কোর আসে, কারণ অনেক ভার্সিটিতে অ্যাপ্লাই করার জন্য ভার্বালে ১৫০ এর ওপরে চায়। চেষ্টা করুন এ থেকেও অনেক ওপরে রাখতে, এবং বিশ্বাস রাখুন যে এটা খুবই সম্ভব যদি আপনি সময় দেন।
সেকশনঃ Quantitative:
এ সেকশন একেকজনের জন্য একেকরকম। কারো কাছে সোজা কারণ সে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েছে এবং সারাজীবন ম্যাথ নিয়েই ছিল, কারো কাছে কঠিন কারণ সেই ইন্টারমিডিয়েটের পর ম্যাথ আর ছোঁয়া হয় নি এবং সারাজীবনই অঙ্কে কাঁচা ছিল ইত্যাদি।
সত্যি বলতে এ অংশের সব প্রশ্ন হল High School Math. অর্থাৎ ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত যেসব অংক করেছেন সেগুলো দিয়েই সব কাভার হয়ে যাবে। এবং সাধারণ টপিকগুলোই, জটিল কিছু যেমন ক্যালকুলাস জাতীয় কিছু থাকবে না। চারটা থিমের প্রবলেম থাকবে এই সেকশনে–
Arithmetic: আমরা যাকে পাটিগণিত বলি সেটা। সাধারণ যোগ বিয়োগ গুণ ভাগ, অসমতা এসব। Number Theory থেকেই একটা বড় অংশ থাকবে। এছাড়াও থাকবে বিন্যাস, সমাবেশের সমস্যা, শতকরা, দশমিক, ঘাত ইত্যাদি। যে যোগ বিয়োগ করতে পারবে, সে আসলে অনেক কিছুই পারবে!
Algebra: বীজগণিতের সাধারণ সমস্যা। যেমন সমীকরণ তৈরি এবং সমাধান।
Geometry: প্রায় চার ভাগের এক ভাগ সমস্যা থাকবে জ্যামিতি থেকে। Triangle, Circle, Quadrilaterals, Polygons, Co-ordinate Geometry, 3-D Geometry, Mensuration (পরিমিতি)ইত্যাদি থাকবে। Trigonometry লাগে না, তবে এ সম্পর্কে আপনার ধারণা থাকলে অনেক সমস্যা খুব সহজে সমাধান করতে পারবেন।
Data Interpretation: পরিসংখ্যান জাতীয় সমস্যা। অর্থাৎ একটা চার্ট, টেবিল বা গ্রাফ দিয়ে সেটা দিয়ে হিসেব-নিকেশ করতে হবে। হয়তো প্রতি বিশটি প্রশ্নের মধ্যে তিন থেকে চারটি প্রশ্ন আসবে এ জাতীয়। এগুলো একটু বড় হয়, সময় লাগে করতে। তবে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। দু’তিনটি ফিগার থেকে হিসেব করে একটা রেজাল্ট বের করে নিয়ে আসা প্র্যাকটিস করলেই সহজ হয়ে যাবে।
অন স্ক্রিন ক্যালকুলেটর ব্যবহার করতে গেলে আসলে সময় বেশী খরচ হয়, তাই চেষ্টা করুন দরকার না হলে ব্যবহার না করতে। অনেক প্রশ্ন খুব সহজে দেখেই উত্তর বলে দিতে পারবেন। অনেক ক্ষেত্রে কোন ক্যালকুলেশন লাগবে না, লাগবে শুধু রিজনিং। যেখানে লাগবে না সেখানে কখনোই হিসেব করতে যাবেন না।
যখন অপশন বাছাই করবেন, তখন খেয়াল রাখবেন যে আপনার চিন্তা করা অপশন প্রশ্নের সমস্ত রেঞ্জ কাভার করছে না কিছু বাদ দিচ্ছে। প্রশ্ন ভালমতো পড়ে দেখবেন দুই পাশের কলামে কী লেখা আছে। সিলি মিসটেক এভয়েড করবেন। যখন নাম্বার প্লাগ ইন করবেন তখন দেখবেন কেমন নাম্বার প্লাগ ইন করলেন – রেঞ্জের কোন অংশ বাদ গেলো কিনা।
আপাতত এগুলোই হল কোয়ান্টের কলাকৌশল। বাকিগুলো প্র্যাকটিস করতে করতে নিজেই ধরে ফেলবেন। এ অংশে একটু মনোযোগ দিলে স্কোর ১৬০ এর ওপরে নেয়া কোন ব্যাপারই না।
জিআরই এবং টোফেল: হায়ারস্টাডির প্রস্তুতি হোক স্ট্র্যাটিজিক্যালি (পার্ট- ৩) পড়তে ক্লিক করুন এখানে
– ইসহাক খান, প্রাক্তন গ্রেক ফ্যাকাল্টি
নিচের লিংক থেকে ইসহাক খানের লেখা অন্যান্য আর্টিকেলগুলো পড়তে পারেন-
☑ স্টুডেন্টদের সাধারণ দুর্বলতা – পার্ট ১ – Vocabulary
☑ স্টুডেন্টদের সাধারণ দুর্বলতা – পার্ট ২ – Analytical Writing
☑ স্টুডেন্টদের সাধারণ দুর্বলতা – পার্ট ৩ – Reading Comprehension
☑ স্টুডেন্টদের সাধারণ দুর্বলতা – পার্ট ৪ – Speaking (TOEFL)
☑ Originality of writing: এসওপি, এলওআর, ইমেইলিং প্রফেসরস, সিভি ও রেজুমে (১ম খণ্ড)
☑ Originality of writing: এসওপি, এলওআর, ইমেইলিং প্রফেসরস, সিভি ও রেজুমে (২য় খণ্ড)
☑ Customized Routine: নিয়মিত ফলো করা (১ম খণ্ড)
☑ Customized Routine: নিয়মিত ফলো করা (২য় খণ্ড)
☑ আমার জন্য সঠিক রাস্তা কোনটা: বিদেশ, জিআরই, স্বদেশ, বিসিএস, চাকরি?
☑ রেকমেন্ডেশন বিড়ম্বনা!
☑ Research: রিসার্চ বা গবেষণা
☑ ইউএস অ্যাম্বেসির ভেতরের পরিবেশ এবং স্টেপগুলো
☑ ইংরেজিতে দক্ষতা এবং কিছু স্ট্র্যাটিজি
☑ Teaching: শেখা ও শেখানো, দেয়া ও নেয়া
☑ ইউএস ভিসা পাওয়া না পাওয়া এবং হায়ার স্টাডির কিছু পয়েন্ট
☑ জিআরই এবং টোফেল: হায়ারস্টাডির প্রস্তুতি হোক স্ট্র্যাটিজিক্যালি (পার্ট- ১)
☑ জিআরই এবং টোফেল: হায়ারস্টাডির প্রস্তুতি হোক স্ট্র্যাটিজিক্যালি (পার্ট- ২)
☑ জিআরই এবং টোফেল: হায়ারস্টাডির প্রস্তুতি হোক স্ট্র্যাটিজিক্যালি (পার্ট- ৩)
☑ জিআরই এবং টোফেল: হায়ারস্টাডির প্রস্তুতি হোক স্ট্র্যাটিজিক্যালি (পার্ট- ৪)
☑ আমার অভিজ্ঞতা: জিআরই প্রস্তুতি এবং পরীক্ষা
☑ আমার অভিজ্ঞতা: টোফেল প্রস্তুতি এবং পরীক্ষা
☑ আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা এবং দরকারি কৌশল