এ অংশে আপনাকে দুটো প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। ত্রিশ মিনিট ত্রিশ মিনিট করে এক ঘণ্টা। প্রথমটা ইস্যু, দ্বিতীয়টা আর্গুমেন্ট। হায়েস্ট স্কোর ৬.০।
অনেকে মাত্র দু-তিনটা স্যাম্পল প্রশ্ন পরীক্ষার আগে আগে সলভ করে (মানে চোখ বুলিয়ে) যায়, এ অংশকে গুরুত্ব দেয় না এবং এ অংশের স্কোর নিয়েও মাথা ঘামায় না। কিন্তু আপনার অ্যাপ্লিকেশন প্যাকেজের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল এটি, এবং আপনি যদি এ অংশে ভালো স্কোর করেন, তাহলে এটা যে-ই দেখবে সে-ই ইমপ্রেসড হবে। এ অংশে ভালো স্কোর মানে আপনি একটা কিছু নিয়ে বলতে বললে সেটা বিশ্লেষণ করতে পারেন এবং ব্যাখ্যা দিতে পারেন বা বুঝিয়ে বলতে পারেন। গ্র্যাজুয়েট লেভেলের পড়াশোনায় অনেক লেখালেখির কাজ থাকে, তাই এ অংশের স্কোরকে খুব গুরুত্ব দেয়া হয়।
সাধারণ একটা রেসপন্সে একটা Introductory paragraph, একটা Concluding paragraph আর তিনটা বা চারটা ব্যাখ্যামূলক প্যারাগ্রাফ লেখাটা স্ট্যান্ডার্ড, যেখানে আপনি ব্যাখ্যা করবেন আপনার অবস্থান অথবা লজিক।
Issue: এখানে কোন একটা স্টেটমেন্ট থাকে। আপনার কাজ হল ঐ বাক্যের বক্তব্যের পক্ষে, বিপক্ষে অথবা মাঝামাঝি অবস্থান নেয়া। অর্থাৎ, এখানে আপনার “মতামত”-ই চাওয়া হচ্ছে। এখানে নিজের যেটা লজিক্যাল মনে হয়, সে অবস্থান নিন, এবং সেটা কয়েকটা প্যারাগ্রাফে বুঝিয়ে বলুন। আপনি পক্ষে না বিপক্ষে তাতে কিছু যায় আসে না, আপনার কথা সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং লজিক্যাল হলেই হল।
ধরুন, প্রশ্ন এসেছে Democracy is a bliss. আপনি পক্ষে অবস্থান নিলেন। তাহলে আপনার কাজ হল কয়েকটা প্যারাগ্রাফে কয়েকটা পয়েন্টের আলোকে গণতন্ত্র যে একটি আশীর্বাদ, সেটা পাকাপোক্ত করা। এজন্য একেকটা প্যারাগ্রাফে একটা করে পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করুন। যেমন, কোন একটা প্যারাগ্রাফে বলুন অমুক দেশে ডেমোক্রেসির সফল প্রয়োগ দেখা গেছে। অন্য প্যারাগ্রাফে বলুন অমুক দেশে ডেমোক্রেসি না থাকাতে আজ লেজেগোবরে দশা। এভাবে শেষ করুন। শেষ প্যারাগ্রাফে গুছিয়ে সবগুলো পয়েন্টের একটা সামারি বলে দিন।
Argument: এখানে প্রশ্নে একটা প্যারাগ্রাফের মত থাকে। সেখানে একটা ঘটনা বা একটা সিচুয়েশন নিয়ে একজনের মতামত লেখা থাকে। আপনার কাজ হল ঐ মতামতের ভুলগুলো বের করা (নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে)। অর্থাৎ এখানে আপনি একজন মতামত দানকারী নন, আপনি বিচারক। সোজা কথায়, ভদ্রবেশী ছিদ্রান্বেষী।
ধরুন, প্রশ্নে এসেছে এমন একটা সিচুয়েশন যে, একটা রেস্টুরেন্টে নিউজ স্ট্যান্ড বসানোর পর সেখানে খাবারের বিক্রি অনেক বেড়ে গেছে। সেটা দেখে দ্বিতীয় কোন রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার সিদ্ধান্ত নিলেন যে, তিনিও নিউজ স্ট্যান্ড বসাবেন, আর নিজের রেস্টুরেন্টের বিক্রিও বাড়াবেন।
এখানে কী কী ভুল হিডেন অবস্থায় আছে? অনেক আছে (ইচ্ছে করেই এই ভুল বা Fallacy গুলো রাখা হয়, যাতে আপনি লিখতে পারেন!)। আপনি তিন থেকে চারটা সবচেয়ে শক্তিশালী ভুল খুঁজে বার করুন। তারপর একেকটা প্যারাগ্রাফে সেগুলো বুঝিয়ে বলুন। আপনার মূল পয়েন্ট হল এই যে, নিউজ স্ট্যান্ড বসালেই যে বিক্রি বাড়বে এমন কোন কথা নেই। যেমন একটা প্যারাগ্রাফে বলুন যে, প্রথম রেস্টুরেন্টে যে নিউজ স্ট্যান্ড বসানোর কারণে খাবারের বিক্রি বেড়েছে এমন কোন এক্সপ্লিসিট প্রমাণ নেই – হতে পারে তারা খাবারে কোন চেঞ্জ এনেছে তাই বিক্রি বেড়েছে। আরেকটা প্যারাগ্রাফে বলুন হয়তো মূল কারণ ছিল খাবারের দাম – নিউজ স্ট্যান্ড না বসালেও হয়তো বিক্রি বেড়ে যেত খাবারের দাম কমার কারণে। আরেকটা প্যারাগ্রাফে বলুন যে দ্বিতীয় রেস্টুরেন্টে নিউজ স্ট্যান্ড বসালে যে লোকজন আসা শুরু করবে তার কোন প্রমাণ নেই, হয়তো প্রথমটাতেই লোকজন যাবে, কারণ অলরেডি ওখানে নিউজস্ট্যান্ড একটা আছেই। সব শেষে বলুন যে এই এই কারণে দেখা যাচ্ছে যে অমুক ম্যানেজারের স্টেটমেন্ট ওপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে অসম্পূর্ণ অথবা ত্রুটিযুক্ত, পর্যাপ্ত প্রমাণ বা ডাটা নেই। এটাই হল আর্গুমেন্ট রাইটিং।
আপনি যদি ৬ এ ৪ তুলতে পারেন তাহলে ধরা যেতে পারে আপনার রাইটিং স্কিল এভারেজ ধরণের। তারও ওপরে যেতে পারলে আপনার রাইটিং বেশ ভালো।
কী পড়তে হবে? – www.ets.org ওয়েবসাইটে গিয়ে অ্যানালিটিক্যাল রাইটিংয়ের জন্য Issue Pool and Argument Pool পেজ দুটো খুঁজে বার করুন। এখানে লিস্ট করে দেয়া আছে কী কী টপিকের ওপর ইস্যু এবং আর্গুমেন্ট আসে। মোটামুটি ১২৫ টা করে ২৫০ টার মত টপিক পাবেন। পছন্দেরগুলো বেছে নিয়ে টাইমড কন্ডিশনে লেখা প্র্যাকটিস করুন। ইস্যুর জন্য পাবেন সায়েন্স, পলিটিক্স, আর্টস, সোসাইটি ইত্যাদি নানান টপিক; আর আর্গুমেন্টের জন্যও নানান সিচুয়েশন।
অ্যানালিটিক্যালে নম্বর নির্ভর করে কয়েকটা ফ্যাক্টরের ওপরঃ
১. Length – এর মানে এই নয় যে বেশী লিখলেই নম্বর পাবেন। আপনার রেসপন্স লম্বা অর্থাৎ আপনি অনেক লিখেছেন, এবং প্রাসঙ্গিক লিখেছেন। গোছানো একটা রেসপন্স ও ভালো স্কোরের জন্য সাধারণত অনেক কিছু লিখে বোঝাতে হয়। কাজেই দ্রুত লেখা প্র্যাকটিস করুন।
২. Development of the Examples – আপনি প্রাসঙ্গিক উদাহরণ দিতে পেরেছেন কিনা, ক’টা দিয়েছেন, সেগুলো কতটা ব্যাখ্যা করতে পেরেছেন ইত্যাদি। দশ-বারোটা উদাহরণ দিয়ে একেকটা দু’লাইনে বললে যে স্কোর আসবে, তার চেয়ে অনেক বেশী স্কোর আসবে যদি তিন-চারটা উদাহরণ দিয়ে বিশ্লেষণ করতে পারেন প্রতিটিকে।
৩. Organization – আপনি কতটা গুছিয়ে লিখেছেন। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একটা ধারা বজায় আছে কিনা, নাকি উল্টোপাল্টাভাবে যা মনে এসেছে তাই বলে গেছেন। একটা প্যারাগ্রাফ আরেকটার সাথে সম্পর্কিত, নাকি আসমান থেকে একটা নেমে এসেছে। বিশেষ করে যদি শুরু আর শেষের প্যারাগ্রাফটা গোছানো হয়, তাহলে খুব ভালো। এজন্য ভালো কৌশল হল Introduction and Conclusion এর প্যারাগ্রাফ দুটো আগে লিখে ফেলা, এবং যে পয়েন্ট গুলো লিখবেন সেগুলো সামারাইজ করা। তারপর মাঝখানে এক্সামপলের প্যারাগ্রাফগুলো লিখবেন।
৪. Vocabulary – এখন একটা বেশ ভুল কথা প্রচলিত হয়ে গেছে যে, জিআরই দিতে আর শব্দ জানা লাগে না বা ভোকাবুলারির কোন দরকার নেই। সত্যি বলতে, আপনার ভোকাবুলারি যত স্ট্রং হবে, তত শব্দ প্রয়োগ করতে পারবেন, আপনার লেখার গতি ততই বাড়বে। এবং আপনি কী ধরণের শব্দ প্রয়োগ করে আপনার রেসপন্স লিখছেন, তার ওপরও আপনার স্কোর নির্ভর করবে অনেকটাই। যত জটিল এবং কঠিন (প্রাসঙ্গিক অবশ্যই) শব্দ ব্যবহার করতে পারবেন, তত আপনার লেখা সমৃদ্ধ এবং উন্নতমানের হবে।
৫. Complexity – আপনার লেখার Sentence Structure কোন লেভেলের। অর্থাৎ আপনি কি বাচ্চাদের মতো তিন-চার শব্দেই একটা বাক্য শেষ করে ফেলেন, নাকি Complex and Compound Sentence হ্যান্ডেল করতে পারেন? যদি না পারেন, প্র্যাকটিস শুরু করুন। Simple Sentence গুলোকে এক করে বড় সেন্টেন্স বানান, Punctuation Marks গুলোর সবক’টির ব্যবহার শিখুন। প্র্যাকটিস করতে করতে হবে। আপনি যত জটিল সেন্টেন্স বানাতে পারবেন, তত আপনার স্কিল ভালো বলে ধরে নিতে হবে।
এছাড়া Grammatical Mistakes, Spelling Mistakes (Typos) এগুলো এভয়েড করতে হবে, তা বলাই বাহুল্য।
১. পড়ার অভ্যাস করুন। রিডিং ম্যাটেরিয়ালও বাছাই করে পড়ুন। ভালো এবং দ্রুত পড়তে পারলেই ভালো এবং দ্রুত লিখতে পারবেন। New York Times, Washington Post অথবা যেকোনো ভালো অনলাইন পত্রিকা থেকে একটা দুটো করে আর্টিকেল নিয়ম করে পড়ুন। মিডিয়া গসিপ টাইপের হালকা খবর নয়, বরং অ্যানালাইসিস থাকে, পড়তে বিরক্ত লাগে বা মাথা খাটাতে হয় এমন টপিক বাছাই করে পড়ুন। দ্রুত পড়ে বোঝার চেষ্টা করুন। পড়ার ক্ষেত্রে যখনই Comfort Zone থেকে বার হতে পারবেন, তখুনি আপনার স্কিল বাড়তে শুরু করবে।
২. যা-ই লিখুন না কেন, টাইম ধরে লিখুন। ত্রিশ মিনিটের ভেতর একটা টপিক বুঝিয়ে লেখা প্র্যাকটিস করুন। নিজের রেসপন্সের কোয়ালিটিও বোঝার চেষ্টা করুন। স্পেল চেকার অফ করে লিখুন। দরকার হলে একই টপিকে কয়েকবার লিখুন ভিন্ন ভিন্ন দিনে। আপনার চিন্তার গতি বাড়বে।
৩. লেখার আগে ব্রেইনস্টর্মিং আর শর্ট নোট নেয়া প্র্যাকটিস করুন। দু’তিন শব্দে একটা পয়েন্ট লিখুন কাগজে, তারপর সেগুলো বিশ্লেষণ করুন। শর্ট নোট নিতে গিয়ে যেন রচনা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন।
৪. লেখার ভাষার ক্ষেত্রে একটু Flexible থাকুন। সবদিকের অপশনই ভাবুন। খুব এক্সট্রিম কোন ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার না করাই ভালো, অর্থাৎ ফর্মালিটি বজায় রাখুন। ঝরঝরে ভাষায় লেখাই ভালো। যদি দেখেন জটিল করে লিখতে পারছেন না, তাহলে দরকার নেই, একটু সহজ করেই লিখুন। কিন্তু লেখাটা গোছানো যেন হয়। জটিলতার চেয়ে লেখার সাবলীলতা বেশী গুরুত্বপূর্ণ।
৫. আপনার রেসপন্সে কী কী ছেলেমানুষি বা অকারণ আবেগ আছে, কোথায় আরও একটু ম্যাচিউর হওয়া দরকার, কী করে লিখলে লেখাটা আরও লাগসই হত, এগুলো অনেক সময় নিজে বুঝতে পারবেন না। কাজেই ভালো লেখে এমন কাউকে দিয়ে পারলে দেখিয়ে নিন। অবশ্য একটু কসরত করলে নিজেই উন্নতি করতে পারবেন।
শুধু অ্যানালিটিক্যাল নিয়ে এত কথা বললাম তা অকারণে নয়। সেকশনটি আসলেই এত গুরুত্বপূর্ণ।
– ইসহাক খান, প্রাক্তন গ্রেক ফ্যাকাল্টি
নিচের লিংক থেকে ইসহাক খানের লেখা অন্যান্য আর্টিকেলগুলো পড়তে পারেন-
☑ স্টুডেন্টদের সাধারণ দুর্বলতা – পার্ট ১ – Vocabulary
☑ স্টুডেন্টদের সাধারণ দুর্বলতা – পার্ট ২ – Analytical Writing
☑ স্টুডেন্টদের সাধারণ দুর্বলতা – পার্ট ৩ – Reading Comprehension
☑ স্টুডেন্টদের সাধারণ দুর্বলতা – পার্ট ৪ – Speaking (TOEFL)
☑ Originality of writing: এসওপি, এলওআর, ইমেইলিং প্রফেসরস, সিভি ও রেজুমে (১ম খণ্ড)
☑ Originality of writing: এসওপি, এলওআর, ইমেইলিং প্রফেসরস, সিভি ও রেজুমে (২য় খণ্ড)
☑ Customized Routine: নিয়মিত ফলো করা (১ম খণ্ড)
☑ Customized Routine: নিয়মিত ফলো করা (২য় খণ্ড)
☑ আমার জন্য সঠিক রাস্তা কোনটা: বিদেশ, জিআরই, স্বদেশ, বিসিএস, চাকরি?
☑ রেকমেন্ডেশন বিড়ম্বনা!
☑ Research: রিসার্চ বা গবেষণা
☑ ইউএস অ্যাম্বেসির ভেতরের পরিবেশ এবং স্টেপগুলো
☑ ইংরেজিতে দক্ষতা এবং কিছু স্ট্র্যাটিজি
☑ Teaching: শেখা ও শেখানো, দেয়া ও নেয়া
☑ ইউএস ভিসা পাওয়া না পাওয়া এবং হায়ার স্টাডির কিছু পয়েন্ট
☑ জিআরই এবং টোফেল: হায়ারস্টাডির প্রস্তুতি হোক স্ট্র্যাটিজিক্যালি (পার্ট- ১)
☑ জিআরই এবং টোফেল: হায়ারস্টাডির প্রস্তুতি হোক স্ট্র্যাটিজিক্যালি (পার্ট- ২)
☑ জিআরই এবং টোফেল: হায়ারস্টাডির প্রস্তুতি হোক স্ট্র্যাটিজিক্যালি (পার্ট- ৩)
☑ জিআরই এবং টোফেল: হায়ারস্টাডির প্রস্তুতি হোক স্ট্র্যাটিজিক্যালি (পার্ট- ৪)
☑ আমার অভিজ্ঞতা: জিআরই প্রস্তুতি এবং পরীক্ষা
☑ আমার অভিজ্ঞতা: টোফেল প্রস্তুতি এবং পরীক্ষা
☑ আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা এবং দরকারি কৌশল